Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lust Stories 2 Review

‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ কি প্রথম ছবির মতো হইচই ফেলবে? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

২০১৮ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল ‘লাস্ট স্টোরিজ়’। ভালমন্দ যেমনই হোক, সাড়া ফেলে দিয়েছিল এই অ্যান্থোলজি ছবি। পাঁচ বছর পর তাঁর দ্বিতীয় ভাগ কি ততটা ছাপ ফেলতে পারল দর্শকের মনে?

Image of Vijay varma and Tamanna Bhatia.

‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ - এ বিজয় বর্মা ও তমন্না ভাটিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ ১৪:০৩
Share: Save:

দর্শক সাধারণত ‘অ্যান্থোলজি ফিল্ম’ দেখতে পছন্দ করে। মানে, যেখানে ছোট ছোট কিছু ছবি জুড়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়। ওটিটি-যুগে এ ভাবে বানানো ছবির সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। এই ধরনের ছবি দেখাও আরামদায়ক। ছোট ছোট ছবি, তাড়াতাড়ি দেখা হয়ে যায়, একটানা সবগুলি না দেখলেও চলে। সবচেয়ে বড় কথা— বেশির ভাগ ছবির গল্পের শেষে যে কোনও ছোট গল্পের মতোই একটা ‘টুইস্ট’ থাকে। তাই দর্শকও মুখিয়ে থাকে এ ছবিগুলি দেখার জন্য। তার উপর যদি তাতে লাস্য, কামনা, ভোগের মতো সুড়সুড়ি থাকে, তা হলে তো দর্শক গোগ্রাসে গিলবে। ২০১৮ সালে সেই ভাবনা থেকেই অনুরাগ কাশ্যপ, জ়োয়া আখতার, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কর্ণ জোহর ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ বানিয়েছিলেন। সে ছবির কোনও গল্প কারও ভাল লেগেছিল, কোনওটা আবার উগ্র মনে হয়েছিল। কিন্তু ছবি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। তাই পাঁচ বছর পর যখন ‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’-এর ঘোষণা করলেন নির্মাতারা, তখন স্বাভাবিক ভাবেই দর্শকের মধ্যে নতুন ছবি নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। আফসোস, ছবিটি দেখার পর আর সেই উত্তেজনার কণামাত্র বাকি থাকবে না।

Image of vijay verma and tamanna Bhatia.

‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ - এ বিজয় বর্মা ও তমন্না ভাটিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

এ বার অবশ্য পরিচালনার ব্যাটন ধরেছেন নতুন চার জন। আর বাল্কি, কঙ্কনা সেনশর্মা, সুজয় ঘোষ এবং অমিত শর্মার নতুন সিজ়নের চারটি গল্প বলেছেন। তবে সে গল্পগুলি শুধুই কামনার নয়। কোনও কোনও গল্পে কামনা, লালসার মাত্রা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে হিংসা, শোষণ, গার্হস্থ্য হিংসাতেও। হয়তো সেটা স্বাভাবিকও। কারণ, গত পাঁচ বছরে ‘লাস্ট’ শব্দটি দর্শকের কাছে অনেক বেশি পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এখন এই ধরনের ছবি বা সিরিজ় অনেক ঘন ঘন তৈরি হয় এবং সহজেই দর্শকের কাছে পৌঁছে যায়। গতে বাঁধা ধারণা ভেঙে ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক এবং যৌন অভিরুচি নিয়ে এখন আলোচনা অনেক বেড়েছে এবং দর্শকের মনের জানলাগুলিও এখন অনেক বেশি খুলে গিয়েছে। তাই হয়তো নির্মাতারা তাঁদের গল্পগুলিকে শুধুমাত্র ‘সোজাসাপ্টা’ কামনায় বেঁধে না রেখে আরও বিস্তৃত পরিসরে বুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে অনেক জায়গাতেই ধাক্কা খেয়েছেন।

চারটি গল্পের মধ্যে একটি বাদে বাকিগুলির লেখনী, বাঁধুনি এবং নির্মাণ— সবই অত্যন্ত দুর্বল। প্রত্যেক পরিচালকেরই নামের ওজন রয়েছে। কিন্তু এখানে তাঁদের গল্পগুলি বেশ ফাঁপা। প্রথম গল্পটি আর বাল্কির। ‘চিনি কম’ এবং ‘কি অ্যান্ড কা’-এর মতো সুন্দর ছবি যিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন, তিনি এখানে বেশ হতাশ করেছেন। এক কমবয়সি জুটির সম্বন্ধ করে বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্রীর ঠাকুরমা চায় বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রী একান্তে করে বুঝে নিক তাদের কামনা-বাসনা মিলছে কি না। ঠাকুরমা সারা দিন পুজোপাঠ করলেও এ সব বিষয়ে বেশ স্পষ্টবক্তা। সেই চরিত্রে নীনা গুপ্তর কমিক টাইমিং অনবদ্য। কিন্তু ওইটুকুই। যাঁরা ট্রেলার দেখেছিলেন, তাঁরা এ গল্পে তার বেশি আর কিছুই পাবেন না। কোনও সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প মার্কা টুইস্ট তো দূরের কথা, গল্পের স্বাভাবিক উড়ানও হবে না।

Image of Tamanna Bhatia.

‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ - এ তমন্না ভাটিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

তৃতীয় গল্প সুজয় ঘোষের। যাঁর নাম শুনলেই এখনও ‘কহানি’ দেখার পর ভাল লাগাটি মনে পড়ে যায়। থ্রিলারে সিদ্ধহস্ত পরিচালক এখানেও সেই ছোঁয়া রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনে হবে, সেই ভাবনাটা আর চিত্রনাট্য পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সময় পাননি। বেশির ভাগ গ্রিন স্ক্রিনে শুট করা, নিম্ন মানের হাস্যকর সিজিয়াই-এর ব্যাকড্রপে তমন্না ভাটিয়ার বক্ষ বিভাজিকা এবং বিজয় বর্মার লোলুপ দৃষ্টি এবং দু’জনের বেশ কিছু মাখো মাখো দৃশ্য ছাড়া গল্পে তেমন কিছু নেই। থুড়ি, কোনও গল্পই নেই। রয়েছে শুধু নায়ক-নায়িকার রসায়ন। ভাগ্যিস, এই সেটই তাঁদের বাস্তব প্রেমের আঁতুড়ঘর! না হলে সেই রয়ায়নও হয়তো থাকত না। গল্পের শেষের টুইস্টও খানিকটা প্রত্যাশিত। তাই দর্শকের কোনও রকম ধাক্কাই লাগে না।

শেষের গল্পের পরিচালক ‘বাধাই হো’ খ্যাত অমিত শর্মা। কাজল এবং কুমুদ মিশ্রের মতো দুই বলিষ্ঠ অভিনেতা পেয়েছিলেন তিনি। তাই তাঁর গল্প কিছুটা ধীর গতির এবং ক্লান্তিকর হলেও অভিনয় ধরে রাখবে দর্শককে। এক লম্পট রাজার অত্যাচার, ভগ্নপ্রায় হাভেলির অন্দরের অন্ধকার, আর এক মায়ের সন্তানের প্রতি অটুট ভালবাসার গল্প বলেছেন পরিচালক। বাকি গল্পের তুলনায় এই গল্পের আবহ অনেক বেশি গুরুগম্ভীর। অনেক ‘ডার্ক’। কামনার আছিলায় বৈবাহিক ধর্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক উঠে আসে অমিত শর্মার চিত্রনাট্যে। কিন্তু এই গল্পটি ‘লাস্ট স্টোরিজ়’-এর অংশ না হয়ে আর যে কোনও সাধারণ অ্যান্থোলজির অংশ হলেও কোনও পার্থক্য হবে না।

দ্বিতীয় গল্পের কথা শেষেই বলা যাক। কারণ, মধ্যমানের একটি ছবিতে জ্বলজ্বল করে শুধুই এই গল্পটি। চিত্রনাট্য, নির্মাণ, দৃশ্যগ্রহণ এবং সম্পাদনা— সব কিছু দেখেই মনে হবে, একমাত্র কঙ্কনা সেনশর্মা ধরতে পেরেছিলেন এই অ্যান্থোলজির চাহিদা কী এবং সেই মতো গল্প বুনতে পেরেছেন। দুই ভিন্ন আর্থ-সামাজিক শ্রেণির নারীর যৌনচাহিদার গল্প। এক জন সফল পেশাদার। মুম্বই শহরে একাই একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিলোত্তমা সোম। অন্য জন, তার বাড়ির পরিচারিকা। অভিনয়ে মরাঠি চলচ্চিত্রের তাবড় অভিনেত্রী অম্রুতা সুভাস। কঙ্কনা এর আগেই পরিচালক হিসাবে তাঁর জাত চিনিয়েছিলেন ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি ‘ভয়ারিজ়ম’ এবং ‘এগজিবিশনিজ়ম’-এর মতো স্পর্শকাতর বিষয় অনায়াসে তুলে ধরেছেন পর্দায়। বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যের যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে সাবলীল সম্পাদনা। গল্পের নাম ‘মিরর’। সম্পাদনার একটি বড় অংশে ছিল দেওয়ালের একটি আয়না। গল্পের বিষয়বস্তু যতই সূক্ষ্ম হোক, কঙ্কনা তার গল্প বলার কায়দা কখনওই গুরুগম্ভীর করে তোলেননি। বরং একটি ছটফটে দুষ্টুমির ঝলকানি রেখেছেন গোটা ছবি জুড়ে। ছবিতে কিন্তু কঙ্কনার ক্যামিও রয়েছে। তাঁকে দেখা না গেলেও তাঁর কণ্ঠ মিস্ করা মুশকিল।

তিলোত্তমা এবং অম্রুতা পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। কে বেশি দক্ষ, তা বোঝা মুশকিল। দু’জনের চরিত্রই যথেষ্ট জটিল এবং বেশ কিছু কঠিন দৃশ্যও ছিল চিত্রনাট্যে। কিন্তু দু’জনের অভিনয়গুণে সেগুলি আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে।

‘লাস্ট স্টোরিজ়’ মুক্তি পাওয়ার পরও বিতর্ক-আলোচনা কম হয়নি। কারও অনুরাগ কাশ্যপের ছবি ভাল লাগেনি, কারও কর্ণ জোহরের ছবি অতিরিক্ত উগ্র লেগেছিল। তবে কিয়ারা আডবাণীর কেরিয়ারকে যে এই ছবি মাইলেজ দিয়েছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমন কোনও আশা অবশ্য এ ছবির কোনও শিল্পীই করতে পারবেন বলে মনে হয় না। তবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে একটি জৌলুসহীন ছবি দেখার পর একটাই কথা মনে হবে, কঙ্কনা আরও বেশি পরিচালনা কেন করেন না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy