সিরিজ়ের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তারানাথ তান্ত্রিক আর ‘বেতাল’ জাগানোর গল্প। কাঁটা দিয়ে ওঠে গায়ে। ঠিক ততটা উত্তেজনা নিয়েই এই সিরিজ়টি দেখতে বসা। গল্প শুরু হয় আদিবাসী সমাজকে চালচিত্র হিসেবে সাজিয়ে ভৌতিক পরিবেশে। গুছিয়ে বসতেই বন্দুকধারী ব্রিটিশ জ়ম্বি এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে, দিল মেজাজ বিগড়ে। প্রযোজক শাহরুখ খানের হাত দিয়ে কি এখন শুধু এলোপাথাড়ি গুলিই চলবে? লক্ষ্যভেদ দূরস্থান। গুলির অপচয়।
সিরিজ় শুরু হয় একটি টানেল খুঁড়ে হাইওয়ে তৈরি করার গল্প দিয়ে। কিন্তু স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই টানেল অভিশপ্ত। তাই টানেল খোঁড়ার পথে তারা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের নকশাল বলে দেগে দিয়ে গুলি চালিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়। শুরু হয় টানেল খোঁড়ার কাজ। টানেল খুঁড়তেই সেখান থেকে তার সেনাবাহিনী নিয়ে বেরিয়ে আসে ব্রিটিশ কর্নেলের ভূত। তারা আক্রমণ করে রীতিমতো হ্যান্ড ড্রাম বাজিয়ে। সার্কাস শুরুর আগে যা বাজানো হয় আর কী! জ়ম্বি আটকাতে ত্যাগী ম্যাডাম (সুচিত্রা পিল্লাই) ও সিরোহি (বিনীত কুমার সিংহ) পরিচালিত সেনাবাহিনী যুদ্ধে নামে।
ভয় দেখাতে অনেক ফন্দিফিকির কাজে লাগিয়েছেন পরিচালক। কখনও সাদা লেন্স পরিয়ে, কখনও চোখে লাল টুনি বাল্বের মতো মণি বসিয়ে, ভ্যাম্পায়ারের মতো দাঁত বার করে অভিনব জ়ম্বি তৈরি করেছেন। ভূতেরা হামাগুড়ি দিয়েছে সিলিংয়ে। ‘তুম্বড়’ স্টাইলের ভূতের আত্মা গড়ে ‘গেম অব থ্রোনস’ পাঞ্চ করা হয়েছে। ‘নাইট কিং’ সদৃশ ভূত-সর্দার ও তার সেনাবাহিনীকে রণকৌশলও শেখানো হয়েছে। তবে তাতেও তারা ভয় দেখাতে অক্ষম। তাই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বন্দুক। ভূতেরাও গুলি চালিয়ে মানুষ মারে। দীর্ঘশ্বাস! তবে এত করেও ‘বেতাল’-এর ভূত ভয় দেখাতে ব্যর্থ। বরং তাদের দেখে মুখ টিপে হাসবে র্যামসে ব্রাদার্সের হাতে তৈরি ভূতরাও। ‘গেম অব থ্রোনস’-এর কপি দৃশ্যও গোটা সিরিজ় জুড়ে। ‘জিওটি’-র মেলিসান্দ্রের মতো এখানেও আছে পুনিয়া। সে জ়ম্বি সেনাদের আটকাতে ব্যারাকের চারপাশে আগুন জ্বালিয়ে রাখে। কথায় আছে টুকে পাশ করা গেলেও ফার্স্ট হওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। আর ‘জিওটি’ সিরিজ়েরও এমন এপিসোড টুকেছে, যা আলোর অভাবে অর্ধেকই দেখা-বোঝা যায় না। ফলে এই সিরিজ়েও রণকৌশল অস্পষ্ট।
বেতাল
(ওয়েব সিরিজ়)
ক্রিয়েটর: প্যাট্রিক গ্রাহাম
অভিনয়: বিনীত, অহনা, সুচিত্রা
৩/১০
গোটা সিরিজ়ে অভিনেতারাও খুব কনফিউজ়ড। তারা ভয় পাবে? না কি দুঃখ পাবে (এহেন সিরিজ়ে নিজেদের দেখে), সেই দ্বন্দ্ব নিয়েই বন্দুক হাতে ঘুরে বেরিয়েছে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে। তার মধ্যেও ভাল অভিনয় করে গিয়েছেন জিতেন্দ্র জোশী ও সাইনা আনন্দ। ভালর কথা যখন এলই, তখন কিছু দৃশ্যের কথাও বলতে হয়। পুনিয়াকে তার বাবার কথা বলা হলে কড়া চোখে উত্তর দেয়, ‘আমার বাবা নয়, স্বামী।’ কড়া বাস্তব ফুটে ওঠে চোখের সামনে। বাথরুমে দুই ডেডবডি গায়েব হয়ে যাওয়ার দৃশ্যও বেশ রোমহর্ষক। কিন্তু ওইটুকুই। তবে ইতিহাস খুঁজে এমন দুষ্প্রাপ্য ভূত খুঁজে বার করার জন্য কুর্নিশ। সিরিজ়ের ভূত-সর্দার অর্থাৎ ব্রিটিশ কর্নেলকে টানেলে তার সেনাবাহিনী-সহ গ্রামবাসী আটকে দিলে, বেরোনোর পথ খোঁজে না সে। বরং টানেলের মধ্যে নিজের সদ্যযুবা ছেলেকে বলি দিয়ে ব্ল্যাক ম্যাজিকের বলে ‘বেতাল’ জাগায়।
আর চিত্রনাট্য তো অভিভাবকহীন মনে হয়েছে। ভৌতিক, রাজনৈতিক, আর্মাগেডন, সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা সব কিছুই ফোড়নের মতো বিদ্যমান। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও স্পষ্ট যোগসূত্র নেই। শিশুর হাতে স্লেট পেনসিল দিলে সে যেমন আঁকিবুকি কাটে, শুধু মা-বাবারাই তার মধ্যে শিল্প ও সৌন্দর্য খুঁজে পান। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা নয়। গল্পের লজিকও হাস্যকর। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কারও মাথার সব চুল সাদা হয়ে গেলে তার যুক্তি দর্শানো হয়, ‘শায়দ শক কে ওয়াজা সে!’ চারটি এপিসোডের এই সিরিজ় এতই বিরক্তিকর যে, এটুকু দেখতেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। বারবার আঙুল চলে যায় ফাস্ট ফরোয়ার্ড বাটনে। সিরিজ়শেষে কষ্ট হয় সেই মানুষটার জন্য, যে গালে টোল ফেলে হাসলেই ছবি হিট হয়ে যেত। নব্বইয়ের দশকের ম্যাজিক আর ফিরিয়ে আনতে পারবেন না কিং খান? তার জন্য এই হাস্যকর ব্ল্যাক ম্যাজিক ও জ়ম্বিদের শরণাপন্ন হতে হবে?
‘স্ত্রী’, ‘তুম্বড়’-এর মতো ভৌতিক ছবির দর্শকদের জন্য এই সিরিজ় খুবই অপরিণত কাজ। একজন দর্শক হিসেবেই শাহরুখের মতো করে পরিচালককে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, ‘কেয়া আপ পাঁচবি পাস সে তেজ় হ্যায়?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy