Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Review

আঁধারেই আলো

এখানে অন্ধকার নয়, ভয় আলোকে। সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এক একটা দেশ পরিণত হচ্ছে শ্মশানে।

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

ইনটু দ্য নাইট
(ওয়েব সিরিজ়)
ক্রিয়েটর: জেসন জর্জ
অভিনয়: পাওলিন এটিনে, ল্যরেন ক্যাপেলুটো, স্টেফানো ক্যাসেটি, মেহমত কার্তুলুস
৬.৫/১০

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সব সময়েই ডার্ক কনটেন্টের রমরমা। এই অন্ধকার সময়ে সেগুলো যেন দর্শককে আরও গ্রাস করে নিচ্ছে। করোনার মধ্যেই প্যানডেমিক মুভিগুলো দর্শক ফিরে ফিরে দেখছেন। হয়তো এ ভাবেই পর্দার সঙ্গে বাস্তবের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নিচ্ছেন। নির্মাতারাও সাপ্লাইলাইন খোলা রেখেছেন। ‘ইনটু দ্য নাইট’ সিরিজ়টি সেই ধারার একটা প্রচেষ্টা।

তবে এখানে অন্ধকার নয়, ভয় আলোকে। সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এক একটা দেশ পরিণত হচ্ছে শ্মশানে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির সঙ্গে তালিয়ে মিলিয়ে কেউ যদি শুধু রাতের আবর্তে ঘুরতে থাকে, তা হলে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অসম্ভবের যাত্রা নিয়েই এই সিরিজ়। আর বাঁচা যাবে মাটির নিচের বাঙ্কারে আস্তানা নিলে। একটি প্লেন এবং তাতে সফররত কয়েক জন যাত্রীকে নিয়ে শুরু হয় ‘ইনটু দ্য নাইট’ যাত্রা।

ব্রুসেলসের বিমানবন্দর থেকে মস্কোগামী প্লেন হাইজ্যাক করে এক ব্যক্তি। তখনও প্লেনটির বোর্ডিং সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে জনাদশেকের বেশি ছিল না সেই প্লেনে। এমনকি, পাইলট এবং অ্যাটেনডেন্টও একজনই। বিমান ছিনতাইকারী টেরেনজ়ো জানায়, সে কাউকে মারার জন্য এ কাজ করেনি। বরং নিজেকে এবং বাকিদের বাঁচাতে চায়। ন্যাটোতে কাজ করার সুবাদে সে জানতে পেরেছে, সূর্যরশ্মি যেখানে যেখানে পড়বে, সে জায়গাগুলি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। প্রথমে অবিশ্বাস করলেও ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা যায়, পুব দিকের দেশগুলো ইতিমধ্যেই স্পন্দনহীন। বাঁচতে হলে রাতের পথে আবর্তিত হতে হবে। পাড়ি দিতে হবে পশ্চিমে। জানা যায়, সূর্যের অক্ষ পরিবর্তনের ফলে এক ধরনের গামারশ্মি নির্গত হচ্ছে, যা মৃত্যুবাণের কাজ করছে।

রাতের অন্ধকারের সঙ্গে চলতে থাকে মনের অন্ধকারের টানাপোড়েন। মৃত্যু ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে অথচ ক্ষুদ্র স্বার্থ, অসুয়া ছাড়তে পারে না মানুষ। নিজের হাতে ক’টা দিন আছে জানে না, মারতে উদ্যত হয় অন্যকে। এক মুহূর্তে কারও দিকে বন্দুক তাক করছে তো অন্য মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাহিনির টেনশন দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আপাতত দৃষ্টিতে যা অসম্ভব মনে হত, তেমন অনেক কিছু এ ক’দিনে প্রত্যক্ষ করেছেন দর্শক। তাই পর্দার পরিস্থিতি আর বাস্তব ওভারল্যাপ করতে থাকে।

এক দেশ থেকে আর এক দেশে পরিক্রমণ কতক্ষণ সম্ভব? লড়াইয়ে টিকেই বা থাকবে কতজন? সিরিজ়ের শেষে সব উত্তরই মিলবে। হিন্ট রয়েছে আগামী সিজ়নেরও। অ্যাপোক্যালিপ্টিক জ়ঁরের কনটেন্টে যে মোচড়গুলো থাকে, সবটাই রয়েছে এই বেল‌জ়িয়ান সিরিজ়ে। কিছু অতিরঞ্জন আর চটজলদি সমাধানের ত্রুটিও রয়েছে। কিন্তু এপিসোডের সময়সীমা ৪০ মিনিটের মধ্যে থাকায়, ঢিলে দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। টেনশনের চড়াই-উতরাই পর্বে পর্বে। গোটা সিরিজ়ের অধিকাংশটাই প্লেনের মধ্যে। দর্শক যাতে ক্লস্ট্রোফোবিক না হন, তার খেয়াল রাখতে হয়েছে নির্মাতাদের। ছ’টি এপিসোড এক একটি চরিত্রের নামে। পর্বগুলো তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে শুরু হয়ে ঢুকে যায় কাহিনির মূলস্ত্রোতে। যাকে ঈশ্বরতূল্য মনে হচ্ছিল, দেখা যায় তার একটি ঘৃণ্য অতীত রয়েছে। যাকে দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে, সে নেহাতই সাদামাঠা এক মানুষ। যে সিলভি প্লেনে ওঠার আগে ভেবেছিল, প্রেমিকের চিতাভস্ম ভাসিয়ে সে নিজে আত্মহত্যা করবে, সেই সকলকে পার করার কাণ্ডারী হয়ে যায়। চরিত্রের পরতের সঙ্গে কাহিনির বিন্যাস পিয়ানোর সাদা-কালো রিডের মতো। আঁধার পথে সার্ভাইভালের যাত্রায় খসে যেতে থাকে এক একজন। কানাডায় রেশন নিতে যখন জ্যাকব আর গ্যাব্রিয়েলা যায়। ফিরতে পারে না গ্যাব্রিয়েলা। শুনশান রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা মনে করিয়ে দেয়, শেষ পর্যন্ত আমরা সকলেই একা।

কাল্পনিক কাহিনির চরিত্রগুলো ঘোরতর বাস্তব আর জীবন্ত। বিদেশি কনটেন্টের একটা অ্যাডভান্টেজ থাকে। যেহেতু অভিনেতাদের আমরা চিনি না, তাই চরিত্রগুলো অনেক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। তাতে অবশ্য অভিনেতাদের অভিনয়ের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে না। এই সিরিজ় উপভোগ্য হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ, সাই-ফাই ড্রামার কাঠামোতে মিশে থাকা আবেগ। ওই আবেগটাই পড়ে পাওয়া ষোলো আনা।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

অন্য বিষয়গুলি:

Review Web Series Into the Night
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy