‘যাকে দেখলাম, সে কে?’
বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের সমান্তরাল দু’টি রেখা কোথায় গিয়ে মিশে যায়? মনোবিদ্যার ক্লাসের বাইরে এই প্রশ্নটা খুব নতুন করে জাঁকিয়ে বসেছিল তিন বছর আগের একটা শীতের বিকেলে। আমি পেশায় মনোবিদ। আবার ভূতের ছবি, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার দেখতেও ভালবাসি। যদিও নিজে কখনও ভূতে বিশ্বাস করিনি। আমার পড়াশোনা, পেশা আমাকে তা বিশ্বাস করার কথা বলে না। কিন্তু ২০১৮-র সেই বিকেলে যা দেখেছিলাম, তা আজও মনে গেঁথে আছে। ঠিক যে ভাবে কোনও ছবির একটা দৃশ্য মনে থেকে যায়। খানিক স্পষ্ট, আবার খানিক আবছা।
বাতাসে তখন আলগা শীত। দিনের আলো মিলিয়ে যাচ্ছিল বিকেলের নরম আভায়। আমি অভিনয়ের জন্য তৈরি হয়ে মেক আপ রুম থেকে বেরিয়েছি সবে। কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন এক সহ-পরিচালক। তাঁকে ডেকে কথা বলেছিলাম। কিন্তু কোনও জবাব না দিয়েই তিনি চলে গিয়েছিলেন আচমকা। সত্যি বলতে, বেশ অবাকই হয়েছিলাম। ওই ব্যক্তিকে বহু দিন ধরে চিনি। কখনও এমন অদ্ভুত আচরণ করতে তো দেখিনি! সেই মুহূর্তে এত কিছু ভাবার মতো সময় হাতে ছিল না। তড়িঘড়ি ছুটলাম শ্যুটিং ফ্লোরের দিকে। কিন্তু সেখানে পা দিয়েই থমকে গেলাম! যা দেখলাম, তা যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না! যে সহ-পরিচালককে আমি মেক আপ রুমের সামনে দেখেছিলাম, ইতিমধ্যেই তিনি শ্যুটিং ফ্লোরে দাঁড়িয়ে!
ফ্লোরে আমার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিলেন ওই সহযোগী পরিচালক। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, “আমার সঙ্গে তখন কথা বললে না কেন?” তিনি দেখি পাল্টা প্রশ্ন করছেন— “কখন?”। মেক আপ রুমের সামনে আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলাম। এ বার তিনি হতবাক। বললেন, “আমি তো মেক আপ রুমের সামনে ছিলামই না! আপনি কার সঙ্গে কথা বললেন?”
আর কিছু বলতে পারিনি। শুধু মনে আছে, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। শট দিতে দিতেই নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম। আমি কি তবে ভুল দেখেছিলাম? যদি তা না হয়, তবে যাকে দেখলাম, সে কে? বহু চেষ্টা করেও উত্তর খুঁজে পাইনি। সব যুক্তি-তর্কও পরাস্ত হয়েছিল। এর পরে অনেকগুলো দিন কেটেছে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কিন্তু সেই বিকেলের কথা আজও ভুলিনি। যাকে দেখেছিলাম, সে কে ছিল? কোনও এক শীতের বিকেলে আবার এই প্রশ্ন করব নিজেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy