সাইনা
পরিচালনা: অমোল গুপ্তে
অভিনয়: পরিণীতি, মানব, মেঘনা, ঈশান
৫/১০
বিশ্বমঞ্চে দেশের জার্সি পরে নামা একজন খেলোয়াড়ের লড়াই, হারজিত তাঁর আর একার থাকে না। ওই জার্সির সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, মান-সম্মানের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন তিনি। তেমনই এক স্পোর্টসম্যানের বায়োপিক তৈরিও দায়িত্বের কাজ বইকি। বিশেষ করে, যখন সেই ক্রীড়াবিদ সমসাময়িক, এ প্রজন্মেরই এক উজ্জ্বল তারকা। সাইনা নেহওয়ালের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যতটা জানেন, তার চেয়ে খানিক বেশি জানা-চেনার আগ্রহ নিয়ে তাঁর বায়োপিক দেখতে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অমোল গুপ্তের ‘সাইনা’ সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল কই?
বায়োগ্রাফির মতোই বায়োপিককেও হতে হয় সৎ, সত্যনির্ভর। ‘সাকসেস স্টোরি’র আবেগের আতিশয্যে যদি চিত্রনাট্য সত্যনিষ্ঠ থাকতে না পারে কিংবা বাদ পড়ে যায় না-জানা কথাগুলোই... তবে তাকে সার্থক জীবনীচিত্র বলা চলে কি? ‘সাইনা’ ছবির মূল সমস্যা সেখানেই। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু, অ্যাকাডেমির কঠিন ট্রেনিং, পরিবারের ত্যাগ, সহখেলোয়াড়ের সঙ্গে সম্পর্ক, চোট পাওয়া, কোচের সঙ্গে টানাপড়েন— সবই দেখানো হয়েছে সাইনার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে। কিন্তু এর প্রায় সব গল্পই আমাদের জানা। তবে সাইনার ‘সাইনা নেহওয়াল’ হয়ে ওঠার না-বলা গল্পগুলোই যে শোনা হল না! বাদ রয়ে গেল তাঁর গোপী স্যরের (কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দ) অধ্যায়ের অনেকটাই। ছবিতে অবশ্য গোপীচন্দ পাল্টে গিয়েছেন কোচ রাজনে (মানব কল)। যার অ্যাকাডেমি থেকে শুধু চ্যাম্পিয়নরা বেরোয়। অথচ সেই কোচকে কখনও নোট নিতে, কখনও অফিসের ঠান্ডা ঘরে, কখনও আবার রক্ত গরম করা পেপ টক দিতেই দেখা যায় বেশির ভাগ সময়ে। কোর্টের চৌহদ্দির মধ্যে তিনি কোথায়? সাইনা নেহওয়ালের দুর্দান্ত ফুটওয়ার্ক, নেট ড্রিবলিং হাতে ধরে তাঁকে শিখিয়েছিলেন গোপীচন্দ। ছবিতে সেই জান কবুল করা ট্রেনিংয়ের কোনও দৃশ্যই সে ভাবে নেই! এমনকি, সাইনার প্লেয়িং স্টাইলের খুঁটিনাটি এড়াতে বারবার লং শটের ব্যবহারও ক্লান্ত করে। অ্যাকাডেমি ছাড়ার ঠিক আগে সাইনা তার কোচের কাছে অনুযোগ করে, ‘স্যর, আপনি আমাকে আর সময়ই দেন না’। অথচ সময় দেওয়ার কোনও প্রেক্ষাপটই তার আগে দেখানো হয়নি। ছবিতে সাইনার গুরুত্বপূর্ণ টুরগুলির একটিতেও উপস্থিত নেই রাজন। বাস্তবে কমনওয়েলথ-সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যখন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সাইনা নেহওয়াল, কোর্টের পাশে বসে থাকা সদাহাস্যময় গোপীচন্দকে মনে পড়ে যায়। প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিক্সে ব্যাডমিন্টনে দেশকে পদক এনে দিয়েছিলেন যে সাইনা, তাঁর বায়োপিকে লন্ডন অলিম্পিক্সের পর্ব এক লাইনে সারা হল! প্রতিপক্ষ চোট পেয়ে জমি ছেড়ে দেওয়ায় সাইনা ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন, তা দেখাতে চাননি বলেই কি এড়িয়ে যাওয়া হল সেই অধ্যায়?
পরিণীতি চোপড়া কতটা সাইনা নেহওয়াল হয়ে উঠতে পারলেন, তাই নিয়েও আগ্রহ ছিল দর্শকমনে। পরিণীতি অভিনয়ে কসুর না রাখলেও ফাঁক রয়ে গিয়েছে তাঁর হোমওয়ার্কে। স্পোর্টস বায়োপিকের স্বার্থে খেলোয়াড়সুলভ চেহারা তৈরির যে দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক হিন্দি ছবিতে বারবার দেখা গিয়েছে, সেখানে পরিণীতি তাঁর অ্যাপিয়ারেন্সে বেশ হতাশই করেছেন। ছবিতে সাইনার ওজন ঝরানোর পর্ব দেখানো হয়েছে। তবে সেখানেও নায়িকার চেহারার পরিবর্তন বিশেষ বোঝা যায়নি। চাবুকের মতো সাইনার সঙ্গে মেলানো যায় না ভারী চেহারার পরিণীতিকে। সাইনার মা ঊষারানির চরিত্রে মেঘনা মালিকের অতি-অভিনয় চোখে লাগে। কোচ রাজনের ভূমিকায় কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত মানব কলের কাস্টিং জুতসই লাগেনি। মানবের মতো অভিনেতাকে কাজেও লাগানো হয়নি তেমন। তবে কোচ হিসেবে একটি দামি কথা তাঁকে দিয়ে বলিয়েছেন পরিচালক— বিশ্বের এক নম্বর হতে গেলে ‘কী করতে হবে’র চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কী ছাড়তে হবে। এক নম্বর হওয়ার দৌড়ে নামা সাইনার ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি।
ছবিতে প্রায় উহ্য সাইনার দিদি, সাইনার মার্শাল আর্টস শিক্ষা, পরবর্তী কালে বিজেপির সদস্যপদ নেওয়া-সহ অনেক কিছুই। চিত্রনাট্যে আসেননি পি ভি সিন্ধুও। প্রেমিক পারুপল্লি কাশ্যপ অবশ্য জায়গা পেয়েছেন, সেই চরিত্রে ঈশান নকভিও সুন্দর। তবে বাদ পড়েছে তাঁদের বিবাহ-পর্ব।
স্পোর্টস বায়োপিকের একপেশে সাফল্যগাথায় খোয়া গিয়েছে রক্তমাংসের সাইনা নেহওয়াল। সেই সাফল্যের নেপথ্যে ‘আনটোল্ড স্টোরি’গুলি শোনা বাকি রয়ে গেল যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy