কেরিয়ার থেকে বিয়ে— সব কিছু নিয়েই অকপট সুদীপ সরকার
ধারাবাহিক থেকে ওটিটি সিরিজ— নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। সোজাসুজি বলছেন, তাঁর জনসংযোগ বড্ড খারাপ। কিন্তু যে ভাবে যেটুকু করছেন, সেই অল্পেতেই খুশি সুদীপ সরকার। কেরিয়ার থেকে বিয়ে— সব কিছু নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট ‘মুক্তি’র রহমত।
প্রশ্ন: ‘আলতা ফড়িং’ থেকে ‘মুক্তি’। ধারাবাহিক, ওটিটি সব মিলিয়ে সুদীপ সরকারের এখন হাত ভর্তি কাজ?
হাত ভর্তি কি না জানি না। তবে হ্যাঁ, ‘আলতা ফড়িং’ ধারাবাহিকে একটা ভাল চরিত্রে আছি। ‘মুক্তি’তে আমি রহমত। ‘রুদ্রবীণার অভিশাপ’-এর প্রথম সিজনের পরে দ্বিতীয় সিজনে আমার চরিত্রটা বেশ বড়। ‘সোনা রোদের গান’ ধারাবাহিকে ক্যামিও চরিত্র করছি। এ ছাড়াও আগামী কিছু সিরিজের প্রস্তুতি চলছে। সময়টা আপাতত ভালই বেশ।
প্রশ্ন: এখন কি ওটিটিতেই বেশি কাজ করবেন?
হ্যাঁ, ধারাবাহিক করব তো বটেই। এখনও বাঙালি দর্শক ধারাবাহিক সেটাই বেশি দেখেন। তবে ইদানীং বেশি কাজ করছি ওটিটিতেই। নানা স্বাদের চরিত্র, নানা রকম গল্প। সেই ‘কর্কটক্রান্তি’ থেকে শুরু করে ‘নকল হিরে’ পর্যন্ত, এ বার ‘মুক্তি’, ‘রুদ্রবীণার অভিশাপ’- এখনও পর্যন্ত সিরিজে যত চরিত্র করেছি, সবক’টাতেই কাজ করে আনন্দ পেয়েছি।
প্রশ্ন: ভাল অভিনয় করেন। ধারাবাহিক বা ওটিটিতে আপনার কাজ প্রশংসা পাচ্ছে। তা-ও বড় পর্দায় আপনাকে সে ভাবে দেখা যায় না কেন?
এই উত্তরটা আসলে আমার কাছেও নেই। কয়েকটা ছবিতে কাজ করেছি। এক বড় প্রযোজনা সংস্থা এক বারই ডেকেছিল। কিন্তু ধারাবাহিকের কাজ থাকায় সময় দিতে পারিনি। তার পরে আর কেউ ডাকেনি। কারও কাছে গিয়ে কাজ চাইতে পারিও না আমি।
প্রশ্ন: বড় পর্দায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না?
করব না কেন? অভিনয় করতে এলে এই ইচ্ছেটা তো সবারই কমবেশি থাকে। কেউ না ডাকলে কী করব? বড় পর্দায় ছোট চরিত্র করতে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু চরিত্রটা গল্পে গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
প্রশ্ন: সাংবাদিকতার ছাত্র, অভিনয়ে এলেন কী ভাবে?
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পরে আমি থিয়েটার করতাম। ‘সমকাল’, ‘পাইকপাড়া নাট্যগোষ্ঠী’র মতো দলের সঙ্গে নাটক করতে করতে পরিচালক অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহকারী হলাম ‘এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকে। তার পরে ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয়। দ্বিতীয় ধারাবাহিক ‘চ্যাম্পিয়ন’-এ আমিই নায়ক। সঙ্গে ছিল ইন্দ্রাশিস, মিমি, রাজা। ‘চ্যাম্পিয়ন’ বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল সে সময়ে। ‘অগ্নিপরীক্ষা’য় ছোট্ট চরিত্রে, ‘তুমি আসবে বলে’র ভিলেন হিসেবেও দর্শক আমায় পছন্দ করেছিলেন।
প্রশ্ন: মিমি, ইন্দ্রাশিসরা আপনার সঙ্গেই শুরু করেছিলেন। আজকে ওঁরা তো বড় পর্দায় বড়সড় পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছেন। তুলনায় আপনি খানিকটা পিছিয়ে। খারাপ লাগে না?
খারাপ লাগার প্রশ্নই নেই। কারণ ওরা প্রত্যেকে নিজেদের ঘষেমেজে তৈরি করে এই জায়গায় পৌঁছেছে। নিজেদের পরিচিতি তৈরি করতে নানা ভাবে খেটেছে।
প্রশ্ন: আপনি সেটা করলেন না কেন?
আসলে জনসংযোগে আমি বরাবরই খুব কাঁচা। প্রযোজকদের দোরে দোরে ঘুরতে পারি না। স্টেজ শো-টাও তো সাধারণ দর্শকের সঙ্গে জনসংযোগের একটা বড় রাস্তা। এগুলো করতে না পারাটা আমার নিজেরই খামতি। তবে আমার চাহিদাটাও খুব কম। একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। অল্পেতেই সন্তুষ্ট। যে ভাবে টুকটুক করে এগোচ্ছি, তাতেই আমি খুশি। কাজ তো করছি যথেষ্টই। দর্শক আমায় পছন্দও করছেন।
প্রশ্ন: ছোট পর্দায় ইদানীং আপনাকে ভিলেনের চরিত্রেই দেখা যায় বেশি। ওটিটিতেও কিছু নেতিবাচক চরিত্র করেছেন। আপনাকে কি এই ধরনের চরিত্রেই ডাকা হয় বেশি?
তা কেন? ‘আলতা ফড়িং’-এ আমার চরিত্রটা ইতিবাচক। আগেও তেমন চরিত্র করেছি। ‘কুসুমদোলা’র টুবলুও ভাল ছেলেই ছিল। দর্শক তাকে যথেষ্ট পছন্দ করেছিলেন। ওটিটিতে ‘মুক্তি’র রহমত একেবারেই অহিংস, ইতিবাচক চরিত্র। ‘রুদ্রবীণার অভিশাপ’-এ আমার চরিত্র খারাপ মানুষ থেকে ক্রমশ ভালর পথে হেঁটেছে। তবে হ্যাঁ আমার যে বড় চরিত্রগুলো জনপ্রিয় হয়েছে, তার একটা বড় অংশই গল্পের ভিলেন। তাতে কাজের সুযোগও বেশি থাকে।
প্রশ্ন: গল্পের নায়ক হতে ইচ্ছে করে না?
আসলে এখনও নায়ক মানে সাধারণের হয়েও অসাধারণ এক জন মানুষ। সুন্দর, সৌম্যকান্তি চেহারা হবে, সবেতে পারদর্শী হবে, সব রকম যুদ্ধ একা হাতে জয় করার ক্ষমতা রাখবে— ওরকম লার্জার দ্যান লাইফ, ঈশ্বরের মতো কেউই নায়ক। এই ধারণাটার বাইরে দর্শকও এখনও বেরোতে পারেননি। তা হলে প্রযোজক-পরিচালকেরা বেরোবেন কী করে? একেবারে সাধারণ মানুষের গল্প বলা শুরু হলে হয়তো সাধারণ চেহারার অভিনেতাদেরও নায়ক চরিত্রে ভাবা হবে। আমাকে ভিলেন চরিত্রেই বেশি ডাকা হচ্ছে, তাই করছি।
প্রশ্ন: গল্পের ভিলেন হিসেবে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন না তো?
অনেকেই দেখেছি এই ধরনের আক্ষেপ করে— আমাকে ওমুক ধরনের চরিত্রেই শুধু ডাকা হচ্ছে কেন, আমি শুধু ভিলেনই হব কেন, ইত্যাদি। কিন্তু প্রযোজক-পরিচালক, চ্যানেল সবাই ভিলেন চরিত্রে আমাকেই ভাবছেন, তার মানে তো এই ধরনের চরিত্রগুলো আমি ভাল করব, সেই আত্মবিশ্বাস তাঁদের আছে। সেটা কি ভাল কথা নয়?
প্রশ্ন: বলিউডে যেতে ইচ্ছে করে না? সুযোগ এসেছে এর মধ্যে?
সুযোগ এসেছিল অল্পস্বল্প। সময়ের অভাবে করা হয়ে ওঠেনি। তবে বলিউডে এখন অনেক রকম কাজ হচ্ছে। আঞ্চলিক অভিনেতাদের কদরও বাড়ছে। তার জন্য আমিও নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করছি। হিন্দি বলতে পারি, তবে ভাষাটা ভাল ভাবে রপ্ত করছি। যাতে ভাল কাজের সুযোগ এলে ভাল ভাবে করতে পারি। আর বলিউডে ভাল কাজের সুযোগ এলে এখানকার প্রযোজক-পরিচালক বা চ্যানেল আমায় সানন্দেই ছুটি দেবে। যে টুকুই কাজ করেছি, প্রত্যেকের সঙ্গে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই ভালবাসাটাই আমার সম্বল।
প্রশ্ন: থিয়েটার করছেন এখনও সময় দিতে পারেন?
হ্যাঁ 'ফোর্থ বেল'-এ আছি। চেষ্টা করি দলে একটু হলেও যাতে সময় দিতে পারি। আসলে থিয়েটার করা এখনও অভিনয়কে সমৃদ্ধ করে। নিজেকে তৈরি করতেই তাই নাটক করাটা চালিয়ে যাই। একটা অডিও অ্যাপেও গল্প পড়ি নিজের ভয়েস মডিউলেশনটা ভাল ভাবে রপ্ত করে রাখার জন্য।
প্রশ্ন: আজকাল তো জনপ্রিয়তা বা সাফল্য মাপা হয় উইকিপিডিয়া পেজ দিয়ে। আপনার তো দেখছি সেটাও নেই। বানাননি?
করা হয়ে ওঠেনি। বাড়িতে থাকলে খালি ঘুম আর ঘুম! অনেকেই দেখেছি উইকিপিডিয়া পেজটা ভাল ভাবে বানায়, ইউটিউব চ্যানেল খোলে। আমি যে বড্ড কুঁড়ে!
প্রশ্ন: নতুন সিরিজের মুক্তি আর বিয়ে তো একই দিনে সেরে ফেললেন! কেমন লাগল?
হ্যাঁ ‘মুক্তি’র মুক্তির দিনেই মোক্ষলাভ হল আর কি! (হা হা হাসি)
প্রশ্ন: মাত্র পাঁচ মাসের প্রেমে বিয়ে করে ফেললেন?
হ্যাঁ, আসলে আমরা দু’জনেই দুটো সম্পর্ক ভেঙে টালমাটাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আলাপ তো বহু দিনের। ওই সময়েই বন্ধুত্বটা প্রেমে গড়িয়ে গেল। যখন বুঝলাম, দু’জনে একে অন্যের সঙ্গে একেবারে মানানসই, বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলতে আর দেরি করিনি। কোভিডের মধ্যে বিয়ে, তাই খুব অল্প ক’জনকে নিয়ে সইসাবুদটা সেরে ফেললাম।
প্রশ্ন: আপনি বলছেন, আপনি খুব কুঁড়ে। দু’জনেই তো একই পেশায় আছেন। রেষারেষি করে পিছিয়ে পড়বেন না তো?
(হা হা হাসি) অনিন্দিতাও আমার মতোই কুঁড়ে! সাধে কি আমাদের এত মিল? তবে আমার কাজ নিয়ে ওর আগ্রহ আমার চেয়ে বেশি। নিজের কাজ নিয়ে আমি ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পোস্ট না করলে ও-ই দায়িত্ব নিয়ে আমার মোবাইল থেকে করে দেয়!
প্রশ্ন: বিয়ের এক দিন পর থেকেই তো দু’জনে ফ্লোরে ফিরে গিয়েছেন। হানিমুনের কী হল?
হবে তো বটেই। কোভিড বলেই মুশকিল! ইচ্ছে আছে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পাহাড়ে ঘুরে আসব অল্প দিনের জন্য। তবে কাছাকাছি কোথাও। দু’জনের হাতেই এখন কাজের বড্ড চাপ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy