Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Movie Review

‘টেক্কা’য় ‘সৃজিতীয়’ চমক, কেমন লাগল দেব রুক্মিণী টোটার রসায়ন? জানাল আনন্দবাজার অনলাইন

এই ছবির নায়ক কিন্তু দেব নন, রুক্মিণী মৈত্র। স্বস্তিকা আছেন, টোটাও আছেন। এমনকি পোড়খাওয়া পরান বন্দ্যোপাধায়ও আছেন।

Image of Dev

‘টেক্কা’ ছবিতে দেব। ছবি: সংগৃহীত।

সুদীপ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩২
Share: Save:

যখন তিনি থ্রিলার ছবি বানান, তখন সৃজিত মুখোপাধ্যায় সেই ছবির চলনে নিজের একটা ছাপ রেখে যান বরাবর। মনে করুন, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘চতুষ্কোণ’— সৃজিতের পেশায় আসার একেবারে প্রথম দিকের দু’টি ছবি। বাংলা থ্রিলার ছবি সাম্প্রতিক অতীতে এ ভাবে কেউ বানাননি। এতটাই রুদ্ধশ্বাস ছিল সেগুলি। দর্শক তার উপযুক্ত মূল্যও দিয়েছিলেন। সৃজিত প্রায় এক রাত্তিরেই বাংলা সিনেমার ‘পোস্টার বয়’ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী কালে তাঁর ‘ভিঞ্চি দা’ বক্স অফিসে সফল হলেও সব ধরনের মানসিকতার দর্শককে মাতাতে পারেনি। আনন্দের খবর হল, ২০২৪-এর পুজোয় সৃজিতের তৈরি ‘কিডন্যাপ থ্রিলার’ ছবি ‘টেক্কা’ বেশ ক’বছর পরে প্রায় সব মানসিকতার দর্শককে আবার মাতাতে পারে।

কিন্তু, ‘উৎসবের ছবি’ হিসাবে ‘টেক্কা’র অনেক গুণাগুণ থাকলেও সে ছবিকে এ ক্ষেত্রে বেশি নম্বর দেওয়া গেল না। তার কারণ, সংলাপে প্রচুর অপশব্দের প্রয়োগ। পরিবারের সব বয়সের সদস্যকে নিয়ে এ ছবি একসঙ্গে বসে দেখতে হয়তো কিছুটা দ্বিধা বোধ করবেন অনেক দর্শকই। দুঃখের হলেও এটা সত্যি যে, বাঙালি আজও সম্পূর্ণ প্রাপ্তমনস্ক হয়ে উঠতে পারেনি। আর এখানেই ‘উৎসবের ছবি’ হিসাবে ‘টেক্কা’ একটু পিছিয়ে থাকবে। তা ছাড়া ‘টেক্কা’য় উৎসবের বাকি সব মশলা মজুত। রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা, গতিশীলতা, ভাল অভিনয়, ঘটনার ঘনঘটা, জটিল মনস্তাত্ত্বিকতা— অর্থাৎ, এই সময়ে দর্শক আকর্ষণ করতে যা-যা লাগে, তার সবটাই এ ছবিতে হাজির। যদিও অপভাষার প্রয়োগ ছবির ওই মুহূর্তগুলিতে সৃজিত সংলাপ লিখিয়ে হিসাবে চাইলেও এড়াতে পারতেন না। একজন অল্পশিক্ষিত অপহরণকারী যখন বন্দুকের নল উঁচিয়ে হুমকি দেয়, তখন তার ভাষ্যে বাংলায় ‘খিস্তি’ এসে যাওয়াটা স্বাভাবিক সংলাপেরই দাবি।

Image of Rukmini Maitra and Swastika Mukherjee

‘টেক্কা’র দুই নারী রুক্মিণী মৈত্র ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

এই ছবির নায়ক কিন্তু দেব নন, রুক্মিণী মৈত্র। স্বস্তিকা আছেন, টোটাও আছেন। এমনকি পোড়খাওয়া পরান বন্দ্যোপাধায়ও আছেন। কিন্তু, এঁরা কেউ নায়কের জায়গা নিতে পারেননি। সেখানে সম্পূর্ণ ছবি জুড়ে মাতিয়ে দিয়েছেন একা রুক্মিণী। ভীষণ শহুরে, অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী এক পুলিশের চরিত্রে রুক্মিণীকে সৃজিত অনেকটা জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন চিত্রনাট্যে। এবং কী সাবলীল অভিনয় করেছেন ভদ্রমহিলা! দেখে মনে হয়, যেন শানানো ছোরা। এতটাই সাবলীল তাঁর বাচনভঙ্গি এবং হাবভাব। মননশীল, বলিষ্ঠতার ছাপ সব কিছুতেই। সে সঙ্গীর প্রতি তাঁর ছোট্ট বাক্যোচ্চারণেই হোক, বা অপহরণকারীর সঙ্গে দর কষাকষিতেই হোক।

তবে এ কথা না স্বীকার করে উপায় নেই যে, ‘টেক্কা’র প্রারম্ভিক অনুপ্রেরণা একটি হলিউডি ছবি। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ম্যাড সিটি’। প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডাস্টিন হফম্যান ও জন ট্রাভল্টা। ‘ম্যাড সিটি’র ট্রাভল্টার চরিত্রটি ‘টেক্কা’য় করছেন দেব। আর ডাস্টিনের চরিত্রটি এখানে করছেন রুক্মিণী। এমনকি, মূল ছবিতে যে টেলিভিশন সাংবাদিকের চরিত্রটি ছিল, সেটি এখানে ভাগ হয়েছে দুই নতুন অভিনেতার মধ্যে— আরিয়ান আর এক নবাগতা সে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু, মূল অনুপ্রেরণার ব্যাপারে কোনও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেননি সৃজিত, ছবির কোথাও। এটি ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। অবশ্য ‘ম্যাড সিটি’ও একই দোষে দুষ্ট ছিল। ‘শিকাগো সান’ সংবাদপত্রের সিনেমা সমালোচক রজার এবার্ট লেখার সময় ছবির রেটিং-এ এই কারণে নম্বর কাটেন। ৪-এ ২ দিয়েছিলেন তিনি, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, ‘ম্যাড সিটি’ আসলে পূর্ববর্তী সিনেমা ‘এস ইন দ্য হোল’-এর অনুকরণ। আমরা অত কড়া মনোভাব নিতে পারছি না, তার একমাত্র কারণ, সৃজিত অনুপ্রেরণা নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু গল্পটিকে নিজস্ব একটি মাত্রা দিতে সমর্থ হয়েছেন। এটাই ‘সৃজিতীয়’ প্রতিভা। ওই যে শুরুতেই লিখলাম, থ্রিলার বানালে সৃজিত তাতে একটা নিজস্ব মাত্রা যোগ করেন। সেটি এখানেও উপস্থিত।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ছবিতে গানগুলি কানে আরাম দেয়। রণজয় ভট্টাচার্যের আবহে নিজস্ব সুরে গান গেয়েছেন কবীর সুমন, অনুপম রায় ও আরও এক জন। অবশ্য সৃজিতের সব সিনেমাতেই গান এবং সুর বিশেষ জায়গা দখল করে রাখে। যিনি নিজে মাউথ অর্গান বাজান অনায়াসে, তেমন মানুষের সিনেমায় সুরের খেলা অনুপস্থিত থাকবে এমন তো হতে পারে না! স্বভাবতই।

সব মিলিয়ে ‘টেক্কা’য় একটি বাংলা বাণিজ্যিক সফল ছবির মালমশলা সবটাই উপস্থিত। পুজোয় এ বার বক্স অফিসের লড়াই যে জমে যাবে, এ কথা বলে ফেলাই যায় এখন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE