Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Rumi Jaffery

Movie review: আয়নার মুখোমুখি

আগন্তুক ইমরান হাশমি এ ছবির আর এক স্তম্ভ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আত্মম্ভরী ব্যবসায়ীর চরিত্রটি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৮:১৫
Share: Save:

চেহরে

পরিচালক: রুমি জাফরি

অভিনয়: অমিতাভ, ইমরান, অন্নু, ধৃতিমান, রিয়া, রঘুবীর, ক্রিস্টাল

৫/১০

এই প্রথম বার থ্রিলার পরিচালনা করলেন পরিচালক রুমি জাফরি। পরিচিত, ‘সেফ’ প্লট বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’-এর এই মূল কাহিনি বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় পঠিত, অভিনীত, চর্চিত। এই কাহিনিকেই বিজয় তেণ্ডুলকর নাট্যরূপ দিয়েছিলেন ‘চোপ আদালত চলছে’ নাটকে। এক ঘরে আটকে পড়া কয়েকজন, বাইরে দুর্যোগ, খেলাচ্ছলে বসানো বিচারসভা, সেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে করা জীবনের হিসেবনিকেশ এবং শেষে ন্যায়বিচার। কল্পনা-বাস্তব একাকার হয়ে যাওয়া এই কোর্টরুম ড্রামার অব্যর্থ রোমহর্ষক ফর্মুলারই প্রয়োগ করতে চেয়েছে ‘চেহরে’। অভিনেতাও বাছা হয়েছে বাঘা বাঘা। কিছু জায়গায় তা ‘ওয়ান-ম্যান-শো’ হয়েও দাঁড়িয়েছে। এবং সেই অভিনেতার নাম অমিতাভ বচ্চন।

এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বাংলো জনমানবহীন পাহাড়ে, যেখানে অবিরাম তুষারপাত সাদা হয়ে ঢেকে ফেলে চারদিক। এমনই এক দুর্যোগের দিনে বাংলোয় একে একে জড়ো হয় আরও তিন বৃদ্ধ, যাদের প্রত্যেকেই সেই বিচারপতির প্রাক্তন সহকর্মী ও বন্ধু। দুর্যোগের দিনে সেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় এক আগন্তুক। গৃহকর্তা ও তার বন্ধুরা মিলে তাকে আহ্বান জানায় এক মক ট্রায়ালে শামিল হতে, নেহাতই সময় কাটাতে। ফায়ারপ্লেসের ওম গায়ে মেখে আর দু’পাত্তর পেটে পড়ে চাঙ্গা হতেই আগন্তুক সেই অভিনব খেলায় অংশ নেয়, চার বৃদ্ধের সঙ্গে। খেলা জমে উঠতেই একে একে আড়াল খসে পড়ে, উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আগন্তুকের আসল চেহারা।

ছবির প্রথমার্ধে বিরতির আগে পর্যন্ত ‘কী হয়’ ‘কী হয়’ ভাবখানা বেশ ধরে রাখা গিয়েছিল। খেলা তখনও পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়নি। সেটা শুরু হল দ্বিতীয়ার্ধে। আর তার পর থেকেই দুর্বল হতে থাকল ছবির বাঁধুনি। কথার মারপ্যাঁচে কারও ভিতরের অপরাধী সত্তাকে টেনে বার করে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেখানে, সেই চিত্রনাট্যে অল্পবিস্তর ত্রুটিবিচ্যুতিই বড় হয়ে ধরা দেয়। যেমন গল্পের শুরুতে দেখানো হয়, দিল্লিগামী গাড়িটি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, সেটি বরফে মোড়া এক দুর্গম প্রান্তর। অঝোরে বরফ পড়ছে সেই পাহাড়ে। নেটওয়ার্ক শূন্য। অথচ মাইলফলকে লেখা, দিল্লি ২০০ কিলোমিটার! আগন্তুক বাংলোয় ঢোকার পরে ছুটে আসে পোষ্য কুকুর। কিন্তু কী অদ্ভুত, শুঁকে দেখা তো দূর, নতুন অতিথির দিকে ভ্রূক্ষেপমাত্র করে না সে! গল্পের খাতিরে এ সব খুঁটিনাটি বাদ দেওয়া গেলেও যে অপরাধ নিয়ে সাজানো পুরো মামলা, তার ভিত্তিও জোরালো ঠেকল না। শেষে প্রসিকিউটরের মোনোলগ মনোগ্রাহী, তবে মামলার সঙ্গে তার সরাসরি কোনও যোগ না থাকায় আরোপিত মনে হয় অংশটি।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পরিচালক রুমি ও প্রযোজক আনন্দ পণ্ডিত বলেছেন, নারী নির্যাতন নিয়ে এই দীর্ঘ বক্তৃতাটি চিত্রনাট্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। যিনি এই ছবিতে ‘ফ্রেন্ডলি অ্যাপিয়ারেন্স’-এ আছেন, অর্থাৎ পারিশ্রমিক নেননি। প্রসিকিউটরের চরিত্রে তিনি অনবদ্য, মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ‘পিঙ্ক’-এর কোর্টরুমে তাঁর সেই দৃপ্ত উপস্থিতি। ডিফেন্সে ছিলেন অন্নু কপূর, যিনি অভিনয়ে পাল্লা দিয়েছেন সমানতালে। বিচারপতির ভূমিকায় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ফাঁসুড়ে রঘুবীর যাদব কম পরিসর পেলেও পুষিয়ে দিয়েছেন ওটুকুতেই। রিয়া চক্রবর্তীর অভিনয় তুলনায় দুর্বল, বরং ছোট্ট চরিত্রে নজর কেড়েছেন সিদ্ধান্ত কপূর।

আগন্তুক ইমরান হাশমি এ ছবির আর এক স্তম্ভ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আত্মম্ভরী ব্যবসায়ীর চরিত্রটি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর। শুনানি চলাকালীন প্রথমে বেপরোয়া ভাব, পরে ভয়, রাগ, বিপন্নতা... মূর্ত হয়েছে তাঁর অভিনয়ে। ক্রিস্টাল ডি’সুজ়ার অভিনয় সাধারণ।

ছবিতে গানের ব্যবহার, গ্রাফিক্সের কাজ, মেকআপ... সবই বেশ দুর্বল। গ্রাফিক্সের দুর্বলতায় নষ্ট হয়ে যায় ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যটিও। তবে শেষ পর্যন্ত ছবিটি বসে দেখা যায় তাবড় শিল্পীদের দুরন্ত অভিনয় দেখার জন্যই।

অন্য বিষয়গুলি:

Rumi Jaffery review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE