Advertisement
E-Paper

পিতা-পুত্র সম্পর্কের বৃত্তে মিঠুন-ঋত্বিক, রাজের নতুন ছবির শুটিংয়ে আনন্দবাজার অনলাইন

রাজ চক্রবর্তীর নতুন বাংলা ছবিতে অন্যতম আকর্ষণ মিঠুন চক্রবর্তী। শহরের বিভিন্ন লোকেশনে এই ছবির শুটিং চলছে।

Mithun Chakraborty

শুটিং ফ্লোরে মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫৯
Share
Save

বুধবারের সকাল। বৃষ্টিস্নাত শহর। ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত। রাজারহাটের বিলাসবহুল আবাসনের ন’তলার ফ্ল্যাটের জানলার কাচ বৃষ্টির ছাটে ভিজছে। ভিতরে একাধিক মানুষের ভিড়। কথাবার্তা চলছে। তবে যাঁকে ঘিরে এত আয়োজন, সেই মানুষটির কিন্তু এ সবে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। ঘরের এক কোণে সোফায় বসে রয়েছেন তিনি। নিজে তিনি প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার করেন না। কিন্তু দেখা গেল একমনে মোবাইলে রিল ভিডিয়ো দেখে চলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী! গম্ভীর মুখে স্ক্রল করে চলেছেন। কখনও রান্না, কখনও বাচ্চা, কখনও আবার ভ্রমণের রিল দেখে চলেছেন তিনি। সহকারী এসে বললেন, “শট রেডি।” মোবাইলটি তাঁর হাতে চালান করে দিয়ে উঠে গেলেন ‘মহাগুরু’।

এই মুহূর্তে শহরে রাজ চক্রবর্তীর নতুন ছবির (ওয়ার্কিং টাইটেল ‘প্রোডাকশন নম্বর ১৬৫’) শুটিং চলছে। বুধবার শুটিং ফ্লোরেই মেজাজে পাওয়া গেল মিঠুনকে। গত মাসে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মিঠুন। তার পর থেকে শহরেই রয়েছেন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন একটি বাংলা ছবির শুটিং। কিন্তু তাঁর চেহারায় অসুস্থতার ছাপ নেই। পরনে সাদা শার্ট, কালো ব্লেজ়ার ও ট্রাউ়জ়ার। মাথার চুল ব্যাকব্রাশ করা। হাসিমুখে শট দিচ্ছেন অভিনেতা।

শট রেডি। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মিঠুন। ছবিতে তিনি শরদিন্দু, ওরফে শরদ। সামনে দাঁড়িয়ে পুত্রবধূ রিয়া (অভিনেত্রী অহনা দত্ত)। লোকেশনটিকে দেখানো হচ্ছে শরদের ছেলে ইন্দ্রজিতের বাড়ি হিসেবে।

এই দৃশ্যে সংলাপ কিছুটা এ রকম—

রিয়া: বাবা, পর্দাগুলো আপনার টাঙানোর কথা ছিল যে!

শরদ: হ্যাঁ, এই তো টাঙিয়ে দিচ্ছি।

রিয়া: ছেড়ে দিন! দরকার নেই, আমি ধোপাকে দিয়ে করিয়ে নেব।

শরদ: আচ্ছা (করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন)...

রিয়া: বাবা, আপনি কি বাসে যাবেন? না কি বাইক বুক করে দেব?

শরদ: না, আমি ঠিক চলে যাব।

রিয়া: যাওয়ার সময়ে দরজাটা বন্ধ করে যাবেন।

(মিঠুন দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলেন)

দৃশ্যটি ছবির বিষয়ভাবনাকে এক লহমায় চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। দু’বার টেক করলেন পরিচালক। ফোকাসের সমস্যার জন্য আরও এক বার টেকের অনুরোধ জানালে এক কথায় রাজি মিঠুন। শটের সময় অহনাকে টিপ্‌স দিতেও মিঠুনের কোনও ক্লান্তি নেই। শটের পর হাতে কিছুটা সময় রয়েছে। সহকারী মিঠুনের জন্য অল্প খাবার নিয়ে এলেন। খেতে খেতেই ‘নবাগতা’ অভিনেত্রীর সঙ্গে গল্প জুড়লেন মিঠুন। তাঁর কথা ভেসে এল, ‘‘কে কোথা থেকে শুরু করেছে, কোথায় যাবে, কেউ বলতে পারবে না। সবটাই কর্মের ফল। তাই চেষ্টা থামালে চলবে না। আমি আমার জীবন দিয়ে এটা শিখেছি।’’ শটের ডাক আসতেই প্রস্তুত তিনি। ক্যামেরায় মিঠুনের ক্লোজ় আপ নেওয়া হবে। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলের আবেগপ্রবণ দৃশ্য। শেষ দৃশ্যে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মিঠুনের চোখের কোণ অল্প ভিজে উঠল। মনিটরের পিছন থেকে রাজের চিৎকার ভেসে এল, ‘‘দাদা, খুব সুন্দর হয়েছে।’’

শুটিংয়ের ফাঁকে (বাঁ দিক থেকে) মিঠুন, ঋত্বিক ও রাজ।

শুটিংয়ের ফাঁকে (বাঁ দিক থেকে) মিঠুন, ঋত্বিক ও রাজ। ছবি: সংগৃহীত।

পরবর্তী শটের প্রস্তুতি শুরু হল। বাবা ও ছেলের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন এই ছবির প্রেক্ষাপট। সেখানে আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিতও পাওয়া গেল। তবে রাজ আড়াল রেখেই বলছিলেন, ‘‘অভিভাবকেরা জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বাবা না হলে বোঝা যায় না। আমাদের চারপাশের পরিবারে যে সমস্যাগুলো দেখি, সে রকমই কিছু ঘটনাকে এই ছবিতে তুলে ধরতে চেয়েছি।’’ ১৮ বছর আগে মিঠুনের সঙ্গে নন ফিকশনে প্রথম কাজ রাজের। কিন্তু ছবি এই প্রথম। মিঠুনকে প্রসঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘কল টাইমের আগে ফ্লোরে চলে আসছেন। ওয়ান শট ওকে! তার থেকেও বড় কথা, বেশির ভাগ দৃশ্যে ওঁর অভিনয় দেখে আমার চোখে জল আসছে। সামনে দাঁড়িয়ে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।’’ রাজ এবং মিঠুন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য। ফ্লোরের পরিবেশে যে রাজনীতি নেই, তা দু’জনের রসায়ন থেকেই স্পষ্ট। রাজের কথায়, ‘‘আমরা ফ্লোরে শিল্পী হিসেবে কাজ করতে আসি। সেখানে রাজনীতি আসবে কেন?’’ মিঠুন ফ্লোরে ‘নিজের মর্জি’তে চলেন বলে টলিপাড়ায় গুঞ্জন। কিন্তু রাজের কথায়, সেটা ‘ছেলেমানুষি’র থেকে বেশি কিছু নয়।

লাঞ্চের জন্য মিঠুন ফ্লোর থেকে নিজের হোটেলে ফিরবেন। প্রযোজনা সংস্থার তরফে কঠোর নির্দেশ, মিঠুনকে কোনও আলাদা প্রশ্ন করা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অভিনেতা তত ক্ষণে ফ্লোরে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। হেসে বললেন, ‘‘ভালই আছি। শুটিং করছি। তবে ছবি নিয়ে এখন কোনও কথা বলব না। আপাতত শুটিংটা মন দিয়ে করতে চাই।’’ বেরিয়ে গেলেন মিঠুন। ছবিতে ইন্দ্রজিৎ অর্থাৎ মিঠুনের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। ঋত্বিক তৈরি হয়ে আলোকচিত্রীদের অনুরোধ মেটালেন। কিন্তু মিঠুনের সঙ্গে তাঁর দৃশ্যের শুটিং হবে আবার সন্ধ্যায়। মিঠুন মানেই ঋত্বিকের কাছে শৈশবের স্মৃতিমেদুরতা। সেই সঙ্গে স্বপ্নপূরণের স্বাদ। হেসে বললেন, ‘‘মনে আছে, ‘ডিস্কো ডান্সার’ মুক্তির দিন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম ছিল। তখন বন্ধুদের মধ্যে কারও পদবি ‘বসু’ হলে সবাই নেতাজির প্রসঙ্গ তুলত। আর আমরা, ‘চক্রবর্তী’রা মিঠুনদার।’’ নিজের চরিত্র নিয়ে এখনই খুব একটা খুলে বলতে রাজি হলেন না। বললেন, ‘‘চরিত্রটা সুসন্তান নয়। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক চমক লুকিয়ে রয়েছে।’’ ঋত্বিকের মতে, মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে কাজ মানে, তিনিও নিজের চরিত্রে চ্যালেঞ্জ আশা করেছিলেন। ঘটেছেও সেটাই। ঋত্বিক জানালেন, মিঠুন এখনও তাঁর কোনও কাজ দেখেননি। কিন্তু ফ্লোরে এসে তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি সুঅভিনেতা। ঋত্বিক হেসে বললেন, ‘‘আমি চমকে গিয়েছিলাম। কী ভাবে জানলেন, জিজ্ঞাসা করতেই বলেছিলেন, ‘আমিও একটু খোঁজখবর নিয়েছি। কার সঙ্গে অভিনয় করব, সেটা জানা দরকার।’’’ কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে মিঠুন-ঋত্বিকের সঙ্গে অভিনয়ে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত অহনা। বললেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। ওঁরা যেন আমার অভিনয়ে খুশি হন, এটাই চাই।’’

মিঠুনের সঙ্গে অহনা।

মিঠুনের সঙ্গে অহনা। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিতে মিঠুনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছেন অনসূয়া মজুমদার। এ ছাড়াও রয়েছেন সোহিনী সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। বিশেষ একটি চরিত্রে রয়েছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ২২ মার্চ ছবির প্রথম শিডিউলের শুটিং শেষ হবে। দ্বিতীয় শিডিউলের শুটিং শুরু হবে জুন মাস নাগাদ। এসভিএফ প্রযোজিত ছবিটির মুক্তির দিন এখনও চূড়ান্ত নয়। রাজ বললেন, ‘‘এখনও ছবির শিরোনাম নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি। কোনও প্রতিযোগিতা মাথায় রেখে ছবিটা রিলিজ় করতে চাই না। যখনই রিলিজ় করব, জানি, ছবিটা দর্শকের মন জয় করে নেবে।’’

Mithun Chakraborty Tollywood Debraj Chakraborty Bengali Movie

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।