Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sudipa Chatterjee

শুধু স্বজনপোষণে কি উপরে ওঠা যায়, পরিশ্রমটাই আসল, বললেন সুদীপা

আসলে অনেক দিন পরে ‘রান্নাঘর’-এ ফিরলেন যে সুদীপা! ১৩ বছর জি বাংলার ‘রান্নাঘর’ সামলাতে সামলাতে আচমকা দু’বছর সেখানে ‘নেই’ সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। কারণ শুধুই আদিদেব, নাকি অন্য কিছু?

‘রান্নাঘর’ থেকে আচমকা সরে যাওয়ার কারণ জানালেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

‘রান্নাঘর’ থেকে আচমকা সরে যাওয়ার কারণ জানালেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ১৬:০৫
Share: Save:

‘রান্নাঘর’ থেকে সরে যেতে কেন খুব খারাপ লেগেছিল

সাদা খোলে চওড়া লাল পাড় শাড়ি, লাল ব্লাউজ। হাতখোঁপা, খোঁপায় জড়ানো টকটকে আধফোঁটা লাল গোলাপ, নয়তো ফুলের মালা। গা ভর্তি গয়না, সব কিছু আছে। শুধু মাঝ কপালে সিঁদুরের চারপাশে যেন হাল্কা ঘামের ছোঁয়া! আসলে অনেক দিন পরে ‘রান্নাঘর’-এ ফিরলেন যে সুদীপা! ১৩ বছর জি বাংলার ‘রান্নাঘর’ সামলাতে সামলাতে আচমকা দু’বছর সেখানে ‘নেই’ সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। কারণ শুধুই আদিদেব, নাকি অন্য কিছু? একদম ঘরোয়া ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে নিজেই সরলীকরণ করলেন, “আদি আমার বেশি বয়সের সন্তান তো! তাই ওকে আনার আগে কিছু প্ল্যান করতে হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ডাক্তারবাবু কী ‘করবেন’ আর ‘করবেন না’ ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেগুলো মানতে গিয়েই রান্নাঘরে যাওয়া বন্ধ ছিল।” জানালেন তাঁর কষ্ট হয়েছিল, কিছুতেই ছাড়তে পারছিলেন না কাজের জায়গা। পরিচালকও ছাড়তে চাইছিলেন না। এ দিকে ওজন বেড়ে চলেছিল। সামনে তখন জিম, বক্সিং, সুইমিং করে ১২ কেজি ঝরানোর চ্যালেঞ্জ! তা ছাড়া, সারা ক্ষণ দাঁড়িয়ে পাঁচটা এপিসোড এক দিনে শুট করা আর সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তাই প্রিয় ‘রান্নাঘর’ থেকে সরে এলেন সুদীপা।

‘রান্নাঘর’ সামলাতে এসে দেখি ‘দিদি নম্বর ১’-এ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তারকা রোজ ওভার বাউন্ডারি মারছেন

প্রশ্ন আসতেই সরাসরি উত্তর, “নিজেকে দর্শক আসনে কোনও দিন বসাতে পারিনি, বাড়িতে ‘রান্নাঘর’ চালালেই আমি দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে। শোয়ের সঞ্চালনায় নেই, নিতে পারতাম না। এই নিয়ে অপাদির সঙ্গে কখনও ঝগড়া হয়নি। আবার এটাও ঠিক, ভয় করেনি। কারণ, চ্যানেল বাইচান্স না ডাকলেও আরও অন্য কাজের অফার ছিল। আবার এটাও জানতাম, এক বার ট্র্যাক থেকে ছিটকে গেলে, নিয়মিত মুখ না দেখালে সবাই ভুলে যাবে একদিন। এই সময় অগ্নিদেবের একটি কথা ভীষণ মোটিভেট করেছিল, ‘‘যখন কোথাও কাজ শুরু করবে, জানবে সে দিনই কাজের শেষ দিনটাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ঈশ্বর। তুমি হয়তো জানো না...।’’ শুধু তো অপরাজিতা নয়, তাঁকে তো চ্যানেলের টিআরপির দৌড়ে টক্কর দিতে হয়েছে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে? প্রশ্ন শুনে দারুণ মজা পেয়ে ততটাই মজার উত্তর সুদীপার, “আমি যখন ‘রান্নাঘর’ সামলাতে এলাম তখন ব্যাক টু ব্যাক ‘দিদি নম্বর ১’-এ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তারকা রোজ ওভার বাউন্ডারি মারছেন। ফলে, প্রথমেই মনে হল রচনাদির থেকে আমাকে একদম আলাদা হতে হবে। আর রচনাদি যেটা করেন না, সেটা করতে হবে।” হোমওয়ার্ক সেরে মাঠে নেমেছিলেন সুদীপা।

মোটা চেহারা নিয়ে আজন্মের দুঃখ, সেই চেহারাই ইউএসপি হয়ে গেল!

কী সেটা? ‘‘রচনাদি শিফন, জর্জেট পরেন ছিপছিপে ফিগারে। বুফো হেয়ার স্টাইল, কাঁধ ছোয়া চুল, হেবি মেকআপ সহজেই ক্যারি করেন। যা আমায় মোটেই মানাবে না। অমন সাজলে লোকে সঙ বলবে! তাই সযত্নে হাতখোঁপা, তাকে ফুলে সাজানো, সাদা খোলে চওড়া লালপাড় শাড়ি, গয়না, বড় টিপে নিজেকে সাজালাম। আমি মোটা মানুষ। তাই শাড়ি হিসেবে বাছলাম মলমল, নরম তাঁত, জামদানি। কানে জ্যোৎস্না ঝুমকো, গোলাপপাশা, হাতে নয়নমণি বালা, আঙুলে গোলাপপাশা আংটি। সব মিলিয়ে পুরোদস্তুর রান্নাঘরের গিন্নি। আর আড্ডা আমি এমনিতেই ভালবাসি। ফলে, সেই টোনটাই রাখলাম। শুধু চিত্রনাট্যে লেখা সংলাপ সুন্দর করে বলতে থাকলাম। যে মোটা চেহারা নিয়ে আজন্মের দুঃখ, সেই চেহারাই ইউএসপি হয়ে গেল! গিন্নিবান্নি চেহারা না হলে রাঁধি বাড়ি, খেতে-খাওয়াতে ভালবাসি, লোকে বিশ্বাস করবে কেন? চেহারা, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সবটাই এমন মানিয়ে গেল যে, ক্লিক করে গেলাম”, ফাঁস করলেন সুদীপা।

অগ্নি এক দিন বলল, বাড়িতে যখন মুনদি আসেন বা পার্টিতে যান, সবার নজর কার দিকে থাকে? নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি বলল মুনমুন সেনের মতো সাজো

সবটাই নিজে নিজে? পরিচালক বর কিচ্ছু টিপস দেননি? ভীষণ মিষ্টি উত্তর দিলেন সুদীপা, “বললে বিশ্বাস করবেন না, আমি আগে রংচং মেখে সঙই সাজতাম। অগ্নি এক দিন বলল, বাড়িতে যখন মুনদি আসেন বা পার্টিতে যান, সবার নজর কার দিকে থাকে? বললাম, মুনমুন সেনের দিকে! অগ্নি বলল, কেন জানো? মুনদি কখনও একগাদা সাজেন না। হাল্কা লিপস্টিক, ছোট্ট টিপ, চোখে কাজল, কখনও টিপও নয়, জাস্ট এই সাজ, ব্যক্তিত্ব আর আদবকায়দাতেই মাতিয়ে দেন আটত্রিশ থেকে আটাত্তরকে। তুমিও তেমনই সাজো, যেটা তোমার সঙ্গে যায়।” পরিচালক বর রং বেছে দিয়েছিলেন বউকে। যেমন, সাদা রং। যা বউ বরের টিপসের সঙ্গে সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘মমদি-র (মমতাশংকর) সাজের প্যাটার্ন।”

প্রথম বিয়ে জীবনের ভুল

‘রান্নাঘর’-এর সুদীপা সকলের চেনা, কিন্তু সত্যিকারের সুদীপা? (খানিক থেমে) “প্রথম জীবনে ছোট্ট ভুল বা দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেছি। প্রথম বিয়ে, খুব সামান্য সময়ের। অগ্নিদেবকে কাজের সূত্রে অনেক দিন চিনতাম। একদিন বাড়িতে গেলাম। সবাই বাড়ি সাজানোর প্রশংসা করল। আমার ভাল লাগল পরিচালকের পোষ্যকে!” বললেন সুদীপা।
সে দিন অগ্নিদেব আর সুদীপার কী কথা হয়েছিল?
সুদীপা: অগ্নিদা, তোমার বাড়িতে গ্রেট ডেন আছে? অগ্নি: তোমার ভাল লাগে? সুদীপা: হ্যাঁ।
সেখান থেকেই শুরু। বাড়ির কর্তার হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন তিনি। আবেগ সুদীপার গলায়, “ওই বাড়িটা জাদু জানে। দেখতে দেখতে বশ করে নিল। আমি ধীরস্থির হলাম। গিন্নিবান্নি হলাম। আজ আমি এতটাই ঘরকুনো যে, যে দিন শুট বাতিল হয় সে দিন আমার মতো খুশি আর কেউ হয় না!”

“দেখলাম, আমি আকাশের জীবনে বড্ড দরকারি হয়ে পড়েছি।’’ নিজস্ব চিত্র।

শুরুতে অগ্নির বড় ছেলে আকাশ আমায় একটুও দেখতে পারত না

কিন্তু সুদীপা, আপনি অগ্নিদেবের ছেলে আকাশকে কী করে মানালেন? একটু থমকে যাওয়া সুদীপা ধীরে ধীরে এই দিকটাও তুলে ধরলেন, “একদম শুরুতে আকাশ আমায় একটুও দেখতে পারত না। ওকে কিছু মানুষ আমার সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছিলেন। ও তখন বোর্ডিংয়ে পড়ত। এক দিন আকাশকে ডেকে বললাম, আমি কোনও দিন তোমার মা হওয়ার চেষ্টা করব না। কারণ, মা-বাবা এক বারই হয়। কিন্তু আমরা তো একসঙ্গে হেসেখেলে থাকতেই পারি। তা হলে, একসঙ্গে বেড়াতে যেতে পারব। আমরা ভাল থাকলে তোমার বাবাও ভাল থাকবেন। জানোই তো, বাবা হার্টের পেশেন্ট। বাবার মুখ চেয়ে তুমি এটুকু করবে না? আমি চাপিয়ে দিচ্ছি না। ভেবে দেখো।”

আদিকে আনার প্ল্যানটাও আকাশের সঙ্গে প্রথম করেছি

সুদীপা জানালেন, আকাশ ফিল করেছিল। কিন্তু তার পরেও কথা বলত না ফোনে, টেক্সট করত। ওর দরকার মেটাতে। আজও মনে আছে সুদীপার, “দেখলাম, আমি আকাশের জীবনে বড্ড দরকারি হয়ে পড়েছি। যে দরকার আকাশ ওর মা-বাবাকে না জানিয়ে শুধুই আমাকে জানায়। সে দিন বুঝলাম, এ বার থেকে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির আমিও এক জন।’’ আকাশ-সুদীপার বন্ডিং সেই যে তৈরি হল, আর তাতে ভাটার টান ধরেনি। “আদিকে ক্যারি করার সময় অর্ধেক দিন ডাক্তারের কাছে আকাশ নিয়ে গিয়েছে। নাইট শো-তে সিনেমা দেখিয়েছে মন ভাল রাখার জন্য। এমনকি, আদিকে আনার প্ল্যানটাও ওর সঙ্গে প্রথম করেছি।”

‘‘আমি যখন কাজ করব তখন তো আমার চেনাজানাদেরই ডাকব! এটা নেপোটিজম হয়ে গেল?’’ নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তাতে বুম্বাদা, ঋতুদির সঙ্গে আমি ও আমার স্বামী অভিযুক্ত

সময় মতো চলতে পারাই আসল কথা। সে ঘর হোক আর ইন্ডাস্ট্রি। খানিক ইন্ডাস্ট্রির দিকে আলোকপাত করলেন সুদীপা, “সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরে কলকাতায় যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তাতে আমিও অংশ হয়ে গিয়েছি। বুম্বাদা, ঋতুদির সঙ্গে আমার স্বামীও অভিযুক্ত। আমি পরিচালককে বিয়ে করেছি। আকাশ পেশায় প্রযোজক। আমি একটা ছবি বানিয়েছিলাম ‘ববির বন্ধুরা’ বলে। তার জন্য শুনতে হয়েছে, পরিচালক বর। সেই সুবাদে মহেন্দ্র সোনির মতো প্রযোজক বন্ধু। অগ্নি ছবিটা পরিচালনা করে দিয়েছে। আমি ফোন করাতেই মণিদা টাকা ঢেলেছেন! শুনে অবাক হয়ে ভাবলাম, বিষয়টা এত সোজা? স্বজনপোষণ তোমায় ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। তোমার থাকা না থাকা তোমার পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করবে। আরে ভাই, ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হবে এটা পাবলিকও আশা করে! আর আমি যখন কাজ করব তখন তো আমার চেনাজানাদেরই ডাকব! এটা নেপোটিজম হয়ে গেল?’’

আদিকে একটা মুদিখানা খুলে দেব

স্বামী, আকাশ, আপনি গ্ল্যাম ওয়ার্ল্ডের। আদি কী হবে? উত্তরে খিলখিলিয়ে হাসি, “ওকে বলেছি, একটা মুদিখানা খুলে দেব। তুমি ওটাই ভাল করে চালিও।” তিন জনে এতটাই সিকিওর্ড লাইফ বানিয়ে দিয়েছেন যে আদির রোজগারেরই দরকার নেই? হাল্কা আহত কণ্ঠ, “আমরা তিন জনে এতটাই কষ্ট করেছি যে সেই কষ্ট আদি পাক, এটা চাই না। গাড়ি, বাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, বিদেশে ঘুরতে যাওয়া, শখ পূরণে গা ভর্তি সোনার গয়না, এমনি এমনি পাইনি। আদি আগে ভাল মানুষ হোক। তাতে ও মু্দিখানা চালালেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই! তবে বউ হিসেবে ওর শুভশ্রীকেই চাই। যতই অন্যদের ফটো দেখাই, আদি ঘুরে-ফিরে শুভশ্রীকেই বাছে!’’ প্রচণ্ড হাসলেন সুদীপা।

আদিকে মুদিখানার দোকান খুলে দেবেন, মজার সুরে বললেন সুদীপা। নিজস্ব চিত্র।

শুধুই অগ্নিদেবের বউ পরিচয় নিয়ে বাঁচতেও আপত্তি নেই

যদি ‘রান্নাঘর’ আর না ডাকত, যদি হাতে আর কোনও কাজের অফার না থাকত তা হলেও কি এ ভাবেই ঘর-বর নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে রাজি সুদীপা? খুব আন্তরিক গলায় সুদীপার স্বীকারোক্তি, ‘‘এক বার অর্পিতাদি, মানে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়েছিলাম, পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায় বলছি। অর্পিতাদি সে দিন মিষ্টি শাসন করেছিলেন, তোমার তো নিজের পরিচয় আছে! তা হলে এই পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করা কেন? সে দিন আমি বলেছিলাম, আমার সব কিছুতেই ভীষণ ভাবে অগ্নি জড়িয়ে। আর সেটা আমার কাছে গর্বের। আমার পাসপোর্ট রিনিউয়ের সময়েও বাবার নাম কেটে স্বামীর নাম লিখি। এতে কোনও লজ্জা নেই। কারণ, সব কিছু চলে গেলেও এই পরিচয় আমার থেকে কোনও দিন যাবে না। দরকারে সারা জীবন শুধুই অগ্নিদেবের বউ পরিচয় নিয়ে বাঁচতেও আপত্তি নেই আমার।’’

আরও পড়ুন: আমিরের ঘরেও করোনা হানা! কোভিড টেস্ট হবে মিস্টার পারফেকশনিস্টের মায়ের?

আরও পড়ুন: ‘সারা ঘরে এখনও সুশান্ত ছড়িয়ে’, একদিনের জন্যেও ‘পবিত্র রিস্তা’ ভুলতে পারেননি অঙ্কিতা!

অন্য বিষয়গুলি:

Sudipa Chatterjee Celebrity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy