Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Web Series Review

কেমন হল ‘দ্য ক্রাউন’-এর অন্তিম সিজ়ন?

রাজতন্ত্র, রাজনীতি, চার্লস, ডায়ানা, পরবর্তী প্রজন্ম— সব কিছুই পরিসর পেয়েছে সিরিজ়ে। কিন্তু এ কাহিনি আসলে একজনেরই। কুইন এলিজ়াবেথ সেকেন্ড। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিরিজ়ের রাজদণ্ড তাঁর হাতেই...

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৫
Share: Save:

সাত বছরে সাত দশকের সাম্রাজ্য তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা নয়। অজস্র চরিত্র, অসংখ্য ঘটনা, অন্দর-দ্বন্দ্ব, বিতর্কের আখ্যান ‘দ্য ক্রাউন’ ষষ্ঠ সিজ়নে এসে সমাপ্তি ঘোষণা করল। কিছু পর্ব মসৃণ, কিছু পর্ব ঠোক্কর খেয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৬ থেকে চলতে থাকা রানি-কাহিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা সিরিজ় হিসেবে মনে থেকে যাবে। ক্রিয়েটর পিটার মরগ্যান যে সব সময়ে ঘটনা পরম্পরার প্রতি সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন, এমন নয়। অনেক সময়েই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে রাজপরিবারের মনস্তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করেছেন, সিনেম্যাটিক লাইসেন্স নিয়েছেন। রাজতন্ত্র, রাজনীতি, চার্লস, ডায়ানা, পরবর্তী প্রজন্ম— সব কিছুই পরিসর পেয়েছে সিরিজ়ে। কিন্তু এ কাহিনি আসলে একজনেরই। কুইন এলিজ়াবেথ সেকেন্ড। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিরিজ়ের রাজদণ্ড তাঁর হাতেই...

ষষ্ঠ সিজ়নের এক জায়গায় তরুণী মার্গারেট বলছেন, ‘এলিজ়াবেথ কোনও হঠকারী কাজ করতেই পারে না।’ পর মুহূর্তে তিনি আবিষ্কার করছেন, একদল অপরিচিতের সঙ্গে প্রিন্সেস নাচে মশগুল। কাট টু, প্রৌঢ় মার্গারেট প্রশ্ন করছেন রানিকে, ‘‘নিজের ইচ্ছে, ভাললাগা চেপে রেখে এই দায়িত্বের বোঝা বইতে আফসোস হয়নি?’’ জবাব এল, “না, দায়িত্বের চেয়ে কোনও কিছুই বেশি গুরুত্ব পায়নি।’’ এই বলিষ্ঠতাই তাঁকে ৭০ বছর ধরে রাজসিংহাসনে আসীন রেখেছিল। আশি বছরেও তিনি ঘোড়সওয়ারি করতেন, গাড়ি চালাতেন। এলিজ়াবেথের চরিত্রে ক্লেয়ার ফয়, অলিভিয়া কোলম্যান, ইমেল্ডা স্টনটন— তিন জনকে কখনও চরিত্র মনে হয় না। পঞ্চম সিজ়ন থেকে ইমেল্ডা এসেছেন রানির চরিত্রে। প্রাথমিক আড়ষ্টতা কাটিয়ে এখানে তিনি অনেক বাঙ্ময়। কী আশ্চর্য, রাজা-রানিকে তাঁদের শেষযাত্রার পরিকল্পনাও করে যেতে হয়! যেখানে রানিকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেমন ভাবে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হবে, কোথায় তাঁর কফিন থাকবে... সেখানে নিরুচ্চার ইমেল্ডা অসাধারণ!

দ্য ক্রাউন (ষষ্ঠ সিজ়ন)

ক্রিয়েটর: পিটার মরগ্যান

অভিনয়: ইমেল্ডা স্টনটন, জোনাথন প্রাইস, ডমিনিক ওয়েস্ট, এলিজ়াবেথ ডিবেকি

৭/১০

ষষ্ঠ সিজ়ন দু’ভাগে এসেছে নেটফ্লিক্সে। প্রথম চার ভাগে ডায়ানার প্রাধান্য বেশি। এ পর্বেও ডায়ানার চরিত্রে এলিজ়াবেথ ডিবেকি। দীর্ঘাঙ্গী অভিনেত্রী তাঁর শরীরী ভাষা, চোখের দৃষ্টি, লাজুক ভঙ্গি দিয়ে যেন ডায়ানার ছায়া। ডোডি আল ফায়েদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, উইলিয়াম-হ্যারির সঙ্গ পাওয়ার আকুলতা, সংবাদের শিরোনাম দখলের জন্য চার্লসের সঙ্গে রেষারেষি এবং সেই দুর্ঘটনা, যা ডায়ানাকে অমর করেছে আর রাজপরিবারকে চিরকালীন ভিলেন... এ সবই ছুঁয়ে গিয়েছেন নির্মাতারা। বেশি কিছু দেখানোর অবকাশও ছিল না। খাতা জমা দেওয়ার মুহূর্তে যদি কেউ দেখে রাশি রাশি লেখা বাকি, তা হলে যেমন অবস্থা হয় আর কী!

সিজ়নের শেষ ছ’টি পর্বে শুধুই রানি আর প্রিন্স উইলিয়াম। চার্লস (ডমিনিক ওয়েস্ট) আছেন বটে, কিন্তু বাস্তবের মতো সিরিজ়েও তিনি উপেক্ষিত নায়ক। সমালোচনার সাইক্লোনে প্রেমের তরী ভাসিয়েছিলেন ক্যামিলা পার্কার বোলস (অলিভিয়া উইলিয়ামস) ও চার্লস। ডায়ানার মৃত্যুর পর গোটা দুনিয়া ‘আদার উওম্যান’কে কাঠগড়ায় তুলেছে। সইতে হয়েছে রাজপরিবারের ঔদাসীন্য। কথাতেই আছে, যে সয়, সে রয়। ক্যামিলা আজ ব্রিটেনের রানি।

সিজ়ন ফিনালে যেন ফিরে দেখার পর্ব। দ্বিতীয় হওয়ার যে আক্ষেপে মার্গারেট ভুগতেন, তা যেন হ্যারির ক্ষেত্রেও ফিরে এসেছে। প্রথমের দায়িত্ব দ্বিতীয়র হাত ধরা। এলিজ়াবেথ-মার্গারেটের সখ্য হ্যারি-উইলিয়ামের মধ্যে স্থায়ী হয়নি। তবে সিরিজ় হাল আমলের বিতর্কে ঢোকেনি। কেট মিডলটন-উইলিয়ামের প্রেম-পর্বটুকুই ঠাঁই পেয়েছে। এ নিয়েও জলঘোলা হচ্ছে। কেট-উইলিয়ামের সম্পর্ক তৈরির পিছনে কেটের মায়ের ইন্ধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্মাতারা, যার সত্যতা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করে দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

চরিত্রাভিনেতা নির্বাচন এই সিরিজ়ের জোরের জায়গা। এড ম্যাকভি ও লুথার ফোর্ডের সঙ্গে উইলিয়াম ও হ্যারির আশ্চর্য রকমের চেহারাগত মিল। তবে একই সিজ়নে দু’বার করে এই দুই চরিত্রের মুখ বদল নির্মাতাদের হঠকারিতার পরিচয় দেয়। ‘দ্য ক্রাউন’ গোড়ায় যে উচ্চাশা তৈরি করেছিল, শেষের দিকে এসে তাল কেটেছে। পঞ্চম সিজ়ন তেমন দানা বাঁধেনি। ষষ্ঠ সিজ়নও ঘটনার ভারে এলোমেলো হয়েছে। সমাপ্তি-পর্বকে সামলে দিয়েছে কিছু মুহূর্ত। রানি কেন চার্লসকে সিংহাসন ছেড়ে দিচ্ছেন না? ক্ষমতার লোভ, না দায়িত্ববোধ? রানির আত্মকথন, মানসিক দোলাচলের অংশগুলো মন ছুঁয়ে যায়। ফিলিপের (জোনাথন প্রাইস) অংশ এ বার কমই। চার্লস-উইলিয়ামের মধ্যকার বোঝাপড়ার দৃশ্যগুলোয় ফিলিপ যেন বিবেকের কাজ করে। জীবনসায়াহ্নে এসে রানির সঙ্গে ফিলিপের টুকরো দাম্পত্য-আলাপও সুন্দর। চার্লস কি উইলিয়ামকে নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন? মায়ের ক্যারিশমা তো কিছুটা হলেও সঞ্চারিত হয়েছে ছেলের মধ্যে... এমন কিছু প্রশ্ন উস্কে দেওয়া হয়েছে।

সেট, প্রপস, পোশাক— প্রতিটি বিভাগেই গোড়া থেকে নিখুঁত থাকার চেষ্টা করেছে ‘দ্য ক্রাউন’। কিছু মুহূর্ত ইতিহাসের পাতা থেকে হুবহু উঠে এসেছে। কিছু কল্পনাকে আশ্রয় করেছে। কল্পনা আর বাস্তবের সাঁকো ‘দ্য ক্রাউন’কে দর্শকের হৃদয় পার করিয়েছে, এ বারও।

অন্য বিষয়গুলি:

The Crown Television Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE