প্র: কাজলকে ক’টা বাঙালি শব্দ শেখালেন?
উ: একটাই— ‘কেন’। সেটে প্রায়ই ‘কেন’ বলে চেঁচিয়ে উঠতেন। খুব মজা পেতেন (হাসি)।
প্র: উনি কি আপনার ছবি আগে দেখেছেন?
উ: লীনা ম্যাম (যাদব) এক দিন ফোনে বলেছিলেন, ‘পার্চড’-এর স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে তনুজা ম্যামের সঙ্গে দেখতে এসেছিলেন কাজল ম্যাম। স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের সময়ে কাজল ম্যাম নিজেই সেই কথা বলেন আমাকে।
প্র: অজয় দেবগণ কী বললেন?
উ: ‘জেন্টলম্যান’ শব্দটা অজয় স্যরের জন্য পারফেক্ট। ইন্ডাস্ট্রিতে সকলে ওঁকে ‘নো-ননসেন্স পার্সন’ বলে ডাকে। যশ রাজ স্টুডিয়োয় আমাদের শুটিং হতো। পাশের ফ্লোরেই অজয় স্যরেরও শুটিং চলছিল। প্রায়ই আমাদের সেটে আসতেন। কিন্তু কোনও বিষয়ে নাক গলাতেন না। দাদার (প্রদীপ সরকার) কাছে শুনেছিলাম, প্রথম কাটের পরেই আমার প্রশংসা করেছিলেন। পরে আমার সামনেই প্রশংসা করতেন। খুব লজ্জা পেয়ে যেতাম (হাসি)।
প্র: বাংলা ছবির পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজেকে অনুঘটক বলে মনে করেন?
উ: মনে হয় না, সেই যোগ্যতা এখনও অবধি অর্জন করতে পেরেছি। দেশের সব ইন্ডাস্ট্রিতেই তারকাদের অভিনেতা হয়ে ওঠার ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। এখানে ঋত্বিক চক্রবর্তী, মুম্বইয়ে রাজকুমার রাও, ভিকি কৌশলের মতো অভিনেতারা যদি প্রতিষ্ঠা না পেতেন, তবে আমাদের জেনারেশনের অভিনেতারা তৈরিই হতো না। তাই কৃতিত্বের সবটাই ওঁরা দাবি করতে পারেন, আমি নই।
প্র: মুম্বইয়ে বেশি কাজ করছেন বলে বাংলায় কাজ পেতে অসুবিধে হচ্ছে?
উ: এই ইন্ডাস্ট্রির সকলেই আমাকে খুব পছন্দ করেন। আর মুম্বইয়ে পরিকল্পনা করে কাজ করিনি। আমার একটা কাজ অন্য কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। মুম্বইয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবিও করেছি। এখানে তেমন ছবি খুব কম হয়। ১৬ বছর বয়সে কাজ শুরু করেছি। বাংলার সব পরিচালক যে এই বদলে যাওয়া বয়সের উপযোগী চরিত্র লিখবেন, এমন তো কথা নেই। তবে আমার তা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।
প্র: তবে জাতীয় পুরস্কার এল বাংলা ছবির সুবাদেই। কতটা পাল্টেছে জীবন?
উ: আমার জন্য কিছুই বদলায়নি। ভাল কাজ না করলে আগামী বছর কেউ পুরস্কার মনে রাখবে না। তবে অনেকটা সম্মান বেড়েছে। আমার চেয়েও বেশি আমার পরিবারের। ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রির মতো অভিনয়ও যে সাবজেক্ট, সেটা খুব ছোটবেলায় পরিবারের কাছ থেকে শিখেছি। ক্লাস টেনের পরে বাবা-মা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে আমাকে সরিয়ে নেন। তার জন্য তো কম কথা শুনতে হয়নি! তার উপরে মুম্বইয়ে ছবি করা মানেই, ছেলে বখে গিয়েছে। বরাবরই নিজের মতামত স্পষ্ট ভাবে বলি। তাতেও লোকের সমস্যা। এত কথা কিসের? বাবা-মায়ের ট্রেনিংয়ে ভালই উড়তে শিখেছে... এই পুরস্কার কিছুটা হলেও তাদের মুখ বন্ধ করেছে। আবার এটাও বলছে, আমার বাবা নাকি প্রভাব খাটিয়ে পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে (হাসি)!
প্র: এত কম বয়সে এত সাফল্য! ব্যর্থতা সামলাবেন কী ভাবে?
উ: দর্শক ছবি দেখে কী বলবেন, সেটা আমার হাতে নেই। তবে আমার হাতে যা আছে, তা হাতের বাইরে যেতে দিই না। প্রতিটি পর্যায়ে নিজেকে তৈরি করতে করতে এগিয়েছি। মনে আছে, ‘গ্যালিলিয়ো’ নাটকের মহড়ায় অঞ্জনদা (দত্ত) সকলের সামনে বকুনি দিয়েছিলেন। মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু জানতাম, সে দিন ভাল অভিনয় করিনি। এই প্রজন্মের অনেকেই সমালোচনাকে ইগোয় নিয়ে নেয়। আমার কিন্তু সে সব নেই।
প্র: সুরঙ্গনা আপনাকে নিজের ‘টিচার’ বলেন। আপনার টিচার কে?
উ: টিচার (অবাক হয়ে)? ধুর! এক বন্ধু আর এক বন্ধুকে এগিয়ে দেবে, এটাই স্বাভাবিক। ওকে এ সব বলতে বারণ করব। আমার বেড়ে ওঠাই আমার টিচার।
প্র: সুরঙ্গনা এখনও শুধুই বন্ধু?
উ: সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বন্ধুত্ব আমার কাছে খুব দামি। তবে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি (লাজুক হাসি)।
প্র: ইলা আর তার ছেলের মতোই কি মায়ের সঙ্গে আপনার বন্ডিং?
উ: বাবা আর আমি একটা কাজ করার আগে অনেক ভাবি। মা স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকাতে বিশ্বাসী। জীবনের কয়েকটি সিদ্ধান্ত মা না নিলে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ আসত না। তবে মা-বাবার উপরে আমি খুব নির্ভরশীল (হাসি)। যখন শহরে থাকি না, ২৪ ঘণ্টাই ফোনে কথা হয়। আমিই মায়ের জীবনে ছায়ার মতো ঘুরি। মানে মায়ের জীবনে আমি ইলার মতো (হাসি)।
প্র: কখনও স্টারস্ট্রাক হয়েছেন?
উ: হয়ে গিয়েছি। ‘পার্চড’-এর স্ক্রিনিংয়ে রাজকুমার রাও আমাকে বলেছিলেন, ‘ফ্ললেস পারফরম্যান্স’। এক বার নয়, দু’বার। ইন্টারভ্যালেও এসে বলেছিলেন, ‘ইউ আর অন পয়েন্ট’। আমি সাধারণত কাউকে বলি না। সে দিন ওঁকে সাহস করে বলেছিলাম, ‘একটা সেলফি তুলব আপনার সঙ্গে?’ আর সুজিতদা (সরকার) কোনও দিন আমাকে পরিচালনা করলে, সেটেই স্টারস্ট্রাক হব।
প্র: পরিচালক হওয়ার প্রস্তুতি কত দূর?
উ: কলকাতায় এক পরিচিত এ়়ডিটরের কাছে এডিটিংয়ের কাজ শিখছি। নিজেও কিছুটা করতে পারি। পরমদা (চট্টোপাধ্যায়) অনেক সাহায্য করেছে। আর বছরের শেষে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘কোল্ড ফায়ার’ অবলম্বনে শর্ট ফিল্ম করার ইচ্ছে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy