Sharib Hashmi 'The family Man's JK was once in debt dgtl
Sharib Hashmi
Sharib Hashmi: বহু বার প্রত্যাখ্যাত, দেনায় জর্জরিতও হন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর জেকে
ছোট থেকে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখা শারিবকে উচ্চতার জন্যও কেরিয়ারের প্রথম দিকে অনেক হোঁচট খেতে হয়েছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ১২:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
বস্তিবাসী, লন্ডনে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিক, উচ্চাকাঙ্খী গায়ক, সিবিআই অফিসার কিংবা গুপ্তচর— এই সমস্ত চরিত্রের মধ্যে একটি বিষয়েরই মিল রয়েছে। পর্দায় এ সবই ফুটিয়ে তুলেছেন শারিব হাসমি। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর জেকে।
০২২২
এই ওয়েব সিরিজ তাঁকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর দৌলতে আজ তাঁকে অনেকেই চেনেন। কিন্তু জানেন কি এক সময় কাজ না পেয়ে দেনায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন শারিব! ছোট থেকে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখা শারিবকে উচ্চতার জন্যও কেরিয়ারের প্রথম দিকে অনেক হোঁচট খেতে হয়েছিল।
০৩২২
১৯৭৬ সালে মুম্বইয়ের মালাডে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। বাবা ছিলেন একজন ফিল্ম সাংবাদিক। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকে অনেক অভিনেতাকে বাড়িতে আসতে দেখেছেন তিনি। তাঁদের দেখেই মূলত অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তাঁর। তার উপর ফিল্ম সাংবাদিক বাবাও চাইতেন ছেলে বড় অভিনেতা হন।
০৪২২
তিনি আজ সত্যিই বড়মাপের অভিনেতা। বাবার স্বপ্ন, নিজের স্বপ্ন- সবই পূরণ করেছেন। কিন্তু এক সময় এই স্বপ্নের সিঁড়ির সন্ধান পাওয়াই হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে দুষ্কর।
০৫২২
স্নাতক হওয়ার পর আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মতো শারিবও চাকরির খোঁজ শুরু করেন। ছোটখাটো নানা কাজে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার চেষ্টাও করে যাচ্ছিলেন। অভিনয়ে আসার আগেই ২০০৩ সালে তাঁর বিয়ে হয়।
০৬২২
কিন্তু সময় যত এগিয়েছে অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নিজের প্রতি তাঁর বিশ্বাস কমতে শুরু করে। তার উপর ছোট থেকে নিজের কম উচ্চতা নিয়েও তিনি যথেষ্ট হীনমন্যতায় ভুগতেন। সব মিলিয়ে নিজের স্বপ্ন, বাবার স্বপ্ন প্রায় ভুলতে বসেছিলেন।
০৭২২
২০০৩ সাল থেকে ২০০৬-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত এমটিভি-র একটি শো-এর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখতেন তিনি। ২০০৭ সালের শেষের দিকে মূলত এক বন্ধুর সহযোগিতাতেই ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়র’-এ অডিশন দিতে যান তিনি।
০৮২২
তখনও অভিনয়কে নিজের পেশা হিসাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা নতুন করে ভাবতে শুরু করেননি। ‘স্নামডগ মিলিয়নিয়র’-এ একটি ছোট চরিত্র ছিল তাঁর। তিনি জানতেন না যে এই ছবিই পরে অস্কার পাবে। যদিও ‘স্নামডগ মিলিয়নিয়র’ তাঁকে আলাদা কোনও পরিচিতি দেয়নি।
০৯২২
হাতে তখন খুব বেশি টাকা ছিল না। টুকটাক যা অভিনয় করছিলেন তাতে নিজেকে তারকা বলে মনেই করতেন না শারিব। ছোটবেলায় নিজেকে সুপারস্টার হিসাবে স্বপ্নে দেখতেন ঠিকই কিন্তু বড় হয়ে সেই স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে নিজের অজান্তেই একটি সীমারেখা টেনে ফেলেছিলেন।
১০২২
কোথাও না কোথাও নিজের বাহ্যিক রূপটাকেই তারকা হওয়ার অন্তরায় ভেবে বসেছিলেন। কিন্তু জীবন তাঁর জন্য কিছু অন্যই ভেবে রেখেছিল।
১১২২
‘স্লামডগ মিলিয়নিয়র’-এর পর চাকরি নিয়ে দুবাই চলে যান তিনি। কিন্তু সে কাজেও মন বসাতে পারছিলেন না তিনি। দুবাই যাওয়ার এক মাসের মধ্যেই দেশে ফিরে আসেন তিনি।
১২২২
অভিনয় শুরুর কোনও বয়স নেই ঠিকই, কিন্তু এটাও ঠিক যে ইন্ডাস্ট্রি সব সময়ই কম বয়সি অভিনেতাদের বেশি পছন্দ করে। দুবাই থেকে যখন দেশে ফেরেন শারিব তাঁর বয়স তখন ৩২ বছর। এ বার তিনি সঙ্কল্প করে নিয়েছিলেন অভিনেতা হয়ে উঠবেনই।
১৩২২
নতুন করে অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য খোঁজখবর নেওয়া, অডিশন দেওয়া— সবই শুরু করেন তিনি। সে সময় ‘ধোবি ঘাট’ ছবির অডিশন চলছিল। অডিশনে ডাক পান। ছবিতে প্রতীক বব্বরের ভাইয়ের ভূমিকায় সুযোগও পেয়ে যান।
১৪২২
কিন্তু অডিশনের পর তাঁকে ওই চরিত্রের জন্য বাছাই করলেও শেষমেশ পর্দায় তাঁকে দেখা যায়নি। কারণ অডিশনে বাছাইয়ের পর তাঁকে পরিচালক বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচালকের যুক্তি ছিল, শারিবের ব্যক্তিত্ব ওই চরিত্রের সঙ্গে মানানসই ছিল না।
১৫২২
এই ঘটনায় অত্যন্ত অপমানিত হয়েছিলেন তিনি। নিজেকে অভিনেতা করে তুলে যোগ্য জবাব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা সুগম ছিল না। এর পর ৩ বছর প্রচুর অডিশন দেন তিনি। অন্তত ১০০টি ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারেই তাঁকে নাকচ করে দেওয়া হয়।
১৬২২
এ ভাবেই কেটে যায় পরের ৩ বছর। তখন কিছু বিজ্ঞাপন, স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে টুকটাক অভিনয় করছিলেন। ৩ বছর পর তাঁর মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। তত দিনে দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৭২২
স্ত্রী নাসরিন হাসমিকে সব সময় পাশে পেয়েছেন শারিব। এই দূরাবস্থাতেও কখনও স্বামীকে উপার্জনের জন্য চাপ দেননি তিনি। কিন্তু মানসিক চাপ কি আর চেপে রাখা যায়! যত দিন যাচ্ছিল শারিব তত মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলেন। নামমাত্র উপার্জনে সংসার চালানোও দূরুহ হয়ে পড়েছিল তাঁর।
১৮২২
শেষে একটি টিভি চ্যানেলের কাজে যোগ দেন। এর তিন মাস পরেই স্বপ্ন পূরণের সিঁড়িটা দেখতে পান শারিব। যশ রাজ ফিল্মের কাস্টিং পরিচালকের ফোন পান তিনি। শারিবের একটি স্বপ্ন দৈর্ঘ্যের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ‘যব তক হ্যায় জান’ ছবির অডিশনে তাই ডেকে পাঠান শারিবকে।
১৯২২
সেখানেও হোঁচট খেতে হয়েছিল তাঁকে। যে চরিত্রের জন্য প্রথমে তাঁর অডিশন নেওয়া হয়েছিল সেই চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয় অন্য এক জনকে। পরে ওই ফিল্মেরই অন্য এক চরিত্রের জন্য ফের অডিশনে ডাক পান এবং ১ ঘণ্টার মধ্যেই শ্যুটিংও শুরু হয়ে যায়।
২০২২
সব কিছুই যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল শারিবের। যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে শ্যুটিং শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে আরও অবাক হয়ে যান তিনি যখন ‘ফিল্মিস্তান’ ছবির জন্যও প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে।
২১২২
এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ২০১২-র ‘যব তক হ্যায় জান’-র পর ‘ফিল্মিস্তান’, ‘বদমাশিয়াঁ’, ‘ভদকা ডায়েরিস’, ‘ফুল্লু’, ‘বাত্তি গুল মিটার চালু’-র মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
২২২২
২০২১ সালে ইতিমধ্যে তাঁর দুটো ছবি মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। অক্টোবরে আরও একটি মুক্তি পাবে। তবে তাঁর জীবনের মাইলস্টোন হয়ে থাকবে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’। ছোট থেকে যে খ্যাতি, জনপ্রিয়তার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এ জেকে সেই খ্যাতির শীর্ষই ছুঁয়ে ফেলেছেন।