প্রথম সিনেমার গানও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ঋতুর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল ‘লাল দুপট্টেওয়ালি’। এর পর কমল সদানার সঙ্গে ‘হম সব চোর হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির গানও ছিল আইকনিক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ১১:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
স্টারকিড হওয়া সত্ত্বেও অকালে হারিয়ে গিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। সেই তালিকায় অন্যতম ঋতু শিবপুরী। তাঁর বাবা ছিলেন পর্দার খলনায়ক। মাকে সকলে চেনে ‘বা’ হিসেবে। কিন্তু ‘লাল দুপট্টেওয়ালি’ ঋতুর কেরিয়ার দীর্ঘ হল না।
০২২১
ঋতুর বাবা ওম শিবপুরী বলিউডের প্রথমসারির খলনায়ক। অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খন্নার ছবিতে তিনি পরিচিত মুখ। ‘ডন’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘নসীব’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকস্মৃতিতে উজ্জ্বল।
০৩২১
ঋতুর মা সুধা শিবপুরী আইকনিক হয়ে আছেন ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ ধারাবাহিকে ‘বা’-এর চরিত্রে অভিনয় করে। ওম এবং সুধা দু’জনেই ছিলেন ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’-র পড়ুয়া। দশ বছরের প্রেমপর্বের পরে দু’জনে বাড়ির অমতে বিয়ে করেন। বাড়ির অমতের কারণ ওম ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের এবং সুধা রাজপুত বংশের।
০৪২১
ঋতুর যখন ১ বছর বয়স, কর্মসূত্রে ওম এবং সুধা পাকাপাকিভাবে মুম্বইয়ে (তখন বম্বে) থাকতে শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে ফিল্মি আবহে বড় হয়ে ওঠা ঋতু অন্য কোনও কেরিয়ারের কথা ভাবেননি পরে। তিনিও সামিল হন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেই।
০৫২১
ঋতুকে বলিউডে লঞ্চ করেছিলেন পহেলাজ নিহালনী। সে সময়কার সুপারস্টার গোবিন্দর বিপরীতে। তবে মেয়ের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি ওম। ঋতুর প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এর পর সুধা আরও বেশি করে অভিনয় করতে শুরু করেন।
০৬২১
ঋতুর প্রথম ছবি ‘আঁখেঁ’ বক্সঅফিসে সুপারডুপার হিট হয়েছিল। তাঁরা ছাড়াও ছবিতে আরও দুই নায়িকা ছিলেন। শিল্পা শিরোদকর এবং রাগেশ্বরী। তাঁদের মাঝে ঋতুও দর্শকদের নজর কাড়তে পেরেছিলেন। বলিউডের সফলতম ছবিগুলির মধ্যে ‘আঁখেঁ’ অন্যতম।
০৭২১
নয়ের দশকের গোড়ায় সে সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের কোঁকড়া চুল ট্রেন্ডি ছিল। মাধুরী, জুহি, করিশ্মা—সকলে কার্লি হেয়ারস্টাইলেই নিজেদের সাজাতে ভালবাসতেন। ঋতুর হেয়ারস্টাইলও ছিল সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই।
০৮২১
প্রথম সিনেমার গানও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ঋতুর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল ‘লাল দুপট্টেওয়ালি’। এর পর কমল সদানার সঙ্গে ‘হম সব চোর হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির গানও ছিল আইকনিক।
০৯২১
শোনা যায়, এই ছবিতে অভিনয়ের সময় ঋতুর প্রেমে পড়েছিলেন কমল। তার আগে তাঁর সম্পর্ক ছিল রবিনা টন্ডনের সঙ্গে। ঋতুর জন্যই নাকি তিনি সরে এসেছিলেন রবিনার কাছ থেকে। পরে রবিনা অজয় দেবগণের ঘনিষ্ঠ হন।
১০২১
একে স্টারকিড, তার উপর সূত্রপাতেই জনপ্রিয়তা। ঋতুর কাছে ছবির সুযোগ আসতে দেরি হয়নি। তবে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করতেন না ঋতু। ছবি নিতেন বেছে বেছে। বাকি নায়িকা যেখানে সেকেন্ড লিডেও অভিনয় করতেন, সেখানে ঋতু চাইতেন বাছাই চরিত্র।
১১২১
ছবির পাশাপাশি সম্পর্কের কারণেও খবরে থাকতেন ঋতু। কমল সদানার পরে ফরদিন খানের সঙ্গেও তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। তবে ঋতু বারবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন বলেই ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে গুঞ্জন।
১২২১
প্রত্যাখ্যান এসেছে অভিনয়ের দিক দিয়েও। সে সময় বলিউডের বেশিরভাগ নায়ক তাঁদের কোনও না কোনও নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। ঋতু পরে অভিযোগ করেন, ছবির সুযোগ এসেও চলে গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। কারণ নায়ক হয়তো তাঁর নিজের বান্ধবীকে চাইছেন ছবিতেও।
১৩২১
পরে বার বার সাক্ষাৎকারে ঋতু আক্ষেপ করেছেন, কেন সে সময় কোনও তারকার সঙ্গে তিনি ডেট করেননি। সলমন, অক্ষয়, অজয়ের মতো কোনও তারকা যদি তাঁর বয়ফ্রেন্ড হতেন, এ ভাবে তাঁকে হারিয়ে যেতে হত না। আক্ষেপ ঋতুর।
১৪২১
একাধিকবার কাস্টিং কাউচেরও মুখোমুখি হন তিনি। অশালীন প্রস্তাবে রাজি হননি বলেও অনেক ছবির সুযোগ হাতছাড়া হয় বলে অভিযোগ এই নায়িকার। তবে এ সবের বাইরে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা তিনি করেছেন। সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ঋতু পর্দায় যথেষ্ট সাহসীও ছিলেন। পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য তাঁর এবং অক্ষয়কুমারের টপলেস ফোটোশ্যুট ছিল সেই সময়ে তীব্র বিতর্কিত ঘটনা।
১৫২১
‘লজ্জা’, ‘হদ কর দি আপনে’, ‘শক্তি দ্য পাওয়ার’-এর মতো কিছু ছবিতে ঋতুকে দেখা গিয়েছিল পার্শ্বচরিত্রে। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান তিনি। সিনেমায় সুযোগ না পেয়ে টিভিতে অভিনয়েরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও বেশি সুযোগ পাননি।
১৬২১
শেষে এমন পরিস্থিতি হয়, বড় এবং ছোট পর্দা, কোথাও কাজের সুযোগ নেই ঋতুর। কিন্তু তাঁর মা তখন টেলিভিশনের ব্যস্ত নায়িকা। অভিনয় করছেন ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ ধারাবাহিকে, ‘বা’-এর চরিত্রে। পুরনো সব কাজ ভুলে গিয়ে সুধাকে দর্শক মনে রেখেছেন এই একটিমাত্র চরিত্রের জন্য।
১৭২১
কেরিয়ার এবং সম্পর্ক, দু’ দিকে ধাক্কা খেয়ে ঋতু ঠিক করলেন তিনি বলিউড থেকে দূরে সরে যাবেন। বিয়েও করবেন ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কাউকে। সেটাই তিনি করেছিলেন। বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী হরি ভেঙ্কটকে।
১৮২১
বিয়ের পরে স্বামী এবং যমজ সন্তানের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঋতু। বহু দূরে চলে যান গ্ল্যামারদুনিয়া থেকে। বলিউডের ‘বিস্মৃত অভিনেত্রী’-দের মধ্যে আলোচিত হয় তাঁর নাম।
১৯২১
দীর্ঘ সময়ের পরে ঋতু বলিউডে কামব্যাক করেন অনিল কপূরের ছবি ‘২৪’-এ অভিনয় করে। পাশাপাশি, বেশ কিছু টিভি ধারাবাহিকেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। ‘ইস প্যায়ার কো ম্যায়ঁ ক্যায়া নাম দুঁ’ ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেছিলেন।
২০২১
অনুরাগীদের ধারণা, নিজের সিদ্ধান্তের জন্যই বলিউড থেকে দূরে সরে যান ঋতু। তাঁর কাছে ছবির সুযোগ আসা বন্ধ হয়ে যায়। নিজের কেরিয়ারের সেরা সময়ে অত্যধিক নাক উঁচু মনোভাবের মাশুল তাঁকে দিতে হয়েছিল। এ রকমই মত নায়িকার ভক্তদের।
২১২১
স্টারকিড হওয়ার জন্য জীবনের একটা মঞ্চ অবধি আসতে ঋতুর সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার পর নিজে চলার পথ মসৃণ করে নিতে পারেননি। সুপারহিট সূত্রপাতের পরে তাঁর মতো সুন্দরী নায়িকার অকালে হারিয়ে যাওয়া এখনও অবাক করে হিন্দি ছবির দর্শকদের।