Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Raktabeej

সারা দিল্লি ভাসছে, শুধু রাইসিনা হিল্‌স শুকনো! রাষ্ট্রপতি ভবনে শুটিং করার গল্প লিখলেন শিবপ্রসাদ

‘রক্তবীজ’ সিনেমার শুটিং হয়ে গেল দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথম বাংলা ছবি যার শুটিং হয়ে গেল এই ঐতিহাসিক স্থানে। অভিজ্ঞতা ভাগ করতে কলম ধরলেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

Shiboprasad Mukherjee and Nandita Roy while shooting of raktabeej in Rashtrapati Bhavan

রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে টিম ‘রক্তবীজ’। নিজস্ব চিত্র।

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ১২:১৯
Share: Save:

কিছু মুহূর্ত স্বপ্নের মতো হয়। কিছু মুহূর্ত নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ৯ জুলাই আমাদের চলচ্চিত্র জীবনের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। ‘রক্তবীজ’ ছবির শুটিংয়ের জন্য দিল্লি শহরে রাষ্ট্রপতি ভবনে শুটিং করার প্রয়োজন ছিল। নন্দিতাদি বলেছিলেন “ওই শটটা লাগবেই শিবু।” আমি বলেছিলাম, “আমি জানি না দিদি, আমি পারমিশন পাব কি না।” খোঁজ নিতে শুরু করলাম। সবাই বলল দিল্লিতে অন্য জায়গায় শুটিং করার অনুমতি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি ভবনে শুটিং অসম্ভব ব্যাপার। বন্ধু দেবাশিস সাহা, যে সব সময় আমার পাশে থাকে, আমি তাকে জানালাম। দেবাশিস বলল, “গুরু লড়কে লেঙ্গে হাম… কি আছে ম্যাক্সিমাম না বলবে… চিঠি পাঠাও।” চিঠি পাঠালাম। দিল্লি নিবাসী দেবাশিস। যে যে থানায় বা যে যে পুলিশের অনুমতি দরকার, সেই সেই বিভাগে আমাদের চিঠি চলে গেল দু’মাস আগে থেকে। নির্দিষ্ট একটি ডেট আমরা ঠিক করেছিলাম। ৮ তারিখ দিল্লি পৌঁছব আর ৯ তারিখ শুটিং করব। একটি করে থানার অনুমতি হতে থাকল আর আমরা অধীর আগ্রহে বসে রয়েছি।

দেবাশিস এক বার করে ফোন করে জানায়, ও আজ দ্বিতীয় ধাপ পেরোল, তার পর তৃতীয় ধাপ পেরোল। শেষে এক দিন হঠাৎ অফিসে আমার কার্যনির্বাহী প্রযোজক সুপ্রিয় ঘোষের কাছে ফোন এল। পার্লামেন্ট হাউস থেকে ফোন। সুপ্রিয়র নম্বরই দেওয়া ছিল। এর পর সেখান থেকে জানতে পারলাম, আমাদের অনুমতি পাওয়ার শেষ ধাপে পৌঁছেছি, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আমাদের চিঠি পৌঁছেছে। পুলিশের প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে আমাদের অনুমতি পাওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই শেষ কথা। আমাদের মনে হল, এই অনুমতি মনে হয় না আমরা পাব। দেবাশিস বলল, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আমাদের কারওই কোনও চেনাজানা নেই।’’ কিন্তু অবাক করা বিষয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে আমরা আমাদের অনুমতিপত্র পেয়ে গেলাম। হাতে যখন আমাদের শুটিংয়ের অনুমতিপত্র পেলাম, তখন মনে হল যেন স্বপ্নের মতো। দিল্লি পৌঁছনোর আগেই আমরা আরও একটি বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম।

আবহাওয়া। আমরা অ্যাকুওয়েদারে যখন দেখে যাচ্ছি দিল্লির আবহাওয়া। তখন সেখানে দেখাচ্ছে ১০০% বৃষ্টি ৮ এবং ৯ তারিখ। মনে হল, দৃশ্যের ভিতরে পরিবর্তন করতে হবে যে, বৃষ্টি পড়তেই পারে। বিশেষ করে ছবির যে দৃশ্যের অংশ শুটিং করব, সেখানে। সেই মতো সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললাম যে, চিত্রনাট্যে যদি কোন প্রয়োজনে বদল করতে হয়। দিল্লি যখন পৌঁছেছি, ফ্লাইট থেকে নেমেই দেখি অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। আমাদের গাড়ির চালক বললেন, গত ২৫ বছরে দিল্লি শহরে এমন বৃষ্টি হয়নি। আমরা ধরে নিলাম, এ যাত্রায় শুটিং আর হবে না। বৃষ্টি এমন বাড়তে শুরু করল যে, ইউনিট জানাল, শুটিং করা যাবে না, মুশকিল হতে পারে। ক্যামেরাম্যানও তাই জানাল। ক্যামেরাম্যান অর্থাৎ প্রতীপ। ভোর ৪টের সময় রাইসিনা হিল্‌স অর্থাৎ প্রেসিডেন্টস হাউসের সামনে, বিজয় চওকে আমাদের পৌঁছতে হবে। রাত ৩ টের মধ্যে আমরা রেডি। প্রায় সারা রাত জাগা, শুধু অ্যাকুওয়েদার দেখে যাচ্ছি। অবাক করা বিষয়, রাত ১২টার পর থেকে অদ্ভুত ভাবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। লেখা আছে আর চার ঘণ্টা বাদে বৃষ্টি। অর্থাৎ, যখন আমরা রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে পৌঁছব, তখন থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং লাল সতর্কতা দেখাচ্ছে।

Shiboprasad and Nandita Roy

নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

আমরা ধরেই নিলাম শুটিং তো হবেই না। রাত ৩টের সময় হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আকাশে কিন্তু বৃষ্টি নেই তখনও। অ্যাকুওয়েদার বলছে আর ৩৪ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে। আসতে আসতে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে গিয়ে পৌঁছলাম। বেশ কিছু পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছেন আমাদের জন্য। বিজয় চওকের সামনে আমরা, আর উল্টো দিকে রাষ্ট্রপতি ভবন। আলোকিত। স্বপ্নের মতো দেখাচ্ছে। ক্যামেরা পাতা হল। শুটিং শুরু হবে। আমি প্রতীপকে বললাম, ‘‘আর চার মিনিট দেখাচ্ছে বৃষ্টি শুরু হতে। যদি একটা শটও নিতে পারি, তবে সেটাই ইতিহাস হবে!’’ শুটিং শুরু হল। ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বোধ হয় প্রথম বার বাংলা সিনেমার ইতিহাসে রাষ্ট্রপতি ভবনের দৃশ্য দেখা যাবে। ভোর ৪টে থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কোনও বৃষ্টি পড়ল না!

যেখানে অ্যাকুওয়েদারে দেখাচ্ছিল, ‘হেভি রেন’। তা হলে বৃষ্টি কোথায় পড়ছিল? অদ্ভুত ভাবে সারা দিল্লি শহর ভাসছে, গুরুগ্রাম ভাসছে, দিল্লির অন্যান্য জায়গায় বৃষ্টি পড়ছে, শুধু ওই তিন ঘণ্টার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে কোনও বৃষ্টি হল না। শুটিং নির্বিঘ্নে শেষ হল। আমরা গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি রাইসিনা হিল্‌স ছেড়ে এগোতে শুরু করল। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হল। আমি মনে মনে বললাম, আমার মায়ের আশীর্বাদ। আর ভগবান আছেন। আর অগণিত দর্শক, যাঁরা আমাদেরকে ভালবাসেন, তাঁদের আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ‘রক্তবীজ’-এ সম্ভত প্রথম বার বাংলা সিনেমায় রাষ্ট্রপতি ভবনের সেই অসাধারণ ম্যাজিক আজ থেকে ঠিক ১০০ দিন বাদে আপনারা বড় পর্দায় দেখতে পাবেন। আশা করি, আমার মতো আপনাদেরও স্বপ্নের মতো লাগবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy