‘পগলৈট’ ছবির দৃশ্য
পগলৈট
পরিচালনা: উমেশ বিশ্ত
অভিনয়: সানিয়া, সায়নী, আশুতোষ, শিবা, রাজেশ, রঘুবীর
৬.৫/১০
বাড়ির জোয়ান ছেলের অকালমৃত্যু। শোকের আবহেই পারিবারিক কূটকচালির ফিসফাস। পাঁচ মাসের দাম্পত্য পেরিয়ে সদ্য বিধবা সন্ধ্যার (সানিয়া মলহোত্র) মা তাকে জড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে। স্বামীর মৃত্যুসংবাদের পোস্টে কমেন্টের সংখ্যা গুনে মাকে আশ্বস্ত করছে সন্ধ্যা, ‘এত কান্নাকাটি কোরো না।’
নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত উমেশ বিশ্তের ছবি ‘পগলৈট’-এর ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিল, এটা হয়তো কোয়ার্কি-কমেডি। আসলে এটি ‘স্লাইস-অব-লাইফ’। বহিরঙ্গে আর অন্তরে যে বৈষম্য সন্ধ্যার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য, ছবির গল্প বলার ধাঁচেও সেই ধারা স্পষ্ট। পেঁয়াজের খোসার মতো এক একটি পরত ছবিজুড়ে খুলছে এবং ধাক্কা দিচ্ছে জানা-শোনা ধারণাগুলিকে।
সন্ধ্যার শ্বশুরমশাই শিবেন্দ্র গিরি (আশুতোষ রানা), শাশুড়ি ঊষা (শিবা চড্ডা)। পুত্রশোকের পাশাপাশি বাড়ির দেনা কী ভাবে শোধ করা হবে, সেই চিন্তাও কুরে কুরে খায় অসহায় দম্পতিকে। বড় ছেলে ভাল রোজগেরে বলেই যে শিবেন্দ্র আগেভাগে অবসর নিয়েছিল! সন্ধ্যার জ্যাঠাশ্বশুরের চরিত্রে রঘুবীর যাদব। বড় ভাইয়ের মুখাগ্নি করেছে বলে বাড়ির ছোটকে সে নিয়মের জালে বেঁধে দেয়। এ দিকে নিজে ছাদে লুকিয়ে মদ খায়। তার সঙ্গী ভাই তরুণ, (রাজেশ তৈলাং) যার সঙ্গে শিবেন্দ্রর বনিবনা নেই। এমন পরিবারের পুত্রবধূ সন্ধ্যা, যে স্বামীর মৃত্যুর পরে সফ্ট ড্রিঙ্ক আর ফুচকা খাওয়ার বাসনা সামলাতে পারে না। বিষয়টা কি অস্বাভাবিক?
অস্বাভাবিক না হলেও পরিবার-সমাজের চোখে ‘দৃষ্টিকটু’ তো বটেই। সন্ধ্যা জানে সে কথা। তাই অছিলা করেই সে বাড়ি থেকে বান্ধবীর সঙ্গে বেরোয়। স্বল্প দিনের দাম্পত্যে স্বামীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। হয়তো তাই তার অসময়ের মৃত্যুও তাকে বিচলিত করে না। কিন্তু স্বামীর আলমারি থেকে পাওয়া তার প্রাক্তন প্রেমিকা আকাঙ্ক্ষার (সায়নী গুপ্ত) ছবি দেখে সন্ধ্যার হিংসে হয়, কষ্ট হয়। বেঁচে থাকতে যে মানুষটাকে সে জানতে পারেনি বা চায়নি, তাকেই তার প্রাক্তনের চোখ দিয়ে চিনতে চায় সে। সন্ধ্যা আর আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক ছবির অন্যতম প্রাপ্তি। এদের দেখে ‘ডোর’ ছবির মীরা আর জ়িনাতের বন্ধুত্বের কথাও মনে পড়তে পারে। মৃত্যু যে সব ফাঁক মিলিয়ে দেয়!
ছবিটি আদ্যন্ত নারীবাদী। ইংরেজিতে এম.এ. সন্ধ্যার চাকরি করার প্রয়োজনীয়তা তার বাবা-মা আগে উপলব্ধি করেনি। কিন্তু স্বামী যখন ৫০ লক্ষ টাকার জীবনবিমা তার নামে রেখে যায় এবং সেই টাকায় পরিবারের অনেকেরই নজর, তখন সন্ধ্যার মা বলে, ‘শিক্ষিত মেয়ে ঠিক নিজের বন্দোবস্ত করে নেবে। শ্বশুরবাড়িতে আর থাকার দরকার নেই।’ শিক্ষা, চাকরি, ক্ষমতায়ন নারীবাদী মুদ্রার একটা পিঠ। অন্য পিঠে রয়েছে, স্বামী-পরিত্যক্তা, সন্তানহীনা, স্বামী-শাশুড়ির সেবায় ব্রতী নারীরা। ছবিতে সন্ধ্যার মতো করে আর কোনও নারীচরিত্র খোলসা করা হয়নি। তবে টুকরো টুকরো নারীমুখও ‘পগলৈট’ ছবির বৃহত্তর ক্যানভাস।
সন্ধ্যার চরিত্রে সানিয়া মলহোত্র অনবদ্য। ভাবলেশহীনতা ও ঔদাসীন্যের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ভাবের অভাব থেকে ভাবে উত্তরণের প্রতিটি আবেগ তিনি খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আশুতোষ, শিবা, রাজেশ, রঘুবীরের মতো জাত-অভিনেতারাও সুন্দর। সায়নী গুপ্তও সাবলীল। ছবির শেষটায় একটু তড়িঘড়ি করা হয়েছে বলে মনে হয়। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক অরিজিৎ সিংহ। তবে তাঁর গানগুলি আবহের সঙ্গে মানানসই হলেও, দাগ কাটে না।
উত্তর ভারতের ছোট শহর, নারীবাদ, বাস্তব জীবনের টুকরো ছবি... ফর্মুলাকেন্দ্রিক হয়েও ছবিটি সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পেরেছে। সেখানেই ‘পগলৈট’ সর্বাঙ্গসুন্দর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy