RIP Irrfan: One of the Finest Indian Actors for His Versatile Acting dgtl
irrfan khan
ক্রিকেট ছেড়ে অভিনয়কেই বেছে ফেললেন সি কে নায়ডুর দলে সুযোগ পাওয়া ইরফান
সমালোচক, সব মহলের দর্শক এবং বক্স অফিস, এই তিন দিককেই একসঙ্গে বশ করার মন্ত্রগুপ্তি ছিল ইরফানের কাছে। আন্তর্জাতিক বিনোদন জগতও কুর্নিশ জানাতে ভোলেনি তাঁর প্রতিভাকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ১৫:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পারিবারিক ব্যবসা ছিল টায়ারের। ছেলের মন ক্রিকেটে। নির্বাচিতও হয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-২৩ সি কে নায়ডু ট্রফির দলে। তার পরেও ঘুরে গেল জীবনের পথ। এম এ পড়তে পড়তেই স্কলারশিপ। পরবর্তী গন্তব্য দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ইরফান খান ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের চরিত্রাভিনয়ের ধারার অন্যতম মশালবাহক।
০২১৮
রাজস্থানের জয়পুর শহরে জন্ম ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি। ছোট থেকেই নেশা ছিল ক্রিকেট। কিন্তু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ক্রিকেটকে ছাপিয়ে হৃদয় জয় করে নিল অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা।
০৩১৮
তথাকথিত বলিউডি নায়কের চেহারা কোনওদিন ছিল না। কিন্তু চরিত্রাভিনেতা হয়েও যে লাইট-ক্যামেরা-সাউন্ডের বৃত্তে ছাপিয়ে যাওয়া যায় রোমান্টিক বা অ্যাকশন নির্ভর নায়ককে, বার বার প্রমাণ করেছেন তিনি।
০৪১৮
মুম্বইয়ে অভিনয় শুরু দূরদর্শনের সিরিয়াল দিয়ে। ‘চাণক্য’, ‘ভারত এক খোঁজ’, ‘চন্দ্রকান্তা’ ধারাবাহিকে প্রথম থেকেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। দর্শকমনে দাগ রেখে যাওয়ার ধারা বজায় থাকল বেসরকারি চ্যানেলের সিরিয়ালের অভিনয়েও।
০৫১৮
মঞ্চ-ছোট পর্দা দিয়েই বেশ চলছিল অভিনয়ের পানসি। এমন একটা সময়ে ডাক এল মীরা নায়ারের কাছ থেকে। ১৯৮৮ সালে ‘সালাম বম্বে’ ছবিতে ছোট্ট ক্যামিয়োর ভূমিকায়। তবে ছবি থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ে যায় তাঁর অভিনয়।
০৬১৮
এর পর অভিনয় ‘এক ডাক্তার কি মওত’ ছবিতে। তার পর অবশ্য কিছু ছবিতে তাঁর কাজ অনুচ্চারিতই থেকে যায়। সমালোচকদের নজরে আবার ফিরে আসেন প্রায় এক দশক পরে। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া আসিফ কাপাডিয়ার ছবি ‘ওয়ারিয়র’-এ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয় ছবিটি এবং ইরফানের অভিনয়।
০৭১৮
এর পর মুক্তি পায় বিশাল ভরদ্বাজের ‘মকবুল’। এ ছবিতে অভিনয়ের পরে বলিউডে নিজের ঘরানা তৈরির প্রথম ধাপে পা রাখেন ইরফান। ক্রমে ‘রোগ’, ‘হাসিল’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘দ্য নেমসেক’, ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে আরবসাগরের তীরে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন ইরফান খান।
০৮১৮
বার বার নিজের অভিনয়ের ধাঁচ ভেঙেছেন তিনি। ‘পান সিং তোমর’-এর বিপরীত মেরুতে বাস করেন ডাব্বাওয়ালার দিয়ে যাওয়া ‘লাঞ্চবক্স’ খুলে টিফিন করা সজন ফার্নান্ডেজ। আবার তাঁদের থেকে সম্পূর্ণ অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা হলেন সন্তানকে ইংরিজি মাধ্যমে পড়াতে মরিয়া মধ্যবিত্ত বাবা, রাজ বাত্রা। অথচ পর্দায় চরিত্রগুলি দেখলে মনে হয় তাঁরা প্রত্যেকেই অভিনেতা ইরফানের আসল সত্তা।
০৯১৮
চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতেন এই বলিষ্ঠ অভিনেতা। কোনও ম্যানারিজম ছাড়া সহজ সাবলীল অভিনয়কে তুরুপের তাস করে ইরফান উপহার দিয়েছেন ‘পিকু’, ‘বিল্লু’, ‘সাত খুন মাফ’, ‘হায়দর’, ‘তলওয়ার’, ‘মাদারি’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘ব্ল্যাকমেল’,‘ডেডলাইন সির্ফ চব্বিশ ঘণ্টে’-র মতো ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয়।
১০১৮
সমালোচক, সব মহলের দর্শক এবং বক্স অফিস, এই তিন দিককেই একসঙ্গে বশ করার মন্ত্রগুপ্তি ছিল ইরফানের কাছে। আন্তর্জাতিক বিনোদন জগতও কুর্নিশ জানাতে ভোলেনি তাঁর প্রতিভাকে। ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘ইনফার্নো’-র মতো ছবিতে ইরফান প্রমাণ করেছেন তাঁর অভিনয় দেশকালের সীমা অতিক্রম করেছে।
১১১৮
প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে যেতেন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। তার জন্য রাত তিনটে অবধি জেগে পড়াশোনা করতেন। অভিনয়কে নিখুঁত করে তোলার প্রয়াস বন্ধ হয়নি এক মুহূর্তের জন্যেও। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইরফানের দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী, তাঁর স্ত্রী সুতপা শিকদার।
১২১৮
দু’জনের আলাপ ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার দিন থেকে। স্ত্রী এবং দুই ছেলে বাবিল আর আয়ানের ঘেরাটোপে অবশ্য এই দুঁদে অভিনেতা ছিলেন নিখাদ ঘরোয়া। শত প্রতিকূলতাতেও যাঁর মুখে লেগে থাকত প্রাণখোলা হাসি।
১৩১৮
নায়কোচিত বেশবাস নয়। বরং কিছুটা অবিন্যস্ত আবির্ভাব। সেটাই ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক। ২০১২ সালে নিজের নামের সঙ্গে জুড়েছিলেন বাড়তি ‘আর’ অক্ষর।
১৪১৮
অভিনয়ের যাত্রাপথে জুড়তে চেয়েছিলেন আরও অনেক কিছু। কিন্তু বাধ সাধল জীবনের চিত্রনাট্য। ২০১৮ সালে জানা গেল তিনি দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত। কয়েক দিন জল্পনা চলল। তার পর নিজেই জানালেন, তিনি নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারের শিকার। লন্ডনে চলছিল চিকিৎসা।
১৫১৮
কিন্তু তিনি মিরাকলে বিশ্বাস করতেন। তাঁর বিশ্বাস প্রথম পর্যায়ে সফলও হয়েছিল। সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন কাজে। শুরু করেছিলেন অভিনয়।
১৬১৮
তাঁর শেষ ছবি ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এর পোস্টার এখনও জ্বলজ্বল করছে মাল্টিপ্লেক্সের বন্ধ গেটের ওপারে। নিজের শেষ টুইটে ছবিটির কথা বলেছেন ইরফান। দর্শকের অনুরোধ করেছেন ছবিটি দেখার জন্য।
১৭১৮
আর বলেছেন, তাঁর জন্য অপেক্ষা করে থাকতে। শরীরে যে ‘অযাচিত অতিথি’ বাসা বেঁধেছে, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করেই ফিরবেন, কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কথা আর শেষ হল না। চিকিৎসকদের চেষ্টা, অনুরাগীদের ভালবাসা, সবকিছু ব্যর্থ করে সেই অযাচিতরাই তাঁকে নিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।
১৮১৮
সম্প্রতি তাঁর মা-ও চলে গিয়েছেন সেই দেশে। লকডাউনের জন্য জয়পুরে মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারেননি গুরুতর অসুস্থ ইরফান। এ বার চলে গেলেন মায়ের কাছেই। তাঁর মতো অভিনেতার জন্য অনন্ত হল অনুরাগীদের অপেক্ষা।