‘ক্রাউন’-এর দৃশ্য়।
বাস্তব আর রূপকথার মধ্যে যথার্থই যোজন দূরত্ব। নইলে প্রতিটি রূপকথার শেষে সেই অমোঘবাণী ‘অ্যান্ড দে লিভড হ্যাপিলি এভার আফটার...’ সত্যি হত। আসল লড়াই তো শুরু হয় দু’হাত এক হয়ে যাওয়ার পরে। যখন একে অপরকে তাদের ভার বইতে হয়। ‘ক্রাউন’-এর একটি দৃশ্যে এলিজ়াবেথকে তাঁর মেয়ে অ্যান বলছে, ‘‘চার্লস আর ডায়ানার বিয়েটা এত দিন টিকেছে, সেটাই আশ্চর্যের!’’ সিরিজ়ে ডায়ানা আর চার্লসের এনগেজমেন্ট পর্বের নাম ‘ফেয়ারিটেল’। আসল রূপকথা কি তাঁদের বিয়ে? নাকি চার্লস আর ক্যামিলার সম্পর্ক? যাঁরা সব অসম্ভবেও পরস্পরের পাশে।
নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘ক্রাউন’-এর সিজ়ন ফোর সেরা কি না, তার চর্চা জারি রয়েছে। মার্গারেট থ্যাচার ও ডায়ানা— দুই ‘আইকনিক’ চরিত্রের আবির্ভাবে এই সিজ়ন ঘটনাবহুল। আশি-নব্বইয়ের দশকের ঘটনাবলি অনেক বেশি ডকুমেন্টেড, মানুষের স্মৃতিতে উজ্বল এবং বিতর্কিতও। তাই ক্রিয়েটর পিটার মরগ্যানের চ্যালেঞ্জটা কঠিন ছিল। তিনি দরকার মতো সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন, আবার সিনেম্যাটিক লাইসেন্সও নিয়েছেন। ‘দ্য বালমোরাল টেস্ট’ থেকে ডায়ানা-চার্লসের প্রথম সাক্ষাৎ... কিছু ঘটনা নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। প্রথম এপিসোডে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মৃত্যু, আয়ারল্যান্ডের স্বাধিকারের লড়াই এবং মার্গারেট থ্যাচারের আগমন— ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয়। তার পর থেকে প্রতিটি এপিসোডে ডায়ানা বা থ্যাচারের অধ্যায়গুলো মলাট সরিয়েছে আর সিরিজ় এগিয়েছে। তবে বজায় থেকেছে সিরিজ়ের ধীর লয়ের সিগনেচার স্টাইল।
থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রিত্বের পুরো পর্বই এই সিজ়নে উঠে এসেছে। আয়রন লেডির ছাঁচে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন জিলিয়ান অ্যান্ডারসন। ‘দ্য এক্স-ফাইলস’, ‘সেক্স এডুকেশন’-এর অভিনেত্রীর এই ভোলবদল অবাক করে। তবে জিলিয়ানের বাচনভঙ্গি থ্যাচারের চেয়ে আলাদা। সেটা অবশ্য এক হিসেবে তাঁকে নিজস্বতা বজায় রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে যে ‘থ্যাচারিজ়ম’-এর জন্য তিনি বিখ্যাত বা কুখ্যাত, তা এখানে অনেকটাই মোলায়েম ভাবে দেখানো হয়েছে।
থ্যাচারের সেরা পর্ব অষ্টম এপিসোড, যেখানে রানির সঙ্গে তাঁর সংঘাত চরমে। থ্যাচারের অপসারণের পরে রানির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের অংশটা মনে রেখে দেওয়ার মতো। আলাদা করে বলতে হয় এই অংশগুলোর দৃশ্যায়ন এবং আবহসঙ্গীতের কথা।
থ্যাচার যদি জননেত্রী হন, ডায়ানা জন-গণ-মন নেত্রী। আর সেই দায়িত্ব পড়েছিল এমা করিনের মতো আনকোরার উপরে। ডায়ানার সৌন্দর্য তো প্রবাদ, কিন্তু এমাও নিখুঁতের কাছাকাছি। বাকিটা তাঁর অভিনয় আর চিত্রনাট্য সহায়। যে ভাবে ডায়ানার চরিত্র দর্শানো হয়েছে, তাতে তিনি দর্শকের সহানুভূতি পাবেন। তা ছাড়া চার্লস-ডায়ানার সম্পর্কে ভাঙনের জন্য চিরকালই ক্যামিলা পার্কার বোলসকে ‘ভিলেন’ বানানো হয়েছে। বাগ্দানের আগে ডায়ানার প্রশ্নের সামনে চার্লস তাঁর আর ক্যামিলার সম্পর্ক ‘ইটস ওভার’ বলে দিলেও, সেই সম্পর্ক বা বলা ভাল সেই বন্ধুত্ব থেকে বেরোতে পারেননি তাঁরা। সূক্ষ্ম ভাবে হলেও পিটার মরগ্যান বুঝিয়ে দিয়েছেন, ডায়ানা সব জেনেশুনেই ভাবী রাজার প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। ডায়ানার চৌম্বক সৌন্দর্যে চার্লসও আকৃষ্ট হন, কিন্তু ‘সোলমেট’ তাঁরা কোনও দিনই ছিলেন না। বিয়ে হয়েছিল ইমেজ বাঁচানোর অঙ্ক কষেই। চার্লসের মনের তল যেমন ডায়ানা পাননি, তেমনই ডায়ানার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা মেনে নিতে পারেননি চার্লসও। ডায়ানার একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াকেও সহানুভূতির মোড়কে পেশ করেছেন নির্মাতারা। বুলিমিয়া, ডিপ্রেশনে ভোগা অস্থির ডায়ানা, জনতার দরবারে ক্যারিশম্যাটিক ডায়না... মুহূর্তগুলোর সদ্ব্যবহার করেছেন এমা।
ক্রাউন (সিজ়ন ফোর)
পরিচালনা: পিটার মরগ্যান
অভিনয়: অলিভিয়া, জিলিয়ান, এমা, জশ
৮/১০
হলই বা স্ক্রিনস্পেস কম, এ সিজ়ন যতটা থ্যাচার-ডায়ানার, ততটাই মার্গারেট আর অ্যানের। এঁরা দু’জন যেন সিরিজ়ের আয়না। রাজপরিবারের ইমেজ বাঁচানোর তাগিদের বিপরীতে তাঁদের অবস্থান। অ্যানের মুখ দিয়ে বলানো কঠিন সত্যগুলো অনেক পরত খুলে দেয়। নতুনকে জায়গা ছেড়ে দিতে দিতে ক্রমাগত পিছনের সারিতে চলে যাওয়া মার্গারেটের চরিত্রে হেলেনা বোনাম কার্টার অসাধারণ। গালের কুঞ্চন, ঠোঁটের ওঠাপড়া দিয়ে তাঁর মন পড়ে নেওয়া যায়। রানির চরিত্রে অলিভিয়া কোলম্যানের কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দুই সিজ়ন ধরে তিনি আক্ষরিক অর্থে এলিজ়াবেথ। বাদ দেওয়া যাবে না চার্লসের চরিত্রে জশ ও’কনরকে। ট্র্যাজেডির নায়ক তো তিনিই।
মুহূর্ত বোনায় দক্ষ কারিগর পিটার মরগ্যান শেষ এপিসোডে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রূপকথার প্রাসাদ ধসে পড়ার মুখে। পরের সিজ়নে বদলে যাবে চরিত্রদের মুখ। এখন অপেক্ষা আগামী বছরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy