সুশান্ত সিংহ রাজপুত চলে গেলেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। আর তাঁর অভিনীত শেষ চরিত্র ম্যানির পর্দায় মৃত্যু হল ২৪ বছরে। রিয়্যাল ও রিলের ব্যবধান বছর দশেকের। ঘড়ির কাঁটা যেন ছুটছে পিছনের দিকে। দশ বছর আগের সুশান্ত কি মৃত্যুকে জীবনের চেয়ে বড় করে দেখেছিলেন?
রিয়্যাল ও রিলের এই দোলাচলের জন্যই মুকেশ ছাবরা পরিচালিত প্রথম ছবি ‘দিল বেচারা’ আলোচনার কেন্দ্রে। সুশান্ত বেঁচে থাকলে এই ছবি সমালোচকদের কতটা প্রশংসা বা নিন্দে পেত, সে প্রশ্ন উহ্য রাখতে চাইলেও ফেলে দেওয়ার নয়। জন গ্রিনের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ইংরেজি ছবি ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর অফিশিয়াল হিন্দি রিমেক এটি। রিমেক বলে নয়, স্বতন্ত্র ছবি হিসেবেও খুব সাধারণ মানের। তার দায় অবশ্য সুশান্ত বা ছবির বাকি অভিনেতাদের নয়। অভিযোগ সবটাই পরিচালকের কাছে।
প্রেম, বিরহ, মৃত্যু, ট্র্যাজেডি... আবেগ চিরন্তন ও সর্বজনীন। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তার ভাষা বদলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে বদলে নিতে হয়। তা না হলে ইন্ডিয়ানাপলিসের আবেগ জামশেদপুরের চার দেওয়ালের মধ্যে খাপ খেতে পারে না। ইংরেজি ছবির হেজ়েল ও অগাস্টাস হিন্দিতে কিজ়ি বসু (সঞ্জনা সাংঘি) এবং ইম্যানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র ওরফে ম্যানি (সুশান্ত)। মুখ্য চরিত্রদের নামের ক্ষেত্রে যে চমকের কথা ভাবা হয়েছে, তার প্রতিফলন চিত্রনাট্য ও সংলাপে দেখা গেলে ছবিটি উপভোগ্য হতে পারত।
দিল বেচারা
পরিচালনা: মুকেশ ছাবরা
অভিনয়: সুশান্ত, সঞ্জনা,
শাশ্বত, স্বস্তিকা
অ্যাডাপটেশনের মূল সুর বাঁধা থাকে সিঙ্ক্রোনাইজ়েশনে। ইংরেজি ছবির হুবহু অনেক দৃশ্যই রয়েছে হিন্দি ভার্সনে। ছবিটিকে পুরোপুরি দেশজ বানাননি মুকেশ। আবার বলিউডি স্পুফের যে অংশগুলি ছবিতে রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত ক্লিশে এবং প্রাণহীন। মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে গিয়ে ছবির ব্যালান্স সামলাতে পারেননি পরিচালক। তাই হাতেগোনা কয়েকটি দৃশ্য ছাড়া কিজ়ি আর ম্যানির প্রেমকাহিনি দাগ কাটে না।
পরিচালকের সঙ্গে চিত্রনাট্যকার শশাঙ্ক খৈতান ও সুপ্রতিম সেনগুপ্তও এর জন্য দায়ী। যাঁরা ইংরেজি ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা ‘সিঙ্ক’-এর অভাব বেশি ভাল করে বুঝবেন। যেমন, ম্যানির মুখে সিগারেট রাখার ‘মেটাফর’। ইংরেজি ছবিতে এর ব্যাখ্যা রয়েছে। ব্যাখ্যাবর্জিত ঘটনার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ভাল ছবির গুণ নয়।
তবে অভিযোগের ঝুলি যাঁর মুখ চেয়ে সকলে এড়িয়ে যাচ্ছেন, তিনিই এই ছবির ‘দিল’। নবাগতা সঞ্জনা নিজের চরিত্রে বেশ ভাল, স্বতঃস্ফূর্ত। তবে দর্শকের চোখে জল আসবে সুশান্তের জন্যই। কারণ সেই রিয়্যাল ও রিলের মেলবন্ধন। এ আর রহমানের মিউজ়িক ট্র্যাজেডিকে গল্পের চেয়েও বেশি ভাল ধরেছে। সেটা ছবির উত্তরণের একটি পথও বটে। ছবি যত এগিয়েছে, সুশান্তের অভিনয় তত পরিণত হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর ম্যানিকে দেখে চোখের কোণ ভিজবে। সেরা দৃশ্য বোধহয় বৃষ্টিভেজা লনে ম্যানি ও কিজ়ির বাবার (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) একসঙ্গে বিয়ার খাওয়া। স্বল্প পরিসরেও শাশ্বত তাঁর জাত চিনিয়েছেন। কিজ়ির মায়ের চরিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বেশ ভাল।
দেশজ ছবি বলেই হয়তো কিজ়ির মা ও বাবার চরিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ভার্সনে মা-ই প্রাধান্য পেয়েছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত অষ্টাদশীর বাঙালি মা মাছ-সন্দেশের পাশাপাশি মেয়ের ‘সতীত্ব’ অটুট থাকা নিয়েও চিন্তিত। আবার প্যারিসে যাওয়ার পরে সেই ‘অ্যাংরি-ইয়ং-উওম্যান’-এর (কিজ়ি এই শব্দবন্ধনী দিয়ে তার মাকে পরিচয় করায়) মন কেন গলে গেল, তা ঠিক স্পষ্ট হল না। সেফ আলি খানের চরিত্রটিও ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
তবে সুশান্তকে ছবিতে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ দেখানোর যে চেষ্টা ছিল, তা বেশ বোঝা যায়। কিজ়ির মায়ের প্রশ্নে যখন ম্যানি বলে ‘আমি অ্যাস্ট্রোনট। পরের মাসেই নাসায় যাব...’ দর্শকের বুঝতে অসুবিধে হয় না, এই ইচ্ছে আসলে কার। গল্পে সুশান্তের এই সংলাপের কোনও রেফারেন্স পয়েন্ট নেই।
কিজ়িকে লেখা শেষ চিঠিতে ম্যানি বলে, ‘‘জন্ম-মৃত্যু আমাদের হাতে নেই। আছে শুধু বেঁচে থাকা।’’ তাঁর অভিনীত চরিত্রের সংলাপই তাঁকে এখন বলতে চাইছেন অসংখ্য অনুরাগী। তারার দেশ থেকে সুশান্ত কি তা শুনতে পাচ্ছেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy