Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Sean Connery

স্যোয়াগ অ্যান্ড শন

বন্ড গার্লদের সঙ্গে রসায়নের নেপথ্যে ছিল শন কনরির প্রেমিক সত্তা ও যৌন আবেদনবন্ড গার্লদের সঙ্গে রসায়নের নেপথ্যে ছিল শন কনরির প্রেমিক সত্তা ও যৌন আবেদন

স্যর শন কনরি

স্যর শন কনরি

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

খোদ রচয়িতাই ভয়ানক সন্দিহান ছিলেন জেমস বন্ডের চরিত্রে শন কনরিকে কাস্ট করা নিয়ে। ইয়ান ফ্লেমিংয়ের মতে, শন কনরি ততটা ক্লাসি নন, যতটা হলে জেমস বন্ডকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়। কিন্তু প্রথম বন্ড মুভি ‘ডক্টর নো’-এর অন্যতম প্রযোজক অ্যালবার্ট ব্রকোলি শুরু থেকেই বাজি ধরেছিলেন শনের উপরে। এবং ছবি মুক্তির পরে ইয়ান ফ্লেমিংও নিজের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সাতটি বন্ড মুভিতে তিনি ডবল ও সেভেনের চরিত্রে। তাঁর পরে জর্জ লেজ়েনবি, রজার মুর, টিমোথি ডালটন, পিয়ার্স ব্রসনন বা ড্যানিয়েল ক্রেগ— যতজনই বন্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন না কেন, সেরা বন্ডের শিরোপা সব সময়ে কনরির জন্যই বরাদ্দ থেকেছে। কেন? তিনি বন্ডের যে ক্যারেক্টার স্কেচ জনমানসে তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার থেকে আর কেউ বেরোতে পারেননি। ‘ডক্টর নো’র প্রথম দৃশ্যটা— জুয়ার টেবলে বসে ঠোঁটের বাঁ দিকে সিগারেট চেপে, উল্টো দিকের সুন্দরীর চোখে চোখ রেখে সংলাপ বলার স্টাইলেই তো জনতা কাত। স্টাইল কি শুধু একটা? ফ্লেমিংয়ের বইয়ের পাতা থেকে বন্ডকে আরও ক্ষুরধার, আরও স্মার্ট করেছিলেন শন। গালে টোল ফেলে যখন বলতেন, ‘মাই নেম ইজ় বন্ড, জেমস বন্ড’ বা ‘ভডকা মার্টিনি, শেকেন নট স্টারড’— সেই স্যোয়াগ উপেক্ষা করে কার সাধ্য! প্রতিদ্বন্দ্বী রজার মুরের কথায়, ‘‘বন্ড একজনই ছিলেন, শন কনরি। আমরা তো শুধু অভিনয় করতাম।’’

শনের সেক্স অ্যাপিল আর এলিগ্যান্সকে সুচারু ভাবে ব্যবহার করেছিলেন নির্মাতারা। যে কারণে বন্ড গার্লদের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলো এত আলোচিত। ‘ডক্টর নো’ ছবিতে অর্সুলা আন্দ্রেসের সমুদ্র থেকে উঠে আসার দৃশ্য আজও ‘কপিবুক শট’। বন্ড ছবি মানেই উদ্দাম প্রেম। কখনও অর্সুলা, কখনও ড্যানিয়েলা বিয়াঙ্কে, অনর ব্ল্যাকম্যান, ক্লডিয়া ওজ়ে— বন্ড গার্লদের সঙ্গে শনের রোম্যান্টিক দৃশ্য শুধু মিঠে কথার মোড়কে আটকে ছিল না, যৌনতার মাত্রাও তাতে ভরপুর ছিল। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে বন্ড মুভি একপ্রকার ‘নিষিদ্ধ’ ছিল, বিশেষত ছোটদের কাছে। কিন্তু তাতে কি বন্ডের ক্যারিশমা আটকানো যায়! ‘থান্ডারবল’ ছবিতে বিকিনি পরিহিতা ক্লডিয়ার পা থেকে কাঁটা বার করার দৃশ্যে, যৌনতা আর আবেগ দুই-ই সমান। তবে বন্ড মুভির প্রেমের দৃশ্য নিয়ে বিশুদ্ধবাদীরা আপত্তি তোলে। ‘জোর খাটানো’র যে কৌশল দেখানো হয়েছে ছবিগুলোয়, তা আজকের দিনে সমালোচকের আতশকাচের তলায় পড়তই।

বন্ড গার্লদের সঙ্গে শনের সম্পর্ক কি শুধুই পর্দায় আটকে ছিল? ষাটের দশকেও বিপণন কৌশল ছিল দেখার মতো। শনের সঙ্গে তাঁর অভিনেত্রীদের ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ খুব যত্ন করে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হত। কোনও বন্ড গার্লের সঙ্গে শনের সম্পর্কে গভীরতা থাকুক বা না থাকুক, বহু নারী এসেছেন তাঁর জীবনে। ১৯৬২ সালে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী ডায়ান সিলেন্টোকে। ’৭৩-এ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। বিয়ের আগে, বিবাহিত থাকাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে অন্য নারীর সঙ্গে জড়িয়েছেন কনরি। দ্বিতীয় বিয়ে মিশেলিন রকব্রুনের সঙ্গে, যা আমৃত্যু টিকেছিল। তবে গায়িকা লেনসি ডি পলের সঙ্গে উদ্দাম প্রেম বিয়ে ভাঙার পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বইকি!

শন কনরি কিন্তু নিজেকে শুধু বন্ড অভিনেতা হিসেবে দর্শাতে চাইতেন না। উল্টে বলতেন, ‘‘বন্ডকে আমি সহ্য করতে পারি না।’’ যে কারণে ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার’-এর ১২ বছর বাদে ফের বন্ড চরিত্র করেছিলেন ‘নেভার সে নেভার এগেন’ ছবিতে। ততদিনে বয়স আর মেদ ছাপ ফেলেছে চেহারায়। এ ছবির নাম তাঁর স্ত্রীর দেওয়া। কারণ শন ঘোষণা করেছিলেন, আর কোনও দিন বন্ডের চরিত্র করবেন না। কিন্তু স্পাই এজেন্ট তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাই আজও সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তিনিই একমেবাদ্বিতীয়ম, বন্ড, জেমস বন্ড।

অন্য বিষয়গুলি:

Sean Connery James Bond Ian Fleming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy