ঋতাভরী চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয় ঋতাভরী চক্রবর্তীকে! সম্প্রতি মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে ‘হেমা কমিশন’ একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানকার খ্যাতনামী অভিনেত্রীরা এগিয়ে এসে নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। সেই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ঋতাভরীরও। অনেক অল্প বয়সেই টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আসেন। ছোট বয়সেই সাফল্যও পান। ঋতাভরীর ধারাবাহিক ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ এক সময় বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। ধারাবাহিকে সাফল্য মিলতেই, একেবারে বড় পর্দার নায়িকা হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। আর সেই পথেই আসে বাধা। কাজের নামে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁকে। তা-ও টলিপাড়ার এক নামী প্রযোজকের হাতে। যদিও সেই সময় বলে উঠতে পারেননি। কারণ, অভিনেত্রীর পায়ের তলার মাটি শক্ত ছিল না। কিন্তু, সেই ঘটনার কুৎসিত স্মৃতি তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে বহু দিন।
ঋতাভরী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘কেরিয়ারের শুরুর দিকে বেশ কিছু বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে। একটা মিটিং করতে যাই টলিপাড়ার এক খ্যাতনামী প্রযোজকের সঙ্গে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গায়ে হাত দেন তিনি। চেঁচিয়ে বেরিয়ে যাই সেখান থেকে। তিনি হাত ধরেছিলেন, আমার তার পর থেকে নিজেকে নোংরা লাগছিল। আমি মাকে পর্যন্ত বলতে পারিনি। খালি মনে হত, আমি ভুল করেছি। আমি কেন গেলাম মিটিংটাতে! আসলে পায়ের তলার মাটি শক্ত ছিল না, ভয়ে ছিলাম তখন। এত বড় প্রযোজক! আমি মুখ খুললে আমাকেই শেষ করে দেবেন হয়তো। আমি ওই ঘটনায় স্থাণু হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, আমি শতরূপা সান্যালের মেয়ে। অত সহজে হজম করে উঠতে পারিনি।’’
যদিও এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। নিজের জমি শক্ত করেছেন ঋতাভরী। শুধু টলিউডেই নিজেকে বেঁধে রেখেছেন, এমনটা নয়। বলিউড থেকে দক্ষিণী ছবি পর্যন্ত যাতায়াত বেড়েছে ঋতাভরীর। যদিও কাউকে কলঙ্কিত করা তাঁর উদ্দেশ্য নয় বলেই জানান অভিনেত্রী। বরং এই ধরনের প্রবণতা সমূলে যাতে উৎপাটিত হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।নায়িকা জানেন, প্রশ্ন উঠতে পারে, এত দিন পর মুখ খুললেন কেন? ঋতাভরী জানান, শহরে যখন আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে দিনের পর দিন প্রতিবাদ চলছে, সেই সময়েই এক প্রতিবাদ মিছিলে তিনি দেখতে পান ওই প্রযোজককে। তার পর আর চুপ করে থাকতে পারেননি। ঋতাভরীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর ভয়ে আছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন, আমি কী করতে চলেছি। আমি কারও নাম প্রকাশ্যে এনে বদনাম করতে চাই না। আমি চাই না, কেউ বলুক যে, ব্যক্তিগত ক্ষোভ বার করছি।’’ তবে টলিপাড়ায় হেমা কমিটির আদলে যে কমিটি তৈরি করার প্রস্তাব ঋতাভরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েছেন, তা নিয়ে আশাবদী। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁর সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেখে ফোন করে যখন সবটা জানতে চান, তাই তাঁর আস্থা রয়েছে বলেই জানিয়েছেন। পাশপাশি এ-ও জানান, টলিপাড়ার সবটাই অন্ধকার নয়। বেশ কিছু পরিচালক রয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে কাজ করে তিনি সুরক্ষিত বোধ করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন মৈনাক ভৌমিক, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তীর মতো পরিচালকেরা। ঋতাভরী আরও বলেন, ‘‘আমি দুশো শতাংশ নিশ্চিত যে রাজ, শিবুদা, মৈনাক এদের নিয়ে কখনওই কোনও হেনস্থার কথা ভবিষ্যতে শোনাও যাবে না।’’ তবে টলিপাড়ায় নায়িকাদের পণ্য হিসাবে দেখার যে চল রয়েছে, সেটাই বন্ধ হোক, চাইছেন ঋতাভরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy