জোকার ছবির একটি দৃশ্য।
জোকার
পরিচালনা: টড ফিলিপ্স
অভিনয়: ওয়াকিন ফিনিক্স,
রবার্ট ডি নিরো
৭/১০
ছবিটা সপাট আছড়ে ফেলল। পিছনে পড়ে রইল মাইকের গান, ঢাকের শব্দ... পুজোর আবহে দেখার ছবি হয়তো ‘জোকার’ নয়। জোকারের চড়া মেকআপের সামনে মেকি দেখায় উৎসবের সাজ।
কেন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আট মিনিটের স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছিল ‘জোকার’, তা দু’ঘণ্টা চার মিনিটে স্পষ্ট হয়ে যায়। একক শোয়ে অভিনেতাকে যেমন সবটা ধরে রাখতে হয়, ‘জোকার’ ছবিতে ওয়াকিন ফিনিক্স ঠিক তেমনই। বাকি সব যেন প্রপ। সেট, আবহ, অন্যান্য চরিত্র সঙ্গত করে গিয়েছে।
পৃথিবীর সেরা অ্যান্টি হিরো হিসেবে জোকারকে দর্শানো নতুন নয়। জ্যাক নিকলসন থেকে হিথ লেজার, সব্বাইকে মাথায় রাখলেও টড ফিলিপ্সের ন্যারেশন সম্পূর্ণ আলাদা। ক্রিস্টোফার নোলানের জোকারের মতো সর্বগ্রাসী আতঙ্ক নয়, বরং এ জোকার বিপ্লবের প্রতীক। ছবির এক দৃশ্যে শীর্ণকায় আর্থার (ওয়াকিন) তার জুতোটাকে প্রাণপনে টেনে বড় করার চেষ্টা করে। সমাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার কী আপ্রাণ চেষ্টা! কিন্তু সমাজ কবেই বা আর্থারের মতো মানুষদের গুরুত্ব দিয়েছে?
ছবি দেখতে গিয়ে নবারুণ ভট্টাচার্যের ফ্যাতাড়ুর তুলনা মাথায় আসে। কেউ কোনও দিন জানার চেষ্টা করল না আর্থারের হাসির কারণটা। যে ভাবে ক্ষমতাবানেরা জানার চেষ্টা করে না, সমাজের বাকি মানুষ কেমন আছে। জোকার কী ভাবে বিপ্লবের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠে, সেটা উহ্যই থাক। তার সংলাপ ‘আই জাস্ট ডোন্ট ওয়ান্ট টু ফিল সো ব্যাড এনিমোর’ যেন সমাজের বাকিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গথাম সিটি জ্বলছে, এ দিকে মেয়র সিনেমা হলে। এমনটা তো হয়েই থাকে।
টড ফিলিপ্সের ‘জোকার’-এর চিত্রনাট্য কিছু মুহূর্ত এবং পারফরম্যান্সের উপরে দাঁড়িয়ে। গল্প কোন দিকে বাঁক নেবে, তার আঁচ পাওয়া যায়। ন্যাতানো কোণঠাসা আর্থার থেকে জোকার হয়ে ওঠার জার্নিটা ধাক্কা দেয়। অপরাধের পরেই ঝুঁকে থাকা শরীরটা কেমন দৃপ্ত পদক্ষেপ ফেলতে ফেলতে এগিয়ে যায়। এ ছবিতেও ব্রুস ওয়েন আছে। যদিও সে নেহাতই নাবালক। বাবা-মায়ের মৃতদেহের সামনে সে দাঁড়িয়ে। আর জোকার বলছে, ‘ইউ উডন’ট গেট দ্য জোক’! জোকারের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও চরম ধাক্কা দিয়েছেন পরিচালক। ডিসির ঘরানা থেকে অনেকটাই আলাদা এই ছবি। মার্টিন স্করসেসির ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ যে তাঁর অনুপ্রেরণা, সেটা একাধিক বার বলেছেন ফিলিপ্স। ছবি জুড়ে তার প্রমাণ। একটার পর একটা খুন করে চলেছে জোকার। অন্য দিকে তার বিজয়গাথা তৈরি হচ্ছে। যে লোকটার দিকে কেউ কোনও দিন তাকিয়েও দেখেনি, কিছু মানুষের চোখে সে-ই রাতারাতি হিরো হয়ে যায়। এটাই তো হতে চেয়েছিল আর্থার। একজন অ্যান্টিহিরো এর চেয়ে বেশি কী চাইতে পারে! ওয়ান ম্যান শোয়ে ওয়াকিন ফিনিক্সের দিক থেকে চোখ সরে না। চোখের অভিব্যক্তি, ঠোঁটের রেখা দিয়েও অভিনয় হয়! ওয়াকিনের বডি অফ ওয়র্ক ঘোর লাগিয়ে দেয়।
সত্যি বলতে কী, এর পর জোকার সেজে দাঁড়িয়ে থাকা কারও দিকে তাকিয়ে হাসতে লজ্জা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy