বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে শ্রীলেখার কথা।
সাল ২০০২। ছবির দুনিয়ায় তখনও আমি নতুন। হঠাৎ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ফোন। নিজেই জানালেন, ‘‘যৌন কর্মীদের নিয়ে একটি ছবি বানাব। ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’। তোমাকে এক জন যৌন কর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। তুমি করবে?’’ জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক নিজে যোগাযোগ করে অভিনয়ের জন্য ডাকছেন! সেই ডাক কী করে উপেক্ষা করি? খুশি মনেই রাজি হয়েছিলাম। সেই প্রথম ওঁর ছবিতে আমার কাজ।
ভীষণ অল্প কথার মানুষ ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। একমাত্র কাজ নিয়ে নায়িকা, অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। বাকি সময় নিজের মতো চুপচাপ থাকতেন। অনেক পরিচালক শ্যুটের আড্ডা দেন অভিনেতা, অভিনেত্রীদের সঙ্গে। বুদ্ধদেববাবু তেমন ছিলেন না। ফলে, ভয়ে ভয়ে একটু দূরত্ব বজায় রেখেই চলতাম ওঁর থেকে। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে ভীষণ ভাল ছিলেন। যৌন পল্লী কেমন? সেখানকার মেয়েদের আচার-আচরণই বা কেমন? কিছুই জানতাম না। আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন সোনাগাছিতে। যাতে ওঁদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারি। ওঁর হাত ধরেই এক অজানা জগৎ আমার সামনে খুলে গিয়েছিল।
কাজের বিষয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতেও ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। যেটা স্বাভাবিক সেটাই ক্যামেরাবন্দি করতে ভালবাসতেন। ভোরের প্রথম আলো ধরার জন্য রাত আড়াটের সময় কল টাইম দিতেন। সব গুছিয়ে, রূপসজ্জা শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যেত। ওই নরম আলোটাকে তিনি ধরতেন। আর ধরতেন বিকেলের কনে দেখা আলো বা গোধূলিকে। আরও একটা জিনিস পরিচালকের ভীষণ পছন্দ ছিল। পুরুলিয়ার প্রেক্ষাপট। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বহু ছবির পটভূমিকায় তাই পুরুলিয়া উঠে এসেছে।
‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’-এ কাজের পর কয়েক বছরের বিরতি। ২০০৮-এ পরিচালক আবার নিজেই যোগাযোগ করলেন তাঁর আগামী ছবি ‘কালপুরুষ’-এর জন্য। এই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী, রাহুল বোস, লাবণী সরকার অভিনয় করেছিলেন। যদিও বিশেষ কারণে আমার আর অভিনয় করে ওঠা হয়নি। আমার জায়গায় আসেন মুম্বইয়ের সমীরা রেড্ডি। আজীবন বাম দলের সমর্থক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নিজের মতো করে বেঁচেছেন। তাঁর ছবিতেও শিরদাঁড়া সোজা রেখে গল্প বলার ছাপ স্পষ্ট। আফসোস, মেরুদণ্ড সোজা রেখে প্রতিবাদ জানানোর মানুষ আস্তে আস্তে কমছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy