Sadashiv Amrapurkar was a versatile actor of Bollywood dgtl
Sadashiv Amrapurkar
অটোচালকের ছেলে সদাশিব ছিলেন দুর্দান্ত ক্রিকেটার, পর্দার এই খলনায়ক প্রহৃত হন বাস্তবেও
হাজারো শাসন, গায়ে হাত তোলা— কোনও কিছুতেই বন্ধ করা যায়নি ছেলের উৎসাহ। কর্মহীন অবস্থাতেও বাবার চোখে চোখ রেখে ছেলে জানালেন, তিনি অভিনেতা-ই হবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ১৪:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
অটোচালক বাবা কিছুতেই ছেলের অভিনয়ের নেশা মেনে নিতে পারতেন না। হাজারো শাসন, গায়ে হাত তোলা— কোনও কিছুতেই বন্ধ করা যায়নি ছেলের উৎসাহ। কর্মহীন অবস্থাতেও বাবার চোখে চোখ রেখে ছেলে জানালেন, তিনি অভিনেতা-ই হবেন। সেই দুঃসাহসী এবং আপাত দুর্বিনীত ছেলেই পরে বলিউডের অন্যতম সেরা খলনায়ক, সদাশিব অমরাপুরকর।
০২২৪
সদাশিবের প্রকৃত নাম অবশ্য গণেশকুমার নালাওয়াড়ে। জন্ম ১৯৫০ সালের ১১ মে, মহারাষ্ট্রের নাসিকের আহমদনগরে। স্কুলজীবনে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন সদাশিব। ছিলেন দুর্দান্ত ক্রিকেটার।
০৩২৪
স্কুল কলেজে অল্পবিস্তর অভিনয় করেছেন সদাশিব। কিন্তু পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সময় থেকেই তাঁর হৃদয় জুড়ে বিরাজ করতে থাকল শুধুই অভিনয়। যুব উৎসবে তিনি একটি নাটকে এক খুনির ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম পুরস্কার পান।
০৪২৪
ধীরে ধীরে মঞ্চে অভিনয় আরও বাড়িয়ে দিলেন তিনি। থিয়েটার দুনিয়ায় তাঁর নতুন নাম হল সদাশিব অমরাপুরকর। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল সংসারে। তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল অল্প বয়সেই। কিন্তু তখনও পর্যন্ত কোনও উপার্জন ছিল না সদাশিবের। নাটকে অভিনয় করে শখ পূরণ হলেও পকেট ভরছিল না।
০৫২৪
একান্নবর্তী পরিবারে তাঁর বাবা তখনও উপার্জনশীল ছিলেন। স্ত্রীও চাকরি করতেন বিমা সংস্থায়। ফলে চাকরি করার কোনও গরজই ছিল না সদাশিবের। তিনি তখন বুঁদ অভিনয়ের নেশাতেই। এ নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে একাধিক মতবিরোধ হলেও সদাশিব অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি।
০৬২৪
ক্রমে নাটকে অভিনয় করে পারিশ্রমিকও পেতে লাগলেন সদাশিব। আরও বেশি কাজ করার জন্য তিনি পাড়ি দিলেন মুম্বই। সেখানে তিনি কাজ করলেন প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব বিজয় তেন্ডুলকরের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকেই প্রথম ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান সদাশিব।
০৭২৪
বিজয় তেন্ডুলকরের সূত্রে গোবিন্দ নিহালনির সঙ্গে আলাপ হয় সদাশিবের। তিনি তাঁর ‘অর্ধ সত্য’ ছবিতে সদাশিবকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল রামা শেট্টী। ছবিতে তিনি স্ক্রিন শেয়ার করেন ওম পুরী, অমরীশ পুরীর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে।
০৮২৪
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন সদাশিব। তাঁর অভিনয়ের তারিফ করেছিলেন ওম পুরীও। ‘অর্ধ সত্য’ ছবির জন্য সদাশিব শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হন। প্রথম ছবিতেই নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পরে সদাশিবের আর অপেক্ষা করতে হয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগের জন্য।
০৯২৪
‘তেরি মেহেরবানিয়াঁ’, ‘আখরি রাস্তা’-র মতো সুপারহিট ছবিতে পর পর অভিনয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা মজবুত করে নেন সদাশিব। সংলাপ বলার কায়দা এবং শরীরী ভাষাতেই তিনি বাজিমাত করতেন ছবির চিত্রনাট্যে। ছবির সাফল্যের পিছনে খলনায়কও যে বড় ভূমিকা পালন করেন, দেখিয়ে দিয়েছিলেন সদাশিব।
১০২৪
আশির দশকের শেষ দিকে ‘হুকুমত’ ছবিতে ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেন সদাশিব অমরাপুরকরের সঙ্গে। ছবিটি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। সে সময় ধর্মেন্দ্রর কেরিয়ারে কিছুটা ভাটার টান চলছিল। বেশ কিছু ফ্লপের পরে সাফল্যের মুখ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। সে বছর উপার্জনের দিকে দিক দিয়ে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল ‘হুকুমত’।
১১২৪
এই ছবির পর থেকে ধর্মেন্দ্রর বিশ্বাস জন্মে যায়, সদাশিবের সঙ্গে অভিনয় করলে তাঁর ছবি বক্স অফিসে সুপারহিট হবে। পরবর্তী সময়ে দু’জনে একসঙ্গে মোট ১১টি ছবিতে অভিনয় করেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কোহরাম’ এবং ‘দুশমন দেবতা’।
১২২৪
বড় পর্দার পাশাপাশি তিনি সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দাতেও। শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় দূরদর্শনে ‘ভারত এক খোঁজ’ ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘জ্যোতি রাও ফুলে’-এর চরিত্রে। আরও একটি টেলিভিশন সিরিজ ‘রাজ সে স্বরাজ’-এ বাল গঙ্গাধর তিলকের ভূমিকাতেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।
১৩২৪
সদাশিব অমরাপুরকরের কেরিয়ারের যাত্রাপথে মাইলফলক আইকনিক ছবি ‘সড়ক’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯১ সালে। ছবিতে ‘মহারানি’-র চরিত্রে অভিনেতা ঠিক করতে অনেক দিন সময় লেগে গিয়েছিল পরিচালক মহেশ ভট্টের।
১৪২৪
চিত্রনাট্য অনুযায়ী মহারানি ছিলেন একজন রূপান্তরকামী যাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলত দেহব্যবসা। এই নেগেটিভ ভূমিকায় অভিনয় করে সদাশিব অমরাপুরকর নিজের কেরিয়ারকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। সঞ্জয় দত্ত, পূজা ভট্ট অভিনীত ‘সড়ক’ সুপারডুপার হিট হয়। সেইসঙ্গে বলিউডের খলনায়ক-মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন সদাশিব অমরাপুরকর।
১৫২৪
শোনা যায়, সঞ্জয় দত্ত নাকি পরামর্শ দিয়েছিলেন, মহারানি চরিত্রটি কেমন হবে। কিন্তু পরে এক সাক্ষাৎকারে সদাশিব নিজে বলেছিলেন, তিনি অভিনেতাজীবনের শুরুর দিকে নাটকে একটি নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার আদলেই পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন ‘মহারানি’-কে।
১৬২৪
সদাশিব ছাড়াও অনুপম খের ‘মস্ত কলন্দর’ এবং শক্তি কপূর ‘বীরু দাদা’ ছবিতে রূপান্তরকামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সবাইকে ছাপিয়ে যান সদাশিব অমরাপুরকর। তাঁর অভিনীত ‘মহারানি’ চরিত্রটি এতটাই প্রভাব ফেলেছিল, ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কারে ‘শ্রেষ্ঠ খলনায়ক’ বলে একটি আলাদা বিভাগ তৈরি করা হয়। প্রথম বছর পুরস্কৃত হন সদাশিব অমরাপুরকর-ই।
১৭২৪
সে বছর এই বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ‘সওদাগর’ ছবির জন্য অমরীশ পুরী, ‘হম’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ড্যানি এবং ‘হীনা’ ছবির জন্য রাজা মুরাদ। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে পুরস্কার ওঠে মাহারানিরূপী সদাশিব অমরাপুরকরের হাতেই। কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পরে সদাশিব অমরাপুরকর কৌতুকাভিনেতা হিসেবেও কাজ শুরু করেন।
১৮২৪
‘ইশক’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’, ‘হম হ্যায় কমাল’-এর মতো ছবিতে খলনায়কের চেনা ছবি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সদাশিব। পাশাপাশি ‘আঁখে’, ‘মোহরা’, ‘খামোশ’ ছবিতেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। তবে ২০০০ সাল নাগাদ তাঁর কেরিয়ার কিছুটা পড়ন্ত বেলায় পাড়ি দেয়।
১৯২৪
শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বলিউডে কাজ করা কমিয়ে দেন সদাশিব অমরাপুরকর। ২০১০-এ তিনি সুযোগ পান মণিরত্নমের ছবি ‘রাবণ’-এ অভিনয়ের। তাঁর শরীর সে সময় ভাল ছিল না। তার পরেও সদাশিব রাজি হন সেই ছবিতে অভিনয় করার। টানা তিন মাস ঘন জঙ্গলে শুটিং চলেছিল।
২০২৪
কিন্তু সিনেমা মুক্তির পরে দেখা গেল, ছবিটা থেকে তাঁর অভিনয় পুরোটাই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে বাদ পড়ে পদ্মিনী কোলাপুরের বোন তেজস্বিনীর অভিনয়ও। একটি দৃশ্যে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের জন্য দেখা গিয়েছিল তেজস্বিনীকে। গুঞ্জন, অভিষেক-ঐশ্বর্যার উপর থেকে দর্শকদের নজর যাতে একটুও অন্য দিকে সরে না যায়, তার জন্য পরিচালক নির্দয় ভাবে অন্যদের অভিনয়ে কাঁচি চালিয়েছিলেন।
২১২৪
অভিনেতা পরিচয়ের বাইরেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সদাশিব। পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১৩ সালে এক হোলি পার্টিতে জলের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ক্ষরাপ্রবণ মহারাষ্ট্রে জলের এই ব্যবহার অপচয় বলে মনে হয়েছিল তাঁর। এই প্রতিবাদের মাসুলস্বরূপ তিনি জনরোষের শিকার হন। হিন্দি ছবির ডাকসাইটে এই খলনায়ক রীতিমতো প্রহৃত হন।
২২২৪
২০১৩ সালে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বম্বে টকিজ’ ছবিতে শেষ বার দেখা যায় সদাশিব অমরাপুরকরকে। ছোট ক্যামিয়ো ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মেয়ে পরিচালক রীমা অমরাপুরকরের কথায় এই ছবিতে অভিনয়ে রাজি হন তিনি।
২৩২৪
দীর্ঘ দিন ফুসফুসের সংক্রমণজনিত অসুখে ভোগার পরে ২০১৪-র নভেম্বর মাসে প্রয়াত হন অভিনেতা সদাশিব অমরাপুরকর। তাঁর ইচ্ছে ছিল, শৈশব যে গ্রামে কেটেছে, সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হোক। সেটাই করা হয়েছিল। তার আগে মুম্বইয়ে তাঁর নিথর দেহ রাখা ছিল শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য। কিন্তু পরিচালক অনিল শর্মা, গোবিন্দ নিহালনি ও অভিনেতা রাজা মুরাদ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির কাউকে সেখানে দেখা যায়নি তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে।
২৪২৪
স্ত্রী সুনন্দা, তিন মেয়ে এবং অসংখ্য ভক্তকে রেখে গিয়েছেন সদাশিব অমরাপুরকর। পর্দায় যাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়েই বলিউডের নায়করা দীর্ঘদিন নায়কোচিত হয়ে উঠতে পেরেছেন।