‘আমাকে রোগা বোলো না’— চন্দ্রবিন্দু শুনিয়েছিল বেশ ক’বছর আগে। চলতি হাওয়ায় এটাই নয়া ফ্যাশন ট্রেন্ড। ‘তশন’এর জিরো ফিগারের করিনা এখন অতীত। বরং বর্তমানের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’এর কার্ভি বেগম সাহেবাকেই মনে ধরেছে সকলের। ‘ডার্টি পিকচার’এর বিদ্যা হোন বা আইটেম ডান্সে সোনাক্ষী— কার্ভি ভোটব্যাঙ্কেরই পাল্লা ভারী। পর্দায় তাঁদের শরীরের গহন ভাঁজের বিলাসী ডাকে মজেছেন দর্শকরা। বরং ‘চন্দ্রবিন্দু’র ওই গানেরই এখন উলটপুরাণ। ‘যদি আমাকে কার্ভি বল, আমি বলব ঠিক বলেছ!’
টলিউডেও এখন কার্ভি মেজাজ। ‘‘আই লাভ মাই কার্ভস। আমার মনে হয় গায়ে গতরে মহিলাই ছেলেদের পছন্দ।’’ দুষ্টু হেসে জানালেন শ্রীলেখা মিত্র। সত্যিই কি তাই? ‘‘একদম।’’ নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন পায়েল। ‘‘আমার তো মনে হয় পুরুষরা চারপাশে যেটা দেখে সেটাই ফ্যানটাসাইজ করে। আর ভারতীয় মহিলাদের কাঠামোটাই তো কার্ভি।’’ তবে কার্ভি ফিগারে চর্বি নট অ্যালাউড। বডি টোনিংটা খুব জরুরি। পায়েলের সাফ কথা, ‘‘আমার তো কার্ভ দেখাতে ভালই লাগে। কারণ আমার টোনড বডি।’’
কিন্তু কার্ভি সোনাক্ষীকেই ক’দিন আগে টুইটারে ‘মোটি’ বলে কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল। তাহলে কার্ভিরা কি মোটা? কনফিউশনকে স্ট্রেট ব্যাটে ছক্কা হাঁকালেন পাওলি দাম। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘টাইটানিকের কেটকে মনে আছে? কী দারুণ কার্ভি ফিগার! ওকে কি মোটা বলবেন? চেহারার লাবণ্যটাই আসল।’’
দেখুন গ্যালারি, কার্ভ দিয়ে যায় চেনা…
হলিউডে নাই বা গেলেন। ঘরের পাশে ‘টলিউড’ই বা কম কীসে? বাঙালি পাড়ায় তো এখন সন্ধের আরতির শাঁখ বাজছে সিরিয়ালের ডাকনামে। আর সেখানে চুটিয়ে কাজ করছেন অপরাজিতা আঢ্য। নিজের চেহারা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন অপরাজিতা জানালেন, ‘‘আমি মোটা। তো কি? কার্ভটাও মেনটেন করি।’’ এমনকী চরিত্রের প্রয়োজনেও চেহারার সঙ্গে নো কমপ্রোমাইজের রুটিনে বিশ্বাসী তিনি। ‘‘ঋতুপর্ণ ঘোষ আমায় বলেছিলেন, ‘শুভ মহরত’য়ে তোকে এই চেহারায় নেব না। আমিও মুখের ওপর বলেছিলাম, নিও না। দিনের শেষে পারফরমেন্সটাই আসল। আমার তো কার্ভি ফিগারে কাজ পেতে কোনও অসুবিধে হয় না।’’ মুঠোফোনে আত্মবিশ্বাসী শোনাল অপরাজিতার গলা।
তবে সুন্দর কার্ভকে আরও প্রেজেন্টেবল করার জন্য সঠিক পোশাক চাই আপনার ওয়ার্ড্রোবে। কেমন ভাবে সাজবেন আপনি? সাজেশন বাতলে দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। ‘‘আমার তো মনে হয় শাড়ি ছাড়াও ম্যাক্সি ড্রেস, পালাজো, সুট-প্যান্ট, লং জ্যাকেট, লং স্কার্টও কার্ভি ফিগারে ভাল মানাবে।’’ সবটাই নির্ভর করছে যে কোনও পোশাক ক্যারি করার ক্ষেত্রে আপনি কতটা ভার্সেটাইল তার ওপর। তবে কার্ভের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে শরীরে যদি চর্বিও থাকে?— মুশকিল আসান করলেন চন্দ্রাণী। ‘‘সব রকম পোশাক পরুন। তবে স্লিভলেস বা হল্টারনেক বাদ দিয়ে। যে কোনও উজ্জ্বল রঙ ট্রাই করুন। মোটাদের কার্ভটা প্রেজেন্টেবল করার জন্য দারুণ টোটকা একরঙা জামা। আপনাকে কিছুটা রোগা দেখাবেই।’’
পর্দার এফেক্ট ঝড় তুলেছে ডেলি রুটিনেও।
যাদবপুরের ফার্স্ট ইয়ারের সোমদত্তাকে তো বন্ধুরা ‘ঘোঁতন’ বলেই ডাকে! সৌজন্যে ওর ৭৫ কেজি ওজন! ‘‘ছোট থেকে মা বলত দড়ির মতো চেহারা হলে কেউ বিয়ে করবে না। তাই খাইয়ে দাইয়ে এই হয়েছে। এখন তো পছন্দমতো ড্রেস পরতে পারি না। আই ওয়ান্ট প্রপার কার্ভস। তাই রেগুলার ওয়ার্কআউট করছি।’’
গিরীশ পার্কের রোগাটে গৃহবধূ অনন্যা আবার জিরো থেকে কার্ভি হওয়ার আশায় জিমে সময় দিচ্ছেন। ‘‘জিরো ফিগার আমায় করতে হয়নি। আমি এমনিতেই খুব রোগা। শ্বশুরবাড়ির সবাই বলে লালিত্য নেই। আর আমারও মনে হয় শাড়ি পরলে তেমন দেখতে ভাল লাগে না। তাই আমিও একটু কার্ভি হওয়ার চেষ্টা করছি।’’ সিল্ক স্মিতা হোন বা রেখা, সোনাক্ষী হোন বা দীপিকা— ফিল্মি দুনিয়ায় বরাবরই কার্ভ দেখানো হয়েছে পর্দা জুড়ে। সেই কার্ভই এখন বাস্তবের নারীদের কাছে প্রিয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy