'ফ্লাইওভার' ছবির দৃশ্যে কোয়েল মল্লিক।
বাংলা ছবিতে রিমেকের ধারায় নতুন সংযোজন পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের 'ফ্লাইওভার'। কন্নড় ভাষার মূল ছবি 'ইউটার্ন'-এর বাংলা সংস্করণই কার্যত বলা চলে 'ফ্লাইওভার'কে, বরং কয়েকটি দৃশ্য বাংলা রিমেকটিতে বাদ গিয়েছে। প্রথমেই এটি জানিয়ে রাখার কারণ, নতুন কিছু আশা করে যদি দর্শক হলে যান তবে নিরাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত, যদি মূল ছবিটি দর্শকের আগেই দেখা থাকে, তবে এ আশঙ্কা আরওই বেশি।
লেক ফ্লাইওভারে বেআইনিভাবে ডিভাইডারের ব্লক সরিয়ে ইউটার্ন নেওয়ার ফলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পায়, এবং এই দুর্ঘটনার উপর স্টোরি করার দায়িত্ব এসে পড়ে কলকাতা সংবাদ নামক এক সংবাদ সংস্থার কর্মী বিদিশার (কোয়েল মল্লিক) উপর। বেআইনি ভাবে ব্লক সরানো তেমনই এক বাইক চালক অনন্ত সেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তার বাড়ি পৌঁছলে বিদিশা জড়িয়ে পড়ে তার রহস্যমৃত্যুর তদন্তে। ফ্লাইওভারের ফুটপাথের এক ভিখারির কাছ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে বিদিশা এ ভাবে ব্লক সরিয়ে ইউটার্ন নেওয়া যাত্রীদের বাইকের নম্বর নিত। পরিকল্পনা ছিল, এ সমস্ত বাইকচালকদের শনাক্ত করে তাদের সাথে কথা বলা এবং এই পরিকল্পনার শুরু অনন্ত সেনকে দিয়ে। তার মৃত্যু প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও রহস্য ঘনায় তখন, যখন বিদিশার তালিকাভুক্ত সমস্ত বাইকচালকদের তল্লাশি করতে গিয়ে জানা যায় প্রত্যেকেরই অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে ব্লক সরানোর দিনই। পর পর এই মৃত্যুগুলির যোগসূত্র অনুধাবন করতে গিয়ে এই রহস্যের পাকেচক্রে জড়িয়ে পড়ে বিদিশা। তাকে সাহায্য করে কনস্টেবল অমিত (গৌরব চক্রবর্তী)।
ছবিটিকে ঠিক থ্রিলারের শ্রেণিভুক্ত করা চলে না। বরং একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে হররের ট্রোপ, এবং আবেগের সুড়সুড়ি যা কখনও সামান্য অতিনাটকীয় হয়ে যায় বৈকি। এই তিনের সংমিশ্রণে ছবিকে বড় বেশি দীর্ঘায়িত মনে হয়। প্রথমার্ধ্বে গতি সামান্য শ্লথ, যা দ্বিতীয়ার্ধ্বে খানিক ত্বরাণ্বিত হলেও আবার তা পড়ে যায়। এর ফলে টানটান বেশ কিছু দৃশ্য তৈরি হলেও তা ধরে রাখা যায়নি। গল্প এবং চিত্রনাট্যে যেহেতু প্রায় কোনও অদলবদলই ঘটাননি অভিমন্যু, তাই যেটুকু উত্তেজনা ও শিহরণ দর্শকের প্রাপ্য তার কৃতিত্ব মূল ছবিরই, 'ফ্লাইওভার'-এর নয়।
অবিবাহিত, কর্মরতা এক স্বাধীনচেতা নারীর ভূমিকায় কোয়েল মল্লিক বেশ মাননসই। তবে, কোথাও কোথাও তাঁর অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি, যেমন থানার ভিতরের কিছু দৃশ্যে। তাঁর বিপরীতে এক লাজুক ও মুখচোরা সাংবাদিক রঞ্জনের চরিত্রে রবি শাহকে সামান্য ম্লান লাগে। আড়ষ্টতা তাঁর চরিত্রেরই বৈশিষ্ট্য, তবু তাঁদের যৌথ দৃশ্যে মনে হয় রবি আরেকটু জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারলে তা আরও উপভোগ্য হত। সহৃদয় এক পুলিশ কনস্টেবলের ভূমিকায় গৌরব চক্রবর্তীর সাবলীল ও ঝরঝরে অভিনয় ভাল লাগে। কৌশিক রায় ছোট চরিত্রে যথাযথ। তবে, এই ছবির শো স্টিলার শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। রাশভারী পুলিশকর্তা হিসেবে তাঁর অভিনয় সত্যিই এই ছবির এক পাওনা হয়ে থাকবে।
'ফ্লাইওভার'-এর মূল সমস্যা বুনটের অভাব। সম্পাদনায় দৈর্ঘ্য কিছুটা ছোট করা গেলে হয়তো এই সমস্যা কিছু মাত্রায় মেটানো যেত, এবং ছবিটিও আরও টানটান হতে পারত। থ্রিলারের মধ্যে হররের উপাদান নতুন কিছু নয়, তবে এ ছবিতে যথাযথ প্রয়োগের অভাবে তা শেষ পর্যন্ত দারুণ ভয়ের বা শিহরণের সঞ্চার করতে পারেনি। মৃত রিয়ার প্রেতাত্মার (পৌলমী দাশ) আবির্ভাবের দৃশ্যগুলি বরং অতিনাটকীয়তায় এবং অত্যন্ত চড়া আবহসঙ্গীতে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থই হয়। তবে এমন কিছু দৃশ্য বাদ দিলে বিনীতরঞ্জন মৈত্রের আবহসঙ্গীত ভালই লাগে, বিশেষত তা রহস্য সঞ্চারের ক্ষেত্রে কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনুপম রায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় একটি মাত্র গান 'মনের মধ্যে ভয়' বার বার বিভিন্ন প্রেক্ষিতে শুনতে একঘেয়ে লাগে। মূল গল্পের টানটান রহস্যের দৌলতে 'ফ্লাইওভার'ও এক বার দেখা যেতেই পারে, তবে সে ক্ষেত্রে পরিচালকের তরফে রিমেকে অভিনবত্ব আশা করে না যাওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy