অভিনয়: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, ইন্দিরা তিওয়ারি, নস্সর, অক্ষত দাস, সঞ্জয় নারভেকর, শ্বেতা বসু প্রসাদ
পরিচালনা: সুধীর মিশ্র
টাকাকে এঁরা ‘ফান্ড’ বলেন! এঁরা কারা? এঁরাই তো ‘সিরিয়াস মেন’!
সিরিয়াস কারা? যাঁরা মজা করেন না? নাকি যাঁরা মশকরা করেন না? নাকি যাঁরা কোনও কিছুকে হেলাফেলা করেন না? সিরিয়াস শব্দের মানে কী? গম্ভীর? নাকি কোনও কিছুর প্রতি যুক্তিযুক্ত ভাবে যত্নশীল? সে-ই কি সিরিয়াস যে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসকে গুরুত্ব দিয়ে চলতে পারে? এই সিরিয়াস মানুষেরা কি হাসেন? এঁদের জগতটা বুঝি শুধুই হাসায়? ভাবনা, এবং তারই সঙ্গে গল্প এগোতে থাকে গড়গড়িয়ে।
গল্প বলছে যে, অজস্র ‘সিরিয়াস’ মানুষ ঘুরে বেড়ান এ জগতে। তাঁদের বাইরেটা গম্ভীর হয়। মানুষ অন্য মানুষের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখে সেই গাম্ভীর্যের আড়ালে। কিছু শব্দ, কিন্তু ব্যঞ্জনা সে পর্দাকে মজবুত করতে সাহায্য করে। অন্যের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। সে দূরত্ব বাড়ে এবং বজায় থাকে আচরণের মারপ্যাঁচে। এক নামী বিজ্ঞানীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আয়ান মানির (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী) গল্পে সেই ভেদাভেদের রাজনীতির আর একটি দিক ধরা পড়ল।
পরিচালক সুধীর মিশ্রর হাতে তৈরি ‘সিরিয়াস মেন’ ছবির গল্প এসেছে মনু জোসেফের লেখা একই নামের একটি উপন্যাস থেকে। দলিত তামিল পরিযায়ী এক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার সে গল্পের কেন্দ্রে। জাতপাতের রাজনীতি আজ কি প্রাসঙ্গিক? যে মানুষটার চাকরি আছে একটি নামী সরকারি গবেষণাগারে, তাঁকে আবার সে রাজনীতি ছুঁতে পারে নাকি? ছুঁলে তিনি কী করেন? এমন এক জটিল প্রশ্নের মুখে সহজ অভিনয় দিয়ে নওয়াজউদ্দিন ধরে রাখেন গল্প। স্ত্রী ওজার ভূমিকায় ইন্দিরা তিওয়ারি সঙ্গ দিয়ে চলেন নিজের অক্লান্ত নিস্তব্ধতাকে বজায় রেখে।
‘সিরিয়াস মেন’ গুরুত্বপূর্ণ এবং অস্বস্তিকর কিছু সত্যের মুখে দাঁড় করায়
‘সিরিয়াস মেন’ গুরুত্বপূর্ণ এবং অস্বস্তিকর কিছু সত্যের মুখে দাঁড় করায় এ ভাবেই। মানির ছোট্ট ছেলে আদিই (অক্ষত দাস) সেই টানাপড়েন-ছোঁয়াছানির গল্পের জোকার। তাকে উঠতে হবে কুলিনেরও উপরে। সমাজ না হলে পাত্তা দেবে না। বাবা ‘ভুল’ পথ নেন। ছেলেকে জিনিয়াস প্রমাণ করতে চলে একের পর এক মিথ্যা। সে মিথ্যা সামনে এনে দেবে আরও এক বড় জায়গা। মিথ। কী কী মিথ? এ দুনিয়ায় সোজা পথে কাজ হয়। সোজা পথে সকলে সমান অধিকার পায় তো? পায় যদি মনে হয়, তবে জানুন তা মিথ। তবে মিথ্যা দিতে মিথ ডেকে এনে লাভ কী?
আরও পড়ুন: বলিউড ত্যাগ করলেন সানা, কেন তা জানালেন সোশ্যাল মিডিয়ায়
লাভ আর কী? হাতে রয়ে যায় সেই কিছু চেনা প্রশ্ন, চেনা কারসাজি। দলিতকে যুগ যুগ ধরে পদতলে থাকতে হয়। কারণ, উচ্চবর্ণের সঙ্গে সমান সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। পেতে হলে কী করে দলিত? সেখানে কাজ করে গেল স্টিরিওটাইপ। দলিত মাত্রেই কি মিথ্যা বলে? মানে যেমন এখানে মানি বললেন? দলিতের পরিস্থিতি বোঝাতে কি বার বার তাকে ‘ভুল’ পথ নিতেই দেখাতে হয়? নাকি আসলে এই ভুল-ঠিকের হিসেবটাই মিথ? উচ্চবর্ণ সৎ পথে না গেলেও উচ্চস্থানেই থাকে, আর দলিতকে ফিরে যেতে হয় গ্রামে? মুম্বই নগরীর মতো উদার ক্ষেত্রেও স্থান থাকে না তার? দলিত পরিবার থেকে স্কুল পাশ করা প্রথম প্রজন্ম অসৎ কাজে হাত দিলেও তা ধরে রাখতে পারে না? তার জন্যও কি প্রয়োজন কয়েক প্রজন্মের অসততার পুঁজি? দুনিয়া যে বলে আইকিউ জরুরি? তবে কি আসলে জাতই বেশি সিরিয়াস ব্যাপার? আদি-আয়ান-ওজার গল্প বার বার এমন নানা পরিস্থিতি ও প্রশ্ন তুলে ধরে।
নওয়াজউদ্দিনকে স্ত্রী ওজার ভূমিকায় ইন্দিরা তিওয়ারি সঙ্গ দিয়ে চলেন
এ ছবির শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুচমুচে সংলাপ। সুন্দর আবহসঙ্গীত। চলনও গতিশীল। কিছু দূর এগিয়ে গতি ধীর হয়। কখনও কখনও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নও ঢোকে। প্লট নড়বড় করে। তবে গুরুত্ব হারায় না। কারণ জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে গল্প বলার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। এই ছবিতে চরিত্র নির্বাচন বলে দেয় জাত নিয়ে টানাপড়েন দেখা দরকার বিভিন্ন দিক থেকে। নানা চোখ দিয়ে। এ গল্পে তাই গরিব দলিত, ক্ষমতাশীল দলিত, বুদ্ধিমান দলিত, সৎ দলিত, অসৎ দলিত— সব রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে কী? সকল দলিতকে একসঙ্গে, এক ভাবে দেখার সেকেলে ভাবনার ইঙ্গিত। কথায় কথায় দলিত পিতা, নিজের পুত্রকে শেখান ‘প্রিমিটিভ মাইন্ডস’-এর বোকামিতে পাত্তা না দিতে গাম্ভীর্য বজায় রাখার ‘নাটক’। তখন ধাক্কা নিশ্চয়ই লাগে কিছু ‘সেকেলে’ ভাবনাচিন্তায়।
আরও পড়ুন: বয়সে ২০ বছরের ছোট, এই বলিউডি নবাগতার সঙ্গে লিভ ইন করছেন অনুরাগ?
কোনটা মিথ, কোনটা মিথ্যা? দুইয়ের মধ্যে কোনটা বেশি সিরিয়াস? প্রশ্ন রেখে যায় সে সব নাটকীয় দৃশ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy