রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এবং সৌরভ দাস।
প্রশ্ন: করোনা আবহে বাজিমাত! ‘মন্টু পাইলট ২’-এ আপনার বিপরীতে রাফিয়াদ রশিদ মিথিলা?
সৌরভ: (হেসে ফেলে) হ্যাঁ, ব্যাপারটা হয়ে গেল। পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য দ্বিতীয় সিজন আনছেন। বিপরীতে মিথিলাকে বেছেছেন। শ্যুট শুরুর কথা ছিল ২৬ ডিসেম্বর থেকে। মিথিলা, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরপর করোনা-আক্রান্ত। ফলে, সব পিছিয়ে শুরু হবে ১২ জানুয়ারি থেকে। মিথিলা শ্যুটে যোগ দেবেন ১৪ জানুয়ারি থেকে।
প্রশ্ন: আপনি আনন্দে মেঘমুলুকে?
সৌরভ: আনন্দ হচ্ছে কই? আমি করোনা-ভয়ে আধখানা! র্যাপিড টেস্ট করাচ্ছি। নিজেকে নিজে পরীক্ষা করার পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছি। সারা ক্ষণ মনে হচ্ছে, এই বুঝি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ভীষণ সাবধানতার মধ্যে রয়েছি। বাঁচোয়া, এখনও কিছু হয়নি। তবে হ্যাঁ, অভিনেতা মিথিলার আমি বড় ভক্ত। বাংলাদেশে অনেক কাজ করেছেন। ভাল অভিনেতা বিপরীতে থাকলে নিজের কাজটাও আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়। ভাল অভিনয়ের ইচ্ছেও জাগে। আর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী আমার বিপরীতে অভিনয় করবেন, তার জৌলুসই আলাদা (হাসি)। তবে, এখনও আমরা একে অন্যের মুখোমুখি হইনি!
প্রশ্ন: টেনশনে আছেন?
সৌরভ: তা একটু হচ্ছে! সাধারণত, টলিউডে আমারা একে অন্যকে কমবেশি চিনি। কে, কেমন অভিনয় করেন, সেটাও জানি। এই প্রথম এমন এক জনের সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি যাঁকে চিনি পর্যন্ত না! ফলে, আগে বন্ধুত্ব তৈরি করতে হবে। তার পরে অভিনয়। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু একটা ব্যাপার আছে। চেনাদের সঙ্গে কাজের মজা এক রকম। এক দম অচেনার সঙ্গে কাজের আলাদা অনুভূতি। এক বার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে কিন্তু নজর কাড়ার মতো রসায়ন তৈরি হবে। তা ছাড়া, মিথিলা নিশ্চয়ই এত দিনে ‘মন্টু পাইলট’ দেখে ফেলেছেন। আমিও ওঁর কাজ দেখেছি। তাই চিত্রনাট্য বুঝে কাজ করতে আশা করি অসুবিধে হবে না।
প্রশ্ন: পুরো দমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
সৌরভ: আমি এর আগে ‘মন্টু’ হব বলে সাত দিন নিজের সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটিয়েছি। নিজেকে বন্দি করেছিলাম। এ বার করোনার দৌলতে আলাদা নিভৃতবাসের প্রয়োজন পড়ছে না। আগের সিজনটা দু’বার দেখেছি। ১০ জানুয়ারি আবারও দেখব। আড়াই বছর পরে পুরনো চরিত্রে ফিরে যাচ্ছি। যা যা বৈশিষ্ট্য ছিল সে গুলো আবার ফিরিয়ে আনতে হবে অভিনয়ে। আর একটা গোপন কথা জানাই, আমি যখন যে চরিত্রে অভিনয় করি তার আবহ হাল্কা করে নেপথ্য বাজে। মানে, শীর্ষ সঙ্গীত শুনতে শুনতে অভিনয় করি। এতে মনঃসংযোগ বেশি হয়। এটাও মিথিলা জানেন না। আশা করি, মানিয়ে নিতে পারবেন।
প্রশ্ন: মিথিলার চেহারা শান্ত, স্নিগ্ধ। যাঁর জন্য ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ মনে হয়, ‘মন্টু পাইলট’-এ এই ‘লুক’ মানাবে?
সৌরভ: ‘মন্টু পাইলট’-এর আগে এই সৌরভ দাসও কিন্তু কেবলই কৌতুকাভিনেতা ছিলেন। দেবালয় নতুন সৌরভকে আবিষ্কার করেছেন। এবং সবাই তখন ভেবেছিলেন, আমায় দিয়ে এত ধূসর চরিত্র হবে না। আমিও তাই-ই ভেবেছিলাম। ‘মন্টু পাইলট’ করার পর থেকে ধূসর চরিত্রের প্রেমে এতটাই মশগুল যে অন্য চরিত্র করতে আর ইচ্ছে করে না! মনে হয়, মিথিলার ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, উনি যেটা নন সেটাই এই সিরিজ দেখাবে। আর মিথিলার মতো অভিনেতা সে সব খুব ভালই ফোটাতে পারবেন।
প্রশ্ন: বিপরীতে সৃজিত-ঘরনি, সিরিজ জুড়ে সাহসী দৃশ্য, শোলাঙ্কি রায়ের বেলায় যত অনায়াস ছিলেন এ বারেও ততটাই হতে পারবেন?
সৌরভ: চিত্রনাট্য এখনও পুরোটা পড়া হয়নি। তাই জানি না, কতটা সাহসী বা ঘনিষ্ঠ দৃশ্য আছে। তবে আমার বিপরীতে এক টুকরো কাঠকে দিলেও আমি ঠিক মতো আমার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারব। এই ভরসা নিজের উপরে আছে। এর আগে বরখা সেনগুপ্তের সঙ্গে ‘কামিনী’তে কাজ করেছিলাম। ওঁর সঙ্গেও আগে আলাপ ছিল না। পরে এক সাক্ষাৎকারে বরখা বলেছিলেন, সৌরভ সাহায্য না করলে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে ওই ভাবে প্রাণবন্ত হতে পারতাম না। ফলে, এটাও সেই রকমই হয়তো কিছু হতে চলেছে। আর আমরা অভিনেতারা এই ধরনের চ্যালেঞ্জের অপেক্ষাতেই থাকি।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রেমের দৃশ্যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় দেওয়াল তুলবেন না তো?
সৌরভ: (হা হা হাসি) কে জানে! সৃজিতদা হয়তো বলে উঠবেন, ‘বাবু, বেশি না!’ পুরোটাই মজা করে বললাম। উনি নিজে পরিচালক। ফলে, চরিত্রের খাতিরে অভিনেতাদের কতটা, কী করতে হয় ওঁর থেকে ভাল আর কে বুঝবেন? সৃজিতদা এর আগে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। বলেওছেন, আমার কাজ নাকি দেখেছেন। সত্যি কিনা কে জানে! তবে এ বার মিথিলার খাতিরে ‘মন্টু পাইলট’ দেখবেন, এটা নিশ্চিত।
প্রশ্ন: এই সুযোগে ওঁর বাড়িতে আপনার অবারিত দ্বার...
সৌরভ: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের থেকে ডাক পেয়েছিলাম ‘গুমনামী’র সময়ে। তারিখ নিয়ে সমস্যা হওয়ায় কাজ করতে পারিনি। পরিচালক তখন মুখে বলেছিলেন বটে, একটুও আমার উপরে রাগ করেননি। তবে তার পর থেকে আর আমায় ডাকেনওনি। এ বার দরজা খোলার অপেক্ষাতেই আর থাকব না। সোজা ভেঙে ঢুকে যাব।
প্রশ্ন: শোলাঙ্কিকে মিস করবেন না?
সৌরভ: খুব মিস করব। শ্যুট যে দিন শুরু হবে সে দিন ওকে মোবাইলে বার্তা পাঠাব, ‘তোকে খুব মিস করছি’। মন্টুর ‘ভ্রমর’ শোলাঙ্কি ছাড়া আর কেউ হতে পারবেন না। পাশাপাশি আরও একটা কথা বলি। টলি পাড়ায় ভুল খবর ছড়িয়েছে, শোলাঙ্কির জায়গায় মিথিলা আসছেন। একেবারেই তা নয়। মিথিলার জন্য সম্পূর্ণ নতুন চরিত্র তৈরি করেছেন দেবালয়। নতুন সিজনের গল্পও অন্য রকম।
প্রশ্ন: আপনাকে আর আপনার বোনকে জড়িয়ে নোংরামির প্রায় এক বছর, রাজনীতির কী হবে?
সৌরভ: আগের পুরভোটে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রচারে বেরিয়েছিলাম। সায়নী ঘোষের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। যোগাযোগ আছে সবার সঙ্গে। পাশে আছি। আস্তে আস্তে কাজেও যুক্ত হব।
প্রশ্ন: অভিমান ভাঙল?
সৌরভ: অভিমান ছিল না তো! যে নোংরামি হয়েছিল তার জন্য পরিবার এবং আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরিবারের মুখ চেয়েই রাজনীতি থেকে সাময়িক সরে গিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েওছিলাম সে কথা। বলেছিলাম, বাড়ি থেকেই তো জনসেবার শুরু। বাড়িই যদি সামলাতে না পারলাম তো রাজ্যবাসীদের কী সামলাব! ‘দিদি’ আমার অবস্থা বুঝেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘তোর যখন ইচ্ছে আসবি। কাজ করবি। থাকবি। অভিনয়ের সময়ে সেটাও মন দিয়ে করবি।’’
প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বিধানসভা নির্বাচনের পরে তারকাদের ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটছে?
সৌরভ: মায়ের সঙ্গে ঝগড়া, দূরত্ব কার না তৈরি হয়? আমিও নাটক করব বলে ১৭ বছর বয়সে টানা ছ’মাস বাড়ির বাইরে থেকেছি। মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে। অনেক সময় মহড়ার পর সেখানেই শুয়ে থাকতাম। এক দিন মায়ের জন্য খুব মনখারাপ। পরের দিনেই বাড়ি চলে এলাম। ভালবাসা থাকলেই এটা হয়। তারকাদের প্রত্যাবর্তন সেই একই ঘটনা।
প্রশ্ন: পর্দায় সৌরভের বিপরীতে মিথিলা, বাস্তবে কে? অনিন্দিতা বসু না মধুমিতা সরকার?
সৌরভ: মধুমিতা আমার খুবই ভাল বন্ধু। খুব বাজে রটনা রটেছিল ওকে নিয়ে। হাতেনাতে কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। গুঞ্জনও হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: কলকাতায় কেনা নতুন বাড়ি ‘প্রথম অধ্যায়’-এর কর্ত্রী তা হলে অনিন্দিতাই?
সৌরভ: আমার বাড়ি। অনিন্দিতার পছন্দে নামকরণ। সেই বাড়ির গৃহিণী অনিন্দিতা ছাড়া আর কে হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy