Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Movie Review

ভুলভুলাইয়া ৩: দীপাবলির উৎসবে ছবি দেখে হতাশ দর্শক, দু’টি পটকা ফাটালেও কি বেশি মজা হত?

অসংখ্য নামী অভিনেতার উপস্থিতি, কিন্তু তাঁদের ব্যবহার করা হল না ছবিতে। বদলে, দর্শক টানার কৌশল করা হল নাচের মঞ্চে বিদ্যা বালন আর মাধুরী দীক্ষিতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে।

Review of the film Bhool Bhulaiyaa 3 directed by Anees Bazmee starring Vidya Balan Kartik Aaryan and Madhuri Dixit

দীপাবলিতে মুক্তি পেয়েছে আনিস বাজ়মি পরিচালিত ছবি ‘ভুলভুলাইয়া ৩’। ছবি: সংগৃহীত।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪০
Share: Save:

ভূত কে?

হেমন্তের হিমেল সন্ধ্যায় এই তো মূল প্রশ্ন। সে প্রশ্নকে সামনে রেখেই জনপ্রিয় হিন্দি ছায়াছবি ‘ভুলভুলাইয়া’র তৃতীয় পর্ব মুক্তি পেয়েছিল নভেম্বরের পয়লা তারিখে। সে রাতে আবার দীপাবলি। সারা দেশ আনন্দ মুখরিত। প্রদীপের আলো আর আতশবাজির রোশনাই মেখেও মানুষ জড়ো হয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহের সামনে। প্রত্যাশা ছিল, টান টান বিনোদনে আরও খানিকটা বাড়বে উৎসবের মৌতাত। সকলেই চেয়েছিলেন এক বার মঞ্জুলিকাকে দেখতে। মঞ্জুলিকা কি ভূত? কার শরীর আশ্রয় করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করছে সে? প্রশ্ন ওঠে বার বার। উত্তর দেয় রুপোলি পর্দা। জনপ্রিয় হয় ছায়াছবি।

বাঙালির সঙ্গে ‘ভুলভুলাইয়া’ সিরিজ়ের একটা যোগ রয়েছে। প্রথম কারণ গান। বলিউডে রাজত্ব করা বাঙালি গায়িকা শ্রেয়া ঘোষাল যখন ‘মেরে ঢোলনা শুন...’ গানের সঞ্চারীতে গেয়ে ওঠেন ‘আমি যে তোমার, শুধু যে তোমার...’ তখন বাঙালি শিহরিত না হয়ে পারে না। তবে শুধু এটুকুই নয়। বাঙালির সঙ্গে ভূতের যোগও বিস্তর। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পরশুরাম হয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত বাঙালির ভুতুড়ে সাহিত্য বিলাস। বাদ পড়েন না রায়বাড়ির উপেন্দ্রকিশোর থেকে লীলা মজুমদার। স্বয়ং সত্যজিৎ জানিয়েছিলেন, ‘গুগাবাবা’ বাঙালির কাছে যে প্রভাব রেখেছে, সারা দুনিয়ার কাছে তা রাখেনি। ফলে বাঙালির ভূত-ভালবাসা কম নয়। তার প্রমাণ রেখেছেন অনীক দত্তও।

Review of the film Bhool Bhulaiyaa 3 directed by Anees Bazmee starring Vidya Balan Kartik Aaryan and Madhuri Dixit

‘ভুলভুলাইয়া’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তৃতীয় ছবিতে কার্তিক আরিয়ানের সঙ্গে ফিরেছেন বিদ্যা বালন, যোগ দিয়েছেন মাধুরী দীক্ষিতও। ছবি: সংগৃহীত।

তাই দীপাবলির সন্ধ্যায় কিছুটা বেশি প্রত্যাশা ছিল ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ এর প্রতি। আগের দুই ‘ভুলভুলাইয়া’য় প্রত্যাশা খানিক পূরণ হলেও তৃতীয় পর্ব জুড়ে ভূতের ছবির নামে যা দেখা গেল, সেটা যে ঠিক কী, তা বুঝতেই অনেকটা সময় লেগে গেল। জোর করে হাসানোর চটুল চুটকি, প্রত্যেক দৃশ্যে অকারণ কান ফাটানো ঝঙ্কার ‘বিটস’ মিলে ভূতের বদলে এক কিম্ভূতকিমাকার জগাখিচুড়ির স্বাদ নিয়েই ফিরতে হল দর্শককে। অসংখ্য নামী অভিনেতার উপস্থিতি, কিন্তু তাঁদের ব্যবহার করা হল না ছবিতে। বদলে, দর্শক টানার কৌশল করা হল নাচের মঞ্চে বিদ্যা বালন আর মাধুরী দীক্ষিতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে। সঞ্জয় মিশ্র বা রাজপাল যাদবের মতো অভিনেতাকে দিয়ে অকারণ হাসানোর চেষ্টা হল। শেষ দৃশ্যে যদিও গোটা ছবির গোঁজামিলকে খানিকটা যৌক্তিক করার চেষ্টা হল। কিন্তু তত ক্ষণে যে বড় দেরি হয়ে গিয়েছে।

এ সবের মধ্যেও বলতেই হয়, কার্তিক আরিয়ানকে কিছুটা যথাযথ ব্যবহার করা হয়েছে। ভূত ধরার ‘রুহু বাবা’ চরিত্রটি যখন নানা জনকে ঠকিয়ে বেড়ায়, তখন ভালই লাগে। সে ভাবেই সে এক কোটির একটি প্রকল্পের বরাত পায় এই আজব রাজপরিবারের থেকে। রাজপ্রাসাদে রাজপরিবারের সদস্যেরা ভূতের ভয়ে থাকতে পারেন না, থাকেন গোয়ালঘরে। দারিদ্রের জন্য অতিথিকে শুকনো রুটি খেতে দেওয়া হয়, শুকিয়ে গিয়েছে রাজপরিবারের গরু। ছোট ছোট এইসব হাস্যরস মন্দ নয়। কিন্তু রাজকন্যে চরিত্রে তৃপ্তি ডিমরি তেমন নজর কাড়তে পারলেন না। চরিত্রের দিক থেকে নয়। বিদ্যা বা মাধুরীর পাশে ‘গ্ল্যামার’-এ তো নয়ই।

Review of the film Bhool Bhulaiyaa 3 directed by Anees Bazmee starring Vidya Balan Kartik Aaryan and Madhuri Dixit

আর একটি জিনিস এ ছবিতে খুবই বেমানান। তা হল কলকাতা ও তার ইতিহাসকে অকারণ ব্যবহার। একটি শহরকে যখন ছবির চরিত্র হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, তখন আরও একটু গবেষণা প্রত্যাশা করেন দর্শক। অন্তত কলকাতার দর্শক তো বটেই। সিংহাসন দখলের লড়াই নিয়ে বাংলায় রয়েছে অনেক শিশু আখ্যানও। শীর্ষেন্দুর যে অদ্ভুতুড়ে জগতেও রয়েছে এমন অনেক রাজারাজড়ার কথা। কিন্তু সে জন্যে ‘বাংলা’ নামে এমন জনপদের ছবি আঁকার প্রয়োজন হয়নি, যেখানে বাংলার কোনও বৈশিষ্ট্যই নেই। ফলে শুধু চিত্রায়নে রবীন্দ্র সেতু দেখিয়ে কলকাতা বোঝানোর প্রয়াস ব্যর্থ। সে যতই বিদ্যা বালন প্রচারে এসে হাওড়া ব্রিজের উপর নাচুন বা আরজি কর-কাণ্ডের কথা বলুন। চিত্রনাট্য রচনায় আরও গবেষণার প্রয়োজন ছিল। যেমন দরকার ছিল, বাংলা ভাষা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া।

ছবিতে শুধু ‘আমি যে তোমার’ গানটির ব্যবহার ভাল লাগে। বাকি গানগুলি অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। ছবি শেষ হলে দর্শকের মনে হতেই পারে, উৎসব মরসুমে এতটা সময় নষ্ট করার প্রয়োজন কি আদৌ ছিল? ৮ থেকে ৮০-র দর্শক টানতে যে বিনোদন ডালি তৈরি করা হয়েছে, হয়তো তার থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারত দু’টি ফুলঝুরি বা একটি তুবড়ি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE