প্রয়াত বিশিষ্ট সরোদশিল্পী পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
বুদ্ধকাকার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ৩৭-৩৮ বছরের। ছোট থেকেই ওঁর বাজনা শুনছি। উনি ছিলেন শাজাহানপুর ঘরানার। আমাদের ঘরানা না হলেও অন্যান্য ঘরানা সম্পর্কেও তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ছিল।
সব থেকে বেশি ভাল লাগত ওঁর ইন্টেলেক্ট। বাজনার সঙ্গে ওঁর ইন্টেলেক্ট মিলে যেত। পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্রের ছাত্র ছিলেন উনি।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ম্যাট্রিকুলেশনে সেকেন্ড হয়েছিলেন। এর পর শিবপুর বিই কলেজ। সেখানথেকে গোল্ড মেডেলিস্ট মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। দীর্ঘদিন সিইএসসি-তেও কাজ করেছেন। নিজস্ব মেধা-বুদ্ধি-গুণে তিনি একেবারে অনন্য ছিলেন। আর সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে অগাধ জ্ঞান।
আরও পড়ুন, সরোদশিল্পী পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রয়াত
অনেকগুলি বন্দিশ তৈরি করেছিলেন। বুদ্ধকাকা রবীন্দ্রনাথের গান থেকেও বেশ কয়েকটি বন্দিশ তৈরি করেছিলেন। তাঁর কাজের পরিধি ছিল বিপুল। লেখার হাতও ছিল রসবোধে পূর্ণ। তাঁর ‘বামুনের চন্দ্রস্পর্শাভিলাস’পড়লেই সেটা বোঝা যায়। একইসঙ্গে ওঁর লেকচার ডেমনস্ট্রেশন ছিল শোনার মতো। যেমন, এক বার সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে (এসআরএ) আমার গুরু মাইহার ঘরানার আলি আকবর খাঁ সাহেবের উপর তাঁর লেকচার ডেমনস্ট্রেশন শুনেছিলাম। এত আর্টিকুলেট যে ভাবা যায় না। বার বার বলতেন, ‘‘দেখো বাবা, তোমরা নিজেদের ঘরটাকে বাঁচিয়ে রাখো।’’
মনে আছে, আমার ছেলে হওয়ার পরে উনি বলেছিলেন, ‘‘বাবা, নখটা দেখ তো। শক্ত তো?’’আমার ছেলের বাজনা শুনে ওকে আশীর্বাদও করেছিলেন। বহু জায়গায় বুদ্ধকাকার শেখানো গত্ বাজিয়েছি। তাঁর কাছে অনেক সময় ঝালিয়েও নিয়েছি। আমার আর এক গুরু ওস্তাদ বাহাদুর খাঁ সাহেবের বন্ধু ছিলেন। ওস্তাদ আলি আকর খাঁ সাহেব সম্পর্কেও অগাধ শ্রদ্ধা ছিল।
বুদ্ধকাকা ২০১১ সালে ‘পদ্মশ্রী’প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ২০১২ সালে তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তাঁকে বঙ্গবিভূষণ দিয়েছিল। তিনি রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমির সভাপতি ছিলেন। এসআরএ-র সিনিয়র গুরু ছিলেন।
আরও পড়ুন, পদ্মাবত নিয়ে খুশি নন টুইঙ্কল!
আসলে, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের একটা আভিজাত্য ছিল। তার ঘরানার ঐতিহ্য নিশ্চয়ই তাঁর ছাত্রদের মধ্য দিয়ে বহমান থাকবে। কিন্তু যে ‘অরা’তাঁর ছিল, সেটাও চলে গেল।
খুব মনে পড়ছে গিরিজা দেবীর মৃত্যুর দিনটা। সেদিন বুদ্ধকাকার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওঁর দৃষ্টিটা মনে পড়ছে। বলেছিল, ‘‘আমার বয়সের কাছাকাছি একজন চলে গেল। আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছ।’’
খুব কষ্ট হচ্ছে সেই দিনটা এত তাড়াতাড়ি চলে এল ভেবে। আবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy