কলকাতার ধাপার জনজীবন কাহিনির প্রেক্ষাপট। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমার শুরুতে ‘বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ’-এর মতো প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, ‘ঝিল্লি’ দেখতে বেশ কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই প্রেক্ষাগৃহের আসনে বসতে হবে। প্রিমিয়ার শো শেষে তরুণ পরিচালক ঈশান ঘোষের কাছে প্রশ্ন রাখাই যেত, প্রথম ছবির জন্য আর পাঁচ জনের মতো সহজ পথে কেন হাঁটলেন না তিনি?
গুটি কয়েক বন্ধুকে নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে তিল তিল করে ছবির শুটিং সেরেছিলেন ঈশান। ছিল না কোনও বাজেট। সেই ছবিই কিন্তু ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নিয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। ঈশানের আরও একটা পরিচয়, তিনি পরিচালক গৌতম ঘোষের পুত্র। গৌতম এই ছবির অন্যতম প্রযোজকও বটে।
ছবির গল্পটা একটু ধরিয়ে দেওয়া যাক। কলকাতার ধাপার জনজীবন কাহিনির প্রেক্ষাপট। সমাজের প্রান্তিক মানষুগুলোর লড়াইকে অত্যন্ত বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। সেই বাস্তব কোথাও কঠিন, তো কোথাও আবার ভয়াবহ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে শহরের মধ্যেই এক অচেনা রুক্ষ শহরের আখ্যান ‘ঝিল্লি’। বকুল (অরণ্য গুপ্ত) এবং তার দুই বন্ধু শম্ভু (শম্ভুনাথ দে) ও গণেশ (বিতান বিশ্বাস)— জীবনের কাছে তিন জনের ছোট ছোট চাওয়াপাওয়া এবং হতাশা ছবিকে তার সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
কিছুটা তথ্যচিত্রের আদলে তৈরি এই ছবির গতি সরলরৈখিক নয়। পরিচালক নিজেই এই ছবির ক্যামেরা ও সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’ এবং ‘রাহগীর’ ছবির ক্যামেরাও কিন্তু ঈশানেরই। এই ছবিতে ঈশানের ক্যামেরা প্রয়োজনে অতি দ্রুত আবার কখনও পাথরের মতো স্থির। ফলে দর্শক হিসেবে প্রাপ্তি অসাধারণ কিছু দৃশ্যপট। বিশেষ করে ধাপার আবর্জনার মধ্যে মৃত পশুর হাড়ের স্তুপে বকুলের শুয়ে থাকার দৃশ্যটি রীতিমতো চমকে দেয়। ধাপার পাশাপাশি শহরের বেশ কিছু নতুন জায়গাকে বড় পর্দায় দেখে ভাল লাগে। তবে ছবির গতি বেশ ধীর। কম চরিত্র ও প্রেক্ষাপটকে মাথায় রাখলে তা কোথাও কোথাও দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারে। বেশ কিছু সংলাপ এবং অভিনয় কৌশল একটু আরোপিত মনে হয়েছে।
ছবির অভিনেতারা প্রায় নতুন, অচেনা মুখ। সে দিক থেকে তাঁরা প্রত্যেকেই পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাঁদের অভিনয়ও বেশ স্বতঃস্ফূর্ত। পোশাক ও মেক আপও যথাযথ। তার থেকেও বড় কথা, সারা শহরের জমে থাকা আঁস্তাকুড়ের মধ্যে অভিনয় নেহাত ‘প্যাশন’ ছাড়া সম্ভব নয়। সে জন্য ছবির ইউনিটকে আলাদা করে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। সৌম্যজিৎ ঘোষ ও রাজর্ষি দাসের আবহসঙ্গীত ছবিকে যোগ্য সঙ্গত করেছে।
আধুনিক নগরসভ্যতার পাশেই অথচ অনেক দূরে থাকা এক অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতের গল্প। তাই ‘ঝিল্লি’র চরিত্ররা ‘বাতিল’ হয়েও কোথাও যেন ছবির শেষে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। ঈশানের উদ্যোগ অবশ্যই সাহসী এবং প্রশংসনীয়। পরিচালক নিজেও জানেন, এই ছবি সকলের জন্য নয়। সেখানে উৎসবের বেড়াজাল ডিঙিয়ে ‘ঝিল্লি’র প্রক্ষাগৃহে আগমন শুধু ঈশান নয়, আগামী দিনে তাঁর মতো আরও অগণিত তরুণ পরিচালকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে রয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy