—ফাইল চিত্র।
পদ্মিনী, বৈজয়ন্তীমালা আর ওয়াহিদা রহমান। তিন দক্ষিণী অভিনেত্রীর ধ্রুপদ নৃত্যকলায় প্রত্যক্ষ ভাবে লালিত ছিল সরোজ খানের ঘরানা। প্রথম দু’জনের দেহতরঙ্গে অজন্তা-ইলোরার আবেশ। ওয়াহিদা অভিনয় ও অঙ্গসঞ্চালনে এই শারীরিকতা গ্রেসফুলি ব্যবহার করতেন। স্বামী ও ডান্স ডিরেক্টর বি সোহনলালের টিমে কাজ করার সময়ে এই তিন নক্ষত্রের কাছাকাছি এসেছিলেন সরোজ। তাঁদের শিখিয়েছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে শিখেওছিলেন। একক ভাবে ডান্স ডিপার্টমেন্ট-এর দায়িত্ব পেতেই, এই সূক্ষ্ম শৃঙ্গার এবং মধুর ‘গ্রেস’-কে একসঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন সরোজ খান। পর্দায় এবং জনমানসে তার এতটাই প্রভাব পড়েছিল যে, জনপ্রিয়তম পুরস্কার কর্তৃপক্ষ, পুরস্কার শুরুর ৩৪ বছর পর, কোরিয়োগ্রাফি বিভাগকে সম্মাননার আওতায় এনেছিলেন। তাঁকে ‘মাদার অফ ইন্ডিয়ান কোরিয়োগ্রাফি’ বলার একটা কারণ এটাও।
১৯৮৮-এর ‘তেজ়াব’-এ সেই ‘এক-দো-তিন’-এর আগেই তিনি আইকন। বলিউডকে সংজ্ঞায়িত করে নাচ আর গান। ষাটের দশকে ছিল শাম্মির রক অ্যান্ড রোল, হেলেনের ক্লাব-ডান্স। পরে বিগ বি-র স্টেপ টুগেদার স্টেপস, ধর্মেন্দ্রের জাঠ স্টেপস। নিন্দুকরা বলত, সত্তরের এই ‘নাচ-হীন’তার কারণেই মিঠুন-গোবিন্দার ডিস্কো ডান্স তুফান তুলেছিল। এই সময়ে হিন্দি ছবিতে নাচের ধারাটাই পাল্টে দেন সরোজ। ডিস্কো স্টেশন থেকে পৌঁছে দেন ক্লাসিকাল ইন্ডিয়ান স্বর্গে। এ সময়ে শ্রীদেবীর সুপারস্টারের খেতাব পাওয়ায় সরোজ খানের নাচের ভূমিকা অনেকখানি।
শ্রীদেবীকে ‘মেরি বচ্চি’ বলতেন সরোজ। বলতেন শরীরের প্রত্যঙ্গ, নয়নতারা তো বটেই, চোখের পাতাকেও ‘ইমোট’ করাতে পারে মেয়েটা। তাই মুহূর্তে তাঁকে নাগিনী বা ময়ূরীতে পরিণত করতে পেরেছেন। ওয়াহিদার ‘স্নেক ডান্স’-এর সঙ্গে বেলি ডান্স জুড়ে তৈরি করেছিলেন ‘ম্যায় নাগিন তু সপেরা’-র ভানুমতী। ‘মোরনি বাগা মা’-তে প্রাদেশিক পুতুল নাচের আঙ্গিকে রেখেছিলেন মুদ্রার অভিনব ব্যবহার। ‘কাটে নেহি কাটতে’-এ শ্রী-র লাবণ্যের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহারে সরোজ তৈরি করেছিলেন নিউ এজ সেন্সুয়ালিটি।
শ্রীদেবী মনে করেছিলেন, ‘হাওয়া হাওয়াই’-তে তাঁর যে স্টেপগুলো প্রাপ্য ছিল, সেগুলি তুলে রেখেছিলেন সরোজ। ‘এক দো তিন’-এ সেগুলোই মাধুরীকে দিয়েছিলেন। এই ধারণা থেকেই সরোজ-শ্রী-র সম্পর্কে তিক্ততা। আসলে সরোজ বিভঙ্গে ও কটাক্ষে পর্দায় যে এফেক্ট আনতে চাইতেন, তার জন্য সেরা বাজি ছিলেন মাধুরী দীক্ষিতই। সরোজের স্টেপে শ্রী মেশাতেন তাঁর চাইল্ড উয়োম্যান ইমেজের দুষ্টুমি। সরোজের দেখানো এক্সপ্রেশন একেবারে তাঁর গুরুর মনের মতো ফোটাতেন মাধুরী। তাতে থাকত মাধুরীর বিখ্যাত ঊর্বশী-অ্যাপিলের জাদু। তৈরি হত ম্যাজিক।
উদাহরণ ‘খল নায়ক’-এর ইলা অরুণের গানটি। কথায় আপত্তিকর ইঙ্গিত। সরোজ এমন অ্যাঙ্গল ও স্টেপ নির্বাচন করেছেন, যেখানে মাধুরী আকাঙ্ক্ষিত ও সহজলভ্যতার সীমারেখা অতিক্রম করবেন না। ক্যামেরার দিকে সোজাসুজি কম তাকিয়েছেন। যে মুহূর্তে মাধুরীর মুখ দেখা গেল, রূপৈশ্বর্যে যেন গানের পাপবোধ ধুয়ে গেল। আশ্চর্য ব্যালান্স করেছিলেন সরোজ। জিতেছিলেন পুরস্কার। তাঁর কথায় এই গানের চেয়েও অনেক বেশি ইরোটিক ছিল ‘অনজাম’ ছবির ‘চন্নে কে খেত মে’। সরোজের মুনশিয়ানায় কথার ইশারা ছাপিয়ে আজও বেঁচে মাধুরীর মুদ্রা।
দুই নায়িকার কাকে কোন অভিব্যক্তি, দেহভঙ্গিমা মানাবে বিলক্ষণ বুঝতেন সরোজ। ‘মেরে হাতো মে নৌ নৌ চুড়িয়া’-র ‘কাল্ট’ কব্জির তাল শ্রীদেবীর আর ‘ধকধক’-এর দেহের উপরাংশের অসাধারণ ছন্দ মাধুরীর। ‘বাজ়িগর ও’-র হাত-পায়ের কোঅর্ডিনেশন রাখা ছিল কাজলের লাস্যের জন্য। অদলবদল করে দিলে কি ইতিহাস হত?
করিনা লিখেছেন, চোখ দিয়ে হাসতে শিখিয়েছেন মাস্টারজি। বলেছেন, অভিনয় শেখার জন্যও মা-দিদিরা তাঁকে মাস্টারজির কাছে এক্সপ্রেশনের পাঠ নিতে বলতেন। সঞ্জয়, সানির মতো হিরোদের জন্য সরোজ রাখতেন বেসিক স্টেপস।
শুধু কি নায়িকা? কত সাধারণ্যার প্রাণেও রং ভরেছেন। সরোজ খানের সঙ্গে মেয়েদেরও খানিকটা অস্তিত্ব বুঝি কোথায় হারিয়ে গেল। শুধু মাধুরী নয়, মাস্টারজি নারীসত্তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা মনকে ‘মোহিনী’, ‘মোহিনী’ বলে ডাক দিতেন যেন! খুদা গওয়া...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy