পাল্টে যাওয়া ছবির গল্পের ব্যাখ্যা দিলেন সুভাষ ঘাই
আগেও দুই ভাইয়ের কাহিনি ঘিরে ছবি হত বলিউডে। এখনও হয়। তিন দশকের হেরফেরে শুধু পাল্টে গিয়েছে দুই ভাই আর মায়ের সম্পর্কের সমীকরণ। কী করে ঘটল হিন্দি ছবির এই ভোলবদল? ব্যাখ্যা মিলল বলিউডের খ্যাতনামী পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের কাছে।
দুই ভাইয়ের কাহিনি নিয়েই সুভাষের ছবি ‘রাম-লখন’। ১৯৮৯ সালের অনিল কপূর অভিনীত এই জনপ্রিয় ছবির ৩৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিজের নতুন ছবি ’৩৬ ফার্মহাউস’-এর তুলনা টেনেছেন সুভাষ নিজেই। এখনকার ছবিতেও দুই ভাইয়েরই গল্প। শুধু তিন দশকে বদলে গিয়েছে দুই ভাই আর মায়ের গল্পের চরিত্র। আশির দশকের ‘রাম লখন’-এ দুই ভাই ঘটনাক্রমে ভিন্ন পথে হেঁটেও শেষমেশ একজোট হয় সম্পর্কের টানে। সেই সম্পর্কে সুতো হয়ে থাকেন মা। সদ্য ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘৩৬ ফার্মহাউস’-এ দুই উচ্চবিত্ত ভাই একে অন্যের উপরেই খুনের দায় চাপাতে মরিয়া। তার সাক্ষী থাকেন মা-ই।
‘দিওয়ার’, ‘রাম লখন’ কিংবা ‘করণ অর্জুন’। সত্তর, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে দুই ভাইয়ের গল্পের চেনা ছকেই অভ্যস্ত ছিল বলিউড। দুই ভাইয়ের এক জন দায়িত্বশীল, কর্তব্যনিষ্ঠ এবং সৎপথের পথিক। অন্য জন বরাবরই আমোদ-আহ্লাদে গা ভাসানো, কুপথের হাতছানিতে সাড়া দেওয়া। দুই ভাইয়ের সংঘাত বাধত, ফের তারা একজোট হত মায়ের টানে। তার পর একসঙ্গে দুষ্টের দমনের পালা।
অথচ হালফিলের বলিউড দেখছে দুই ভাইয়ের চিরকালের মতো ফাটল ধরা সম্পর্ক। যে সম্পর্ক তাদের মানসিকতা থেকে জীবনযাপন, সবেতেই আকাশপাতাল ফারাক করে দেয়। দুই ভাইয়ের দূরত্বও এতটাই যে, একে অন্যের বিপদ ডেকে আনতেও বাধে না কারওরই। এমনই এক কাহিনি উঠে এসেছে ’৩৬ ফার্ম হাউস’-এ। সুভাষের ব্যাখ্যা, গল্পের এই চরিত্র বদলের মূলে রয়েছে বদলে যাওয়া সমাজই। কারণ বিভিন্ন সময়ে সমাজেরই চলতি ধারণা, মানসিকতা, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এবং মনোভাবের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় ছবির কাহিনি।
বলিউডের ‘শো-ম্যান’ বলছেন, নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বলিউড যে সমাজের গল্প বলত, সেই সমাজে দুই ভাই দু’রকম ভাবনায় জীবন যাপন করলেও তাঁদের ভালবাসা, মা-বাবার জন্য কিছু করার তাগিদ অটুট থাকত। সেটাই উঠে আসত ছবির গল্পে। তিন দশক পরে ইদানীং দুই ভাইয়ের সম্পর্কে ভালবাসা থাকলেও তাঁরা থাকেন একে অন্যের থেকে ঢের দূরে, সামাজিক অবস্থান বা জীবনযাপনেও বিস্তর ফারাক। ফলে কোনও প্রয়োজনে টাকার প্রশ্ন উঠলে তাঁরা নিজেদের পরিবার বা ব্যবসা আলাদা রাখাই শ্রেয় মনে করেন। আর সমাজের এই পাল্টে যাওয়া চরিত্রই বলিউড ছবির গল্পকেও অন্য খাতে বইতে বাধ্য করেছে বলে মনে করছেন সুভাষ।
কয়েক দশকের বলিউডে একের পর এক হিট ছবি তাঁর ঝুলিতে। ‘খলনায়ক’, ‘পরদেশ’, ‘তাল’-এর মতো জনপ্রিয় ছবির পরিচালক বলছেন, “বড় পর্দা হোক বা ওটিটি, গল্পের ভিত্তি বরাবরই সাধারণ মানুষের জীবন। দেশ কতখানি বদলাচ্ছে, সমাজ কতটা পাল্টাচ্ছে, সম্পর্কের চরিত্রে কী ভাবে পরিবর্তন আসছে— সবেরই আয়না হয়ে ওঠে সিনেমা। গত তেত্রিশ বছরে জীবনযাপন থেকে মানসিকতা, বদল এসেছে সবেতেই। আর সে কারণেই তিন দশকে ছবির ভাইরাও বদলে যেতে বাধ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy