কাশ্মীর, বারাণসী, রাজস্থান, উটি, গোয়া বা হতে পারে সেটা আমাদের অতি চেনা নর্থ বেঙ্গল... জায়গাগুলোর নাম শুনলেই চোখের সামনে সিনেমার একের পর এক রঙিন পাতা উল্টে যায়। কাশ্মীর বললেই ‘কাশ্মীর কী কলি’ রাজ কপূরের ‘হিনা’, ‘দিল সে’, ‘মিশন কাশ্মীর’... কত যে ছবির দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে। আবার বারাণসীর মতো ফোটোজেনিক জায়গা বোধহয় কমই আছে। ঘাট, পুরনো হাভেলি, বিখ্যাত অলিগলি... বারাণসীর চার্ম কোনও দিন পুরনো হওয়ার নয়। ইদানীং আবার পরিচালকদের খুবই পছন্দের লোকেশন রাজস্থান। চলুন, ঘুরে দেখা যাক জায়গাগুলো।
মেবার... জয়সলমের... থর...সোনার কেল্লা... ছাত্রদশায় পড়া ইতিহাস ওই একটা জায়গার নামেই বুনত স্বপ্নিল ফ্যান্টাসি। পরিচালকদেরও এখন এক নম্বর পছন্দের জায়গা রাজস্থান। এক মাস আগেই মলিন জামা, ছেঁড়া গামছা গায়ে হৃতিক রোশনকে দেখা গিয়েছিল জয়পুরের রাস্তায়, পাঁপড় বিক্রি করতে! বিকাশ বহেলের ছবি ‘সুপার থার্টি’র কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু ছবির সেট পটনার পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছে জয়পুরের সম্ভরে। ছবির আর্ট ডিরেক্টর অমিত রায় বললেন, ‘‘সম্ভরের পরিবেশ এত সুন্দর যে, ওখানে ভাল ভাবে বিহার রিক্রিয়েট করতে পারব। এখানে বসতি কম। তাই সম্ভরকেই বেছে নিয়েছিলাম।’’ আমির খান, ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত ‘ঠগস অব হিন্দোস্তান’-এর ক্লাইম্যাক্সের শুটিং হচ্ছে রাজস্থানে। এই মুহূর্তে ‘এনএইচ টেন’-এর পরিচালক নবদীপ সিংহের নতুন হিস্টোরিক্যাল ড্রামার কাজও চলছে রাজস্থানের সাপোত্রা গ্রামে। এই ছবিতে কাজ করছেন সেফ আলি খান।
বাংলা ছবির শুটিং স্পট হিসেবেও রাজস্থান এখন নিউ ফেভারিট। এখন জয়সলমেরে ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর শুট করছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কৌশিক জানিয়েছিলেন, ছবিতে নায়কের রাজস্থানে শো করা নিয়ে একটি অংশ রয়েছে। তারই শুটিং চলছে ওখানে। জয়সলমের ও জয়পুরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও তাঁর ‘এক যে ছিল রাজা’র শেষ অংশের শুটিং করেছেন। সৃজিত মেনে নিলেন, সৌন্দর্যের দিক থেকে রাজস্থান সব সময়ই এগিয়ে। বললেন, ‘‘রাজস্থান টুরিস্ট ডেস্টিনেশন বলে থাকার জায়গা বা অন্যান্য পরিকাঠামো নিয়ে কোনও সমস্যা হয় না। দিল্লি কাছেই। হঠাৎ ইকুইপমেন্টের দরকার পড়লে চট করে পৌঁছে যাওয়া যায়।’’
আরও পড়ুন: আর গান গাইবেন না? দর্শকদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন অর্পিতা
পরিচালকদের আর এক পছন্দের জায়গা বারাণসী। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে গঙ্গাতীরের এই পুরনো শহর নিজের বৈচিত্রকে চিনিয়েছে। ‘নৌকাডুবি’, ‘চোখের বালি’, ‘হর হর ব্যোমকেশ’-এর মতো বাংলা ছবি তো বটেই, ‘ওয়াটার’, ‘লগা চুনরি মে দাগ’, ‘রাঞ্ঝনা’, ‘মাসান’ ইত্যাদি হিন্দি ছবিতেও সমান গরিমায় উঠে এসেছে এ শহরের বিচিত্র চরিত্র। ‘মাসান’-খ্যাত পরিচালক নীরজ ঘেওয়ান বলেছিলেন, ‘‘এই শহরটা একসঙ্গে জন্ম আর মৃত্যুর কথা বলে। গোটা বিশ্বের বহু মানুষেরই মৃত্যুর আগে এখানে আসার ইচ্ছে থাকে। আমার ছবির গল্পের জন্য তাই বারাণসীই পছন্দ ছিল।’’
অরিন্দম শীলের বিভিন্ন ছবিতে উঠে এসেছে বারাণসী, লখনউ, উত্তরবঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘যে গল্প বাংলাকেন্দ্রিক, একঘেয়েমি এড়াতে আমি তাকেও অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছি। ‘বালিঘর’-এর শুট করতে বাংলাদেশে যাব, আবার ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ শুট করব মুসৌরিতে। এ শহরে পুরনো বাড়ি, বেকারি... ব্রিটিশ ঘরানার ছাপ আছে।’’
শুটিং লোকেশন হিসেবে কাশ্মীরের তুলনা ভূস্বর্গই। ‘হায়দর’-এর শুটের সময় বিশাল ভরদ্বাজ লোকেশন হিসেবে কাশ্মীরকে পছন্দ করেন। তাঁর কাছে কাশ্মীর ছিল ‘হ্যামলেট’। বিশালের মনে হয়েছিল যে, সৌন্দর্যের পাশাপাশি কাশ্মীরও ছবির চরিত্র হয়ে উঠবে। ‘রকস্টার’, ‘হাইওয়ে’, ‘লক্ষ্য’, ‘জব তক হ্যায় জান’... অসংখ্য ছবিতে কাশ্মীর যেন ছবির চরিত্র হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ‘রাজি’ ছবির শুটিংও হয়েছে কাশ্মীরের দুধপাতরিতে।
শুটিং লোকেশন হিসেবে গোয়াও জনপ্রিয়। ‘দিল চাহতা হ্যায়’, গোলমাল সিরিজ, ‘সিংহম’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’... তালিকা বেশ লম্বা। সমুদ্রপাড়ের এই শহরের নাম বললেই যেন এক সজীবতা, ছুটির হাতছানি, কেয়ারফ্রি দৃষ্টিভঙ্গি ছুঁয়ে যায় মন। ‘গোলমাল’-খ্যাত রোহিত শেট্টি বলেছিলেন, মুম্বই তাঁর জন্মভূমি হলেও, গোয়া তাঁর কর্মভূমি। গোয়ার মাটিতে তিনি অন্য রকমের এনার্জি পান।
ইদানীং উটির জৌলুসে ভাটা পড়লেও, দক্ষিণের এই পাহাড়ি শহরে বহু শুটিং হয়েছে! ‘প্যার ঝুকতা নহী’, ‘কর্জ’, ‘সদমা’, ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’... একটা সময়ে মিঠুন চক্রবর্তী উটিতেই শুটিং করতেন। ঋষি কপূর, সুভাষ ঘাই, মহেশ ভট্টও উটি নিয়ে অবসেস্ড।
বাঙালি পরিচালকদের পছন্দের লোকেশন উত্তরবঙ্গও। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ থেকে শুরু করে ‘তিতলি’, ‘বাস্তুশাপ’, ‘ল্যাপটপ’, ‘ব্যোমকেশ পর্ব’... বহু ছবির শুটিং হয়েছে উত্তরবঙ্গে। ‘জোনাকি’রও শুট হয়েছে কার্শিয়াঙে।
এ ভাবেই হরেক রঙে, রূপে ভারতের নানা জায়গা বুনে চলুক সেলুলয়েডের মায়াজাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy