Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

বাবুল বলেন, বাংলার মানুষের ‘ঐতিহাসিক ভুল’, রূপা বললেন, নেতৃত্বকে ভাবতে হবে

নির্বাচনে জেতার পরে দেবকে নিজের কেন্দ্রে যেতে দেখিনি: রূপা

বাবুল সুপ্রিয় এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

বাবুল সুপ্রিয় এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ১৮:৪১
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় নেটমাধ্যমে বলেছিলেন, পরে বাংলার মানুষ বিজেপি-কে ভোট না দিয়ে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছে। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা দেব না। এবং জনগণের এই রায়কে সম্মান করছি, এমনটাও বলব না। বিজেপি-কে একবার সুযোগ না দিয়ে.. বাংলার মানুষ ঐতিহাসিক ভুল করেছেন’। বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য সরাসরি সে পথে হাঁটলেন না। বরং তিনি বললেন, নেতৃত্বকে ভাবতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাবুল এবার টালিগঞ্জ থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। যদিও তার আগে দু’বার তিনি আসনসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। পক্ষান্তরে, রাজ্যসভার সাংসদ রূপা একবার বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। রাজনীতির ময়দানে পা রাখার পরে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘ভদ্রলোকের পার্টি দিয়ে বাংলা চলবে না। বিজেপি এখনও মানুষকে ভদ্রভাবে উত্তর দিচ্ছে। কেন যে দিচ্ছে জানি না! এরা চায় না মানুষ বাঁচুক! বিজেপি বাংলায় হেরেছে, কারণ তারা মানুষকে বাঁচাতে চায়।’’ আর মূল কারণ— ‘‘এখানে মানুষ চোখ বন্ধ রেখেছেন।’’

বাবুলের মতো বাংলার মানুষ ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছে বলে রূপা মনে করেননি। রূপা বরং কৃতজ্ঞ সেই মানুষদের প্রতি, যাঁরা এর মধ্যেও বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে, খুবই অল্পের জন্য তৃণমূল প্রার্থী জিতে বেরিয়েছেন। তার কারণ, মানুষ ভোট দিয়েছেন।’’ ফেসবুকের ভিডিয়োয় রূপা বলেছেন, ‘‘বিজেপি বাংলায় হেরেছে কারণ তারা মানুষকে বাঁচাতে চায়।’’ তবে ভিডিয়োটির উপরে তিনি লিখে দিয়েছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত’। সেই মতামত জানাতে গিয়ে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘বিজেপি যদি মানুষের কাছে ঠিক মতো বার্তা পৌঁছে দিতে না পারে, তা হলে দলের নেতৃত্বকে সে বিষয়ে ভাবতে হবে।’’ তাঁর এই কথা থেকে স্পষ্ট, দলের পরাজয়ের দায়ভার একেবারে ঝেড়ে ফেলেননি তিনি। প্রসঙ্গত, গত তিন বছর রূপা রাজ্য বিজেপি-র কোনও দায়িত্বে নেই।

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

রূপা বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে ঢোকার পরে আমি শুনেছিলাম বাংলায় নাকি ‘ভোট করাতে হয়’। নির্বাচনের ফলাফল দেখে একটা কথা মনে হচ্ছে—জাতীয় নির্বাচন কমিশন বাংলার ভোট-প্রকৃতি নিয়ে ততটাও ওয়াকিবহাল নয়। বিভিন্ন জায়গায় নিজে কথা বলে জেনেছি, ভিভি প্যাটের গণনায় গোলমাল হয়েছে। প্রথম দিকে দেখা যাচ্ছিল তৃণমূল জিতছে। কিন্তু ব্যবধানে খুব বেশি নয়। তার পরে আচমকাই বড় অঙ্কের ভোট পেয়ে যায় তারা।’’

রূপার মতে, নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনই তৃণমূলের পাল্লা ভারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়ে যায়। বিজেপি-র কর্মীরা মার খেতে শুরু করেন।

ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) কথা উল্লেখ করেছে রূপা জানান, তিনি শুনেছেন, পিকে প্রচুর পয়সা খরচ করে নতুন প্রজন্মকে দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে নানা ভাবে প্রচার চালিয়েছেন। পার্কে গিয়ে গিয়ে যুগলদের বলা হয়েছে, এই যে আপনারা প্রেম করছেন, বিজেপি এলে কিন্তু করতে পারবেন না।কোথাও আবার বলা হয়েছে, গরুর মাংস নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।রূপার প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় এখনও পর্যন্ত কোনও বিজেপি নেতা নিজের মুখে এমন কিছু বলেছেন? সবেতেই এই শিক্ষিত সমাজ উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে আনে বলে রূপার অভিযোগ।তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কই গোয়ার কথা তো কেউ বলে না! গোয়া তো বিজেপি-র রাজ্য। সেখানে এখনও পর্যন্ত গরুর মাংস নিষিদ্ধ হয়নি। হবেও না কোনও দিন।’’

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

২০১৬ সালের ঘটনার কথা টেনে এনে রূপা বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন যখন আমাকে মেরে চোখের একটা অংশ নষ্ট করে দিল, সে দিনও একটা কথা বলেননি এই শিক্ষিতরা।ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সবাই চুপ কেন! এখানে যেন মানুষ চোখে পর্দা পরে রয়েছেন।’’ রূপার দাবি, তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে, বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে বলে একাধিক মানুষকে পিটিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হচ্ছে। তাঁর যুক্তি, ‘‘এই সন্ত্রাসের কারণ, সামনে পুরসভা ভোট। মার খাওয়ার পরে মানুষ ভয় পেয়ে আর ঘর থেকেই বেরতে চাইবেন না। কিন্তু এর ফল কি ভাল হবে?’’ বিজেপি-র পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেরূপা বলেছেন, বিজেপি ‘বাংলায় কায়দার রাজনীতি’ করতে পারেনি বলে হেরেছে।

গোটা বক্তব্যে একাধিক বার শিক্ষিত সমাজের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে রূপা বলেছেন, ‘‘যাঁরা ফেসবুকে বড় বড় বুলি কপচান, তাঁরা আসলে আইন সম্পর্কে পড়াশোনাই করেননি। সেই কারণেই হঠাৎ কৃষক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দিলেন।১০০ পাতার সেই আইনের বইয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে পারতেন। তা হলে কৃষক আইন নিয়ে এত বিরোধী স্বর উঠত না। বাংলার মানুষ আসলে কোনও কারণ ছাড়াই আন্দোলন করেন।’’

ভোটে তারকাদের লড়া নিয়েও অভিমত প্রকাশ করেছেন এই তারকা। নির্বাচনের আগে থেকেই বাংলায় তারকা প্রার্থী নিয়ে সমালোচনা চলছে। সেই বিতর্কে রূপার মন্তব্য, ‘‘কই দেবদূতকে (অভিনেতা দেবদূত ঘোষ) তো গালিগালাজ করা হচ্ছে না। তিনি তো সিপিএম-এর তারকা প্রার্থী। মহিলা তারকা প্রার্থী হলেই কটূক্তি করতে হবে? ব্যক্তিগত মানুষের দায় ব্যক্তিগত মানুষকে নিতে দিন। তারকা বলে আলাদা করে দেখার দরকার নেই।’’

তবে রূপা এ-ও মেনে নিয়েছেন যে, তারকা প্রার্থীরা জিতে গেলে তাঁদের আর কেন্দ্রের কোনও কাজে দেখা যায় না। উদাহরণ হিসেবে রূপা টেনে এনেছেন টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর সহকর্মী দেবের প্রসঙ্গ। রূপার কথায়, ‘‘দেবকে আমি খুবই ভালবাসি। কিন্তু তাকেও তো কখনও নিজের কেন্দ্রে যেতে দেখিনি জেতার পর থেকে। তবে কেবল তারকারা যান না, তা নয়। রাজনীতিকরাও যান না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy