Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Protest

‘অন্য রাজ্যে দোষীরা শাস্তি পায়, কিন্তু কলকাতা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে’

কলকাতা তাঁর প্রতিভার দাম দেয়নি। তবে দক্ষিণ ভারতে তিনি সমাদৃত। পৃথা সেনগুপ্ত নাম বদলে মোক্ষ। শিকড়ের টানে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নিজের শহরে।

Image Of Moksha

প্রতিবাদে পথে দক্ষিণী অভিনেত্রী মোক্ষ। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।

মোক্ষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ১৫:০২
Share: Save:

‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার...!’ আমার নিজভূমি শহর কলকাতাকে দেখতে দেখতে এই কথাটাই মনে এল।

ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, শিক্ষিকা ছিলাম। সে সব সরিয়ে বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখি। বাংলা ছবি, সিরিজ়ে অভিনয় করেছি। কিন্তু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঠিকঠাক সুযোগ দিচ্ছিল না। কেউ বলে, রাজনীতি করতে হবে। কেউ বলে, নৈশবিহার করতে হবে। কারও দাবি, চুক্তিতে থাকতে হবে। তার পরেও কি ভাল কাজ পাব? কোনও স্থিরতা নেই। আমি তাই নিজেকে প্রমাণ করতে পাড়ি দিলাম দক্ষিণ ভারতে। পৃথা সেনগুপ্ত নাম বদলে মোক্ষ নামে পরিচয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন, মোক্ষলাভ হল? এর আগে মনে হত, হ্যাঁ হয়েছে। পুরনো সব কিছু মুছে দক্ষিণ ভারতে যেন নবজন্ম আমার। ওখানে আমি মালয়ালম, তামিল, তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে সমাদৃত। মোক্ষলাভের থেকে কম কী! রবিবার, কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে যা অভিজ্ঞতা হল তার পর মনে হচ্ছে, এ কলকাতাকে তো চিনি না! আমার এখনও বুঝি অনেক কিছু দেখা বাকি।

নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আরজি কর-কাণ্ড আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শহর উত্তাল প্রতিবাদী মিছিলে। আর আমি দক্ষিণ ভারতে বসে থাকব! আমার শহরে আমারই বয়সি মেয়েটি নারকীয় অন্যায়ের শিকার। কাজ ফেলে দৌড়ে এলাম। এসে স্তম্ভিত। যে প্রতিবাদী মিছিলেই যোগ দিতে যাই, সেখানেই দেখি কোনও না কোনও রাজনৈতিক রং! কোথাও শাসকদলের, কোথাও বাম বা গেরুয়া শিবিরের মিছিল। আমি অবশ্যই রাজনীতিমনস্ক। কিন্তু কোনও দলের প্রতিনিধি তো নই! আমি আমার মতো করে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে চাই। কারণ, এটাই প্রতিবাদ জানানোর সময়। শেষে শ্রীলেখা মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যাব। দিদি আসতে পারলেন না। আমি গিয়েছিলাম, আর কিছু বন্ধু। যাতে কোনও দলের না ভাবে, তাই সাদা পোশাক পরে, সাদা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছি। একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে বক্তব্য রাখতে যাব, রে রে করে পুলিশ তেড়ে এল! নিমেষে জনতা ছত্রভঙ্গ। বয়স্কেরা দৌড়তে গিয়ে পড়ে যাচ্ছেন। আমার কিছু বন্ধুকে পুলিশের ভ্যানে তুলে নিল। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা। তখন আর রাগ ধরে রাখতে পারিনি। দূরে দাঁড়িয়ে কল্যাণ চৌবে। ওঁকে লক্ষ্য করেই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম, “যেখানেই যাচ্ছি পুলিশের তাড়া। প্রতিবাদ জানাতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তো কোনও দোষ করিনি স্যর! তা হলে কেন পুলিশ মারমুখী? আমরা কোথায় যাব?” কোনও প্রতিক্রিয়া নেই তাঁর, হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। বুঝতেই পারলাম না, শান্তিপূর্ণ মিছিলে সমস্যা কোথায়!

সরাসরি সম্প্রচারে মা-বাবাও আমার বক্তব্য শুনেছেন। শুনেই ফোন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি যেন ওই জায়গা ছেড়ে চলে আসি। কেন এত কথা বলছি আমি! বাড়ি ফিরে শান্ত হওয়ার পরে সত্যিই ভয় হয়েছে। বাড়ি ব্যারাকপুরে। খাস শাসকদলের এলাকা। আমার রাগের আঁচ যদি মা-বাবার গায়ে লাগে? ওঁদের এখানে রেখেই তো কাজের জন্য ফের দক্ষিণ ভারতে পাড়ি দিতে হবে। ওঁদের কিছু হবে না তো? পরক্ষণেই মনে হয়েছে, ভয়ে ভয়ে আর কত দিন? ভয় সরিয়েই তো শহর থেকে গ্রাম— সব স্তরের মেয়েরা পথে নেমেছেন। যা হওয়ার হবে, মোকাবিলা করে নেব। মিথ্যে বলব না। এই প্রতিবাদ দেখে ভালও লাগছে। যেন স্বাধীনতার আগের বাংলাকে দেখতে পাচ্ছি। সেই সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তো এ ভাবেই বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের জন্য আমরা স্বাধীন।

জানি না, নির্যাতিতা ন্যায় পাবেন কি না। জানি না, পরিস্থিতি বদলাবে কি না। এ-ও জানি না, যুগ যুগ ধরে মেয়েদের উপরে ঘটে চলা অত্যাচার বন্ধ হবে কি না। তবে এত দিন গর্ব করে অনেকে বলতেন, অন্যান্য রাজ্যের থেকে পশ্চিমবঙ্গ অনেক ভাল, নিরাপদ। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে, তাঁদের কথার সঙ্গে আজ আর সহমত নই। অন্য রাজ্যে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, সেখানে দোষ করলে দোষীর শাস্তি হয়। আমার রাজ্য তো পরস্পরকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত! সব দল একজোট হয়ে কোথায় প্রতিবাদ জানাবে, আইন বদলে দেবে, তা নয়। তার পরিবর্তে কে, কবে দোষ করেছিল— তার হিসাব কষতেই ব্যস্ত। আর সেই ফাঁক গলে অপরাধী বা অপরাধীরা বুক চিতিয়ে ঘুরছে। কলকাতা তো এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy