Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্যায়ের চোখে চোখ রাখার সাহস

অ্যাসিড হামলার পরে হাসপাতালে বেশ কয়েক ধাপ শল্যচিকিৎসা হয় মালতীর। তার পর সে চেষ্টা করে জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে।

সুবর্ণ বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫০
Share: Save:

ধর্ষণ করে খুন? না কি মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়া? কোনটা বেশি ভয়ঙ্কর? দর্শকের মনে এমন প্রশ্ন তুলেই শুরু হয় এই মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচিত ছবি ‘ছপাক’। ছপাক মানে কী? একটা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়ার শব্দ। একটি মেয়েকে তার বাকি জীবনের জন্য জীবন্মৃত করে দেওয়ার রূপক। ছবির শুরুটা তৈরি হয়েছে ২০১২-র দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পটভূমিতে। অমল দ্বিবেদী (বিক্রান্ত মেসি) প্রাক্তন সাংবাদিক, একটি এনজিও চালায়। সে এখানেই প্রশ্নটা তোলে, ধর্ষণে মৃতের সঙ্গে কি আর অ্যাসিড-আক্রান্তের তুলনা হয়? কথাটা দর্শককে ভাবায়। কারণ নির্ভয়াকে আমরা সকলে মনে রেখেছি। কিন্তু লক্ষ্মী আগরওয়াল নামটা শুনলে স্মৃতি হাতড়াতে হয়। ২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সি এই মেয়েটির মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছিল। এই মেয়েটি ২০০৬ সালে, তখনও সে নাবালিকা, অ্যাসিড-আক্রান্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ানোর জন্য আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। যথেচ্ছ অ্যাসিড বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা বসানোও ছিল তার আবেদনের আর এক দিক। লক্ষ্মীর ভূমিকায় দীপিকা পাড়ুকোন, এখানে তাঁর নাম মালতী। দীপিকার অভিনয়ে জীবন্ত লক্ষ্মীর যন্ত্রণা, কষ্ট, লড়াই। ভালবাসা সংক্রান্ত জোরাজুরিতে যে তার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দিয়েছিল, তার নাম বশির খান ওরফে বাব্বু। তখন তার বয়স তিরিশের উপর। রাজেশ নামে এক বন্ধুর সঙ্গে মালতীকে হাসাহাসি করতে দেখে, সে আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।

অ্যাসিড হামলার পরে হাসপাতালে বেশ কয়েক ধাপ শল্যচিকিৎসা হয় মালতীর। তার পর সে চেষ্টা করে জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে। বিচারে দোষীর শাস্তি হয়। গল্প এইটুকুই। পরিচালককে ধন্যবাদ, তিনি অ্যাসিড-আক্রান্তের অসহায়তা নিয়ে মেলোড্রামা করেননি। রানি পদ্মাবতীর ঔজ্জ্বল্য সরিয়ে রেখে এক অতি সাধারণ মেয়ের চরিত্রে দীপিকা অসাধারণ। প্রস্থেটিক মেকআপ খুব ভাল সামলেছেন। মালতীর আইনজীবীর চরিত্রে ভাল অভিনয় করেছেন মধুরজিৎ সারঘি। বিক্রান্ত মেসি যথাযথ।

ছবিটি অনেক প্রশ্ন তুলে দেয়। অ্যাসিড আক্রান্ত মানে কি প্রতিবন্ধী? চাকরির জায়গায় একজন ইন্টারভিউয়ার মালতীর মুখের দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চায়, অ্যাপ্লিকেশনে এই ঘটনার উল্লেখ নেই কেন। মালতী জানায়, ফর্মে এই ধরনের অপশন থাকলে, সে নিশ্চয়ই টিক দিত। যোগ্যতা থাকলেও শুধু মুখশ্রী বিকৃত হয়েছে বলেই কি তাকে অযোগ্য বলা হবে? কেনই বা বিউটি পার্লারের মালকিন তাকে বলবে, বিউটি পার্লারে কাজ করতে হলে সুন্দর হতে হয়? চিত্রনাট্য শক্তিশালী। যোগ্য সঙ্গত করেছেন দীপিকাও। বিশেষ করে মালতীর সেরে ওঠার সময়ে প্রথম বার আয়নায় মুখ দেখার দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়।

ছপাক
পরিচালনা: মেঘনা গুলজ়ার
অভিনয়: দীপিকা পাড়ুকোন, বিক্রান্ত মেসি, মধুরজিৎ সারঘি
৬.৫/১০

তবে সমস্যাও রয়ে গেল। গল্পের বুনট শক্তপোক্ত নয়। অন্তত ‘তলওয়ার’ বা ‘রাজ়ি’র পরিচালকের কাছ থেকে যেমন আশা করা গিয়েছিল, তেমনটা হল কোথায়? বহু সুতো ছাড়া হয়েছে, যেগুলি অপ্রয়োজনীয়। মালতীর মদ্যপ বাবার ভূমিকা ঠিক কী? ভাইয়ের হঠাৎ টিবি হল কী করে? তার পর সে সারল কি? জমল না বিক্রান্ত–দীপিকার কেমিস্ট্রিও। এডিটিংয়ে আর একটু যত্ন দরকার ছিল। সম্ভাবনা ছিল আদালত-দৃশ্যেও। কিন্তু সেগুলি বড় সংক্ষেপে সারা। ছবির শেষে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়, মালতীর অ্যাসিড-হামলার আগের জীবন। ছবিতে বশির খানের বাইকে চেপে আসা একটি মেয়ে তার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেয়। এই মেয়েটি বাস্তবে ছিল কি না, জানা নেই। ছবির শেষ দৃশ্যে বিয়ের কনের উপরে অ্যাসিড হামলার দৃশ্যটি কেমন যেন অবাস্তব লাগে। অত কাছ থেকে কারও মুখে এক মগ জল ছুড়ে দিয়ে দেখুন, আপনার গায়েও ছিটে আসবে। হামলাকারী কি তেমন ঝুঁকি নেবে?

তবে শুধুই কি লড়াই? অসহায়তা নেই? আছে। ছবির শেষেও পর্দায় ফুটে ওঠা কিছু তথ্য দর্শকের মনে অসহায়তা বুনে দেয়। সেই তথ্য বলে, গত ক’বছরে অ্যাসিড-আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত ডিসেম্বরেও ঘটে গিয়েছে অ্যাসিড হামলা। লক্ষ্মী আগরওয়ালের লড়াই সত্ত্বেও, খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। ‘ছপাক’ কি সচেতনতা বাড়াতে পারবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Review Chhapaak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy