অপরাজিতা-মনামী
সপাটে মনামীর গালে একটা চড়। এই দৃশ্যটি ছিল স্বাতীদি, মনামী আর অপরাজিতা আঢ্যর মধ্যে। দুই মেয়ের সঙ্গে মা। একটা অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। যেখানে আবদার করার মত একটা দৃশ্যও রয়েছে। সেই দৃশ্যতে হঠাৎ স্বাতীদি নিজের মেয়ের গালে চড় মারেন। যতবার এই দৃশ্যটা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে টেক করা হল, স্বাতীদি একবার করে মনামীকে মারছেন আর নিজের চোখ দিয়ে জল পড়ছে। মনামীকে আদর করছেন আর বলছেন ‘‘আমাকে ক্ষমা করে দিস মা’’। আমাকে ডেকে বলছেন, ‘‘শিবু আমি পারছি না এই দৃশ্যটা অভিনয় করতে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’’ দৃশ্যটি শেষে মনামী মানে ‘বেলাশুরু’র ‘পিউ’ দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় এক রাশ অভিমান নিয়ে। অপরাজিতা আঢ্য মানে অপা পিছনে দৌড়য়।
ছাদে মনামী একা। অপা আসে। ‘পিউ’কে জড়িয়ে ধরে অপার সংলাপ, ‘‘মায়ের উপর রাগ করিস না পিউ… মায়ের উপর রাগ করিস না।’’ এরপর মনামী বলে যেতে থাকে ‘‘আমার এক একটা সময় মাকে সহ্য হত না…আমার কোনও জিনিসই মায়ের ভাল লাগত না…আমার পলাশের সাথে লিভ ইন করা… আমার মাকে ভীষণ আউটডেটেট মনে হত… আমি বাবাকে বেশি চাইতাম। আর এখন যেন মাকে সব সময় জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছা করে… মায়ের গায়ের গন্ধটা নিতে ইচ্ছে করে…।’’
সারা ইউনিট স্তব্ধ। শটটা শেষ হয়। অপা মনামীকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। নন্দিতাদি এসে শটের পর জড়িয়ে ধরলেন দু’জনকে। মনামী সটান শটটা দিয়ে আমার সামনে এসে বলল, ‘‘এই যে রিয়েল টিয়ার্স…গ্লিসারিন নিইনি কিন্তু…’’। তিন-তিনবার শটটা হয়েছিল। তিনবারই চোখের জল নিয়ে মনামী দেখিয়েছিল। মনামীর সঙ্গে ‘বেলাশেষে’ থেকেই একটা খুনসুটির জায়গা ছিল। সারাজীবনই রয়েছে। ‘বেলাশেষে’-তে মেকআপ নিয়ে খুব মজা হত। মনামী চড়া মেকআপ করত আর আমি এসে মেকআপটা তুলে দিতাম। আর সেটা নিয়ে এক রাশ অভিমান ছিল। তারপর থেকে ও সেটে ঢুকেই বলত, ‘‘দেখে নাও মেক আপ আছে কি না।’’ আমি তাকিয়ে থাকতাম, ও বলত এ বার কিন্তু গালের হাড়গুলো দেখা যাবে। এ শ্যুটিংটা চলার সময় মনামীর কলকাতায় একটা ধারাবাহিক চলছিল। ভোর ৬টায় কল টাইম। মনামী কলকাতায় শ্যুটিং শেষ করত সাড়ে ১০টা-১১টায়। সারারাত ট্রাভেল করত। ভোরবেলা এসে শান্তিনিকেতন পৌঁছত, ভোর ৫ টা নাগাদ। এক ঘণ্টা রেডি হয়ে ভোর ৬টায় লোকেশনে পৌঁছত। পরিচালক হিসেবে আমার আর নন্দিতাদির মনে হয় এই সিনেমায় মনামীর কাজ দর্শকের মনে বিশেষ জায়গা করে নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy