আলম-নুর।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার খবরটা অভিনেতাদের সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেওয়াই ভাল। তাই ন’বছরের নুর ইসলামের দাদুর মোবাইলে ফোন করেছিলেন পরিচালক মানস মুকুল পাল। পরিচালককে অবাক করে দিয়ে এ বছরের শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া নুর বলেছিল, ‘‘ও... কাকু, তুমি পরে ফোন কোরো ’খন। আমি এখন খেলতিচি।’’
জাতীয় পুরস্কারেও এতটাই নিষ্পৃহ অভিনেতা! ছবির চরিত্রও যে অনেকটা তারই মতো। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তাল নবমী’ গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি ছবি ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে থাকা দু’ভাইয়ের সম্পর্কের কাহিনি। অভাব অনটন প্রতিদিন ক্ষতবিক্ষত করলেও যে সম্পর্কে এতটুকুও টোল পড়ে না। এ সময়ের উপযোগী করতে ছবির চিত্রনাট্যে অল্প কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে।
ছবির বাজেট নয়। আসল চ্যালেঞ্জটা ছিল কাস্টিংয়ে। অভিনয়ে অভ্যস্ত কাউকে নিতে চাননি পরিচালক। চেয়েছিলেন যে জায়গার গল্প, সেখানকার ভাষা যেন ছবিতে নিখুঁত ধরা পড়ে। তাই বসিরহাট, দেগঙ্গা, বেড়াচাঁপা ঘুরেছেন শিশুশিল্পী খুঁজতে। বলা বাহুল্য সে কাজটা মসৃণ হয়নি। অনেকে ছেলেধরা সন্দেহ করত। শেষমেশ ছোট ভাইয়ের চরিত্রের জন্য নুরের সন্ধান মেলে বেলপুর গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাড়ির কেউ কস্মিনকালে অভিনয়ের চৌহদ্দি মাড়াননি। সকলেই যুক্ত চাষবাসের সঙ্গে। অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে ছোট্ট ছেলেটা উল্টে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘‘পসেনজিৎ দ্যাখপে আমাকে?’’
আরও পড়ুন: গরিব ঘরের আইএএস খুঁজে ফিরছেন দুর্নীতি
নুরের বড় দাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিউল আলম। সামিউলের বাড়ির অবস্থাও একই রকম। পরিচালক প্রায় আট মাস বারাসতে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিলেন দুই শিশুশিল্পীকে। আপাত দৃষ্টিতে জাতীয় পুরস্কার তেমন কোনও পরিবর্তন করতে পারেনি সামিউলের জীবনেও। শুধু দু’টো পরিবর্তন হয়েছে। ‘‘স্কুলে স্যাররা এখন আর মারে না। মারতি গেলি বন্ধুরা চেঁচায়, স্যার আলম বাংলা বইয়ের নায়ক! তবে চুল কাটতি গেলি হেবি সমস্যা! সবাই তাকাই তাকাই দ্যাখবে... ফোনে ফটো তোলাবে। ধুর,’’ কথায় গ্রাম্য টান বেড়াচাঁপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস এইটের ছাত্র আলমের কথায়।
দেশ-বিদেশের নানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে ইন্ডিয়ান প্যানোরামা পর্যন্ত নির্বাচিত হলেও এখনও বড় পরদায় বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়নি ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। সামনের মাসে রিলিজ করবে কলকাতায়। কিন্তু বাংলা ছবির ব্যবসা তো খুব একটা ভাল চলছে না। ভয় নেই সেটা নিয়ে? ‘‘আমি তো পয়সার কথা ভেবে ছবিটা করতে নামিনি। সকলের ভাল লাগার মতো একটা ছবি করতে চেয়েছিলাম। আর আমার প্রযোজক অভিজিৎ সাহাও কখনও টাকার প্রসঙ্গ তোলেননি,’’ ছবির শেষ মুহূর্তের কিছু কাজে মুম্বইয়ে ব্যস্ত পরিচালক ফোনে জানালেন আনন্দ প্লাসকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy