এ ছবি দেশজ জাতীয়তাবাদে সিক্ত। ছবি: সংগৃহীত।
গত বছরের মাঝামাঝি হৃতিক রোশন ইনস্টাগ্রামে তাঁর একটি ছবি দিয়েছিলেন, যা দেখে টম ক্রুজ়ের ‘টপ গান’ বলে বিভ্রম হতে পারে। তখন সিদ্ধার্থ আনন্দের ‘ফাইটার’-এর শুটিং করছেন হৃতিক। বলিউড অ্যাকশন-ড্রামায় সিদ্ধ। কিন্তু পুরোদস্তুর এরিয়াল অ্যাকশনটা বাকি ছিল। ‘ফাইটার’ সিদ্ধার্থের ‘দেশি টপ গান’। তবে ছবি দেখলে আগের বিভ্রম কেটে যাবে। স্টাইলাইজ়ড অ্যাকশন ছাড়া টম ক্রুজ়ের ছবির ছোঁয়া নেই। এ ছবি দেশজ জাতীয়তাবাদে সিক্ত।
পুলওয়ামার ঘটনা, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক এবং দু’দেশের বায়ুসেনার ডগফাইট, ক্যাপ্টেন অভিনন্দন বর্তমানের পাকিস্তানে বন্দি হওয়া, পাক সীমান্তের ভিতরে থাকা জইশ-এর ক্যাম্পে ভারতীয় এয়ারফোর্সের হামলা... একাধিক সত্যি ঘটনা আধার করে ‘ফাইটার’ তৈরি। সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, বাস্তব আর কল্পনার মিশেলেই তাঁর ছবি। তাই অতিরঞ্জনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা বেশ করেছেন। পাইলটের সিটে হৃতিক রোশন থাকলে, তুচ্ছ ডিটেলস নিয়ে কে ভাবে! সব নজর তো শামশের পাঠানিয়া ওরফে প্যাটির (হৃতিক রোশন) দিকে। এন্ট্রি সিন থেকে ক্ল্যাইম্যাক্সের অ্যাকশন... মাল্টিপ্লেক্সের দর্শকও সিটি দিচ্ছেন!
পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-এর মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনা বিশেষ টিম গঠন করে। তার নেতৃত্বে রাকেশ জয় সিং ওরফে রকি (অনিল কপূর)। টিমে রয়েছে স্কোয়াড্রেন লিডার প্যাটি, মিনল রাঠোর বা মিনি (দীপিকা পাড়ুকোন), সরতাজ গিল (করণ সিংহ গ্রোভার), বশির খান (অক্ষয় ওবেরয়)-সহ জনা পাঁচেক। প্যাটি আর রকির সম্পর্কে যে কাঠিন্য আছে, তা ছবির শুরুতেই বোঝা যায়। মহড়ার সময়েই রকি সতর্ক করে প্যাটিকে, সে যেন কোনও ‘ফ্যান্সি স্টান্ট’ না করে। সতর্কবাণীর নেপথ্যে প্যাটির অতীতের গোঁয়ারতুমি রয়েছে। গল্পে নতুন কিছু নেই। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আদি অকৃত্রিম ভারত-পাক বিবাদ। জইশের সন্ত্রাসবাদী আজ়হার আখতার (ঋষভ সওহনে) এ ছবির ভিলেন। কঠিন চিবুক, লাল চোখ এবং স্মুদনিং করা চুলের এই ভিলেনই পাক সেনাবাহিনীকে টপকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। এমন এক ভিলেনের সঙ্গে নায়কের মুখোমুখি লড়াই হবে না? পরিচালক তাই সময় মতো নায়ককে আকাশ থেকে নামিয়ে ভিলেনের সঙ্গে হাতাহাতির অ্যাকশন সিন সাজিয়ে দিয়েছেন।
এ সবের বাইরে কিছু সাবপ্লট, পার্শ্বচরিত্র এবং হৃতিক-দীপিকার প্রেমও রয়েছে। ‘ফাইটার’-এর জন্য নিজেকে আলাদা ভাবে গড়েছেন হৃতিক। ইউনিফর্ম পরেই থাকুন কী আদুড় গায়ে, তার দিক থেকে চোখ সরানো দায়! উল্টো দিকে হালকা মেকআপে দীপিকাকে স্নিগ্ধ লেগেছে। তবে হৃতিক-দীপিকার নিভু নিভু আঁচে বসানো প্রেম শেষমেশ ঠান্ডাই রয়ে গেল। হিন্দি সিনেমার দুই ‘হট’ অভিনেতা দর্শককে তাঁদের প্রেমের প্রেমে ফেলতে পারলেন না। হৃতিকের মতো পরিসর না পেলেও দীপিকার চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পুরোভাগে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেয়েরা নজর কেড়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মিনলের চরিত্রটা যেন আলাদা মর্যাদা পায়। অনিল কপূর, করণ সিংহ গ্রোভার নিজেদের চরিত্রে যথাযথ।
‘ওয়র’, ‘পাঠান’-এর পরিচালক সিদ্ধার্থ গ্ল্যামারাস ভিসুয়াল নির্মাণে দক্ষ। আকাশপথে লড়াইয়ের অংশগুলো দেখার মতো। ‘ডিউন’ বা জেমস বন্ডের ছবির ভিএফএক্স সংস্থা ‘ফাইটার’-এর দৃশ্যায়নের পিছনে রয়েছে। সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং আবহসঙ্গীত সেই দৃশ্যায়ন আরও খোলতাই করেছে।
তবে শুধু দর্শনীয় ভিসুয়াল নয়, সিদ্ধার্থের ছবির দর্শনও আছে। লোকসভা নির্বাচনের বছরে প্রজাতন্ত্র দিবসে যে ছবি মুক্তি পাচ্ছে, সেখানে গা গরম করা সংলাপ থাকাটাই দস্তুর— ‘‘অগর হম বত্তমিজ়ি পে উতর আয়ে তো তুমহারা হর মহল্লা আইওপি বন জায়েগা, ইন্ডিয়া-অকুপায়েড-পাকিস্তান।’’ কিংবা ‘‘উনহে দিখানা পড়েগা কে, বাপ কৌন হ্যায়।’’ প্রতিটি সংলাপে হাততালি...
স্পিলবার্গ প্রযোজিত ‘মাস্টার অব দি এয়ার’ সিরিজ়টি নিয়ে চর্চা চলছে। বাস্তবকে আধার করে সেটিও একটি এরিয়াল অ্যাকশন ড্রামা। কিন্তু বিনোদনের তাগিদে চোখে আঙুল দিয়ে সেখানে জাতীয়তাবাদ গুঁজে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এ তো বলিউড। বিনোদনের বাপ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy