তিন নারী। তিন প্রজন্ম। ছকভাঙার সাহস এবং তার ফলস্বরূপ, অব্যক্ত মান-অভিমান। প্রথম নির্দেশনায় নারীর ইচ্ছেকেন্দ্রিক গল্প বলেছেন অভিনেত্রী-পরিচালক রেণুকা সাহানে। আশি-নব্বইয়ের দশকে ছোট ও বড় পর্দায় যখন তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, সেই সময়টাই প্রাধান্য পেয়েছে রেণুকার নেটফ্লিক্স ছবি ‘ত্রিভঙ্গ’-য়। কলমের টানে এক নারীর স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা, দ্বিতীয় বিয়ে, স্কুলে মেয়ের নামের পদবি বদলে দেওয়ার মতো কাজগুলি সেই যুগের নিরিখে সাহসী ছিল। কিন্তু এখনকার শহুরে সমাজে এর কোনওটাই নতুন নয়। পুরনো-নতুনের দ্বন্দ্ব রেণুকার ছবির উপজীব্য নয়। নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিলে, নারীকে তার মূল্য দিতে হয়। সেই ইচ্ছের সঙ্গে আমৃত্যু সংঘাত চলে সংসার, সমাজ এবং পরিবারের। সময়ের কাঁটা ২০২১-এ থমকালেও, ইচ্ছের সঙ্গে নারীর ঘরে-বাইরের লড়াই চিরন্তন। তাই রেণুকার ছবিতে বারবার করে বলা হয় ‘চয়েস’ শব্দটি।
সাদামাঠা মরাঠি ঘরের বৌ নয়নতারা আপ্টের (তন্বী আজ়মি) লেখালিখির পেশা নিয়ে আপত্তি শাশুড়ির। কলমের টানে নয়ন ভুলে যায় ছোট ছেলের দুধ খাওয়ার আর্তি, স্বামীর সোহাগের চেয়েও বড় তার অস্তিত্বের দাবি। বছর দশেকের কন্যা অনু, ছেলে রবীন্দ্র এবং পরিচারিকা বিমলকে নিয়ে সে শুরু করে নতুন সংসার। কিন্তু মায়ের সিদ্ধান্তে অনুর মনে তৈরি হয় ক্ষোভ। গোপন ক্ষত বুকে নিয়ে অনু বড় হতে থাকে। অনুর বড় বয়সের চরিত্রে কাজল। কুমারী অবস্থায় অনু সন্তানের জন্ম দেয়। তত দিনে সে বলিউডের নায়িকাও বটে। অনুর মেয়ে মাশা (মিথিলা পালকর) তার আজ্জি (দিদা) ও আইকে (মা) কি অনুসরণযোগ্য মনে করে? প্রতিষ্ঠিত লেখিকা নয়নের আত্মজীবনী লিপিবদ্ধ করার কাজটি করে গবেষক মিলন (কুণাল রায় কপূর)। কোমায় আচ্ছন্ন নয়নকে কেন্দ্র করেই তিন প্রজন্মের একত্রিত হওয়া।
রেণুকার ছবিতে কিছু বৈপরীত্য নজর কাড়ে। যেমন, ওড়িশি নৃত্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে অনু। কিন্তু গোটা ছবিতে একবারও পারফর্ম করতে দেখা যায়নি তাকে। শুধু নাচের পোশাকে তার ছবির কোলাজ সেই ইমেজ তুলে ধরে। নাচের মুদ্রার অনুষঙ্গ টেনে অনু তার মা-কে বলে ‘অভঙ্গ’, মেয়েকে বলে ‘সমাভঙ্গ’ আর নিজেকে ‘ত্রিভঙ্গ’। অথচ তার মায়ের আত্মজীবনীর নাম রাখা হয় ‘ত্রিভঙ্গ’। ছবির পাঞ্চলাইনে যে ‘টেরি মেরি ক্রেজ়ি’ শব্দবন্ধনী রয়েছে, তা-ও অনুর জন্যই প্রযোজ্য। তাই ‘ত্রিভঙ্গ’ শব্দটি দিয়ে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
তবে এ ছবি যতটা না তন্বী বা মিথিলার, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজলের। সেই ট্রিটমেন্ট ছবির গোড়া থেকেই স্পষ্ট। মিথিলার করণীয় কিছু ছিল না। তন্বীকে আরও একটু পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। বিশেষত, যখন তাঁর যৌবনের চরিত্রে অনেকটা জায়গা পেয়েছেন শ্বেতা মেহেনদেল। ছবির প্রথম দিকে কাজলের উচ্চকিত অভিনয় চোখে লাগে। যতই বিতর্ক থাকুক, কোনও যুগেই কোনও অভিনেত্রী সংবাদমাধ্যমের সামনে ও ভাবে কথা বলে না, যে ভাবে অনুকে দেখানো হয়েছে। তবে কম সংলাপের দৃশ্যে কাজল অনবদ্য। কুণালকে খুব একটা স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়নি।
ত্রিভঙ্গ
পরিচালনা: রেণুকা সাহানে
অভিনয়: কাজল, তন্বী, মিথিলা, কুণাল
৫.৫/১০
ছবির আরও একটি বড় সমস্যা, গুটিকয়েক ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনটি চরিত্রের টানাপড়েন দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। চরিত্রগুলি শুধু বলেই যায়। যেন মিলনের মতো দর্শকও তাদের ভিডিয়ো-ইন্টারভিউ করছেন। মাশার গতে বাঁধা জীবন বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যাও যুক্তিসঙ্গত নয়।
তবে রেণুকার ছবির উদ্দেশ্য বোধহয়, তাঁর অনুভব দর্শকের সামনে তুলে ধরা। যে অনুভবে ইচ্ছে-অনিচ্ছে, দোষ-গুণ, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার নারী কোনও একটি যুগে আবদ্ধ নয়, সে আবহমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy