ছবি: ‘দ্য পার্সেল’
অভিনয়: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার
পরিচালক: ইন্দ্রাশিস আচার্য
সবারই একটা অতীত থাকে, তা বলে কি সেটা তার বর্তমানের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা উচিত? বা অন্যভাবে বলা যায় সেটা না জানানোর অধিকারও তো তার আছে। আর সহ্যশক্তিরও একটা সীমা আছে সব মানুষের। এক সিনেমায় একটি দৃশ্যে অনুযোগের সুরে এমন কিছু অনুভূতি প্রকাশ করতে দেখা যায় নন্দিনী বা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। কথাগুলো খুব স্বাভাবিক। বিশেষ করে নন্দিনীর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও মানুষের মুখে।
কিন্তু কেন? কী এমন ঘটল?
কী এমন ঘটনা পরম্পরা সম্পূর্ণ ছন্নছাড়া করে দিল নন্দিনীর ব্যক্তিগত জীবন, স্বামী সংসার মেয়ে নিয়ে ঘেরা একটা কমফোর্ট জোন?
‘পার্সেল’ ছবির কাহিনীবিন্যাসে গল্পেরচলনে এমনই কিছু প্রশ্নের রহস্য লুকিয়ে।
নন্দিনীর জন্মদিনের সন্ধে। গান আড্ডায় মজলিশে ছন্দপতন ঘটায় কলিংবেল। তেমন কিছু নয়, ক্যুরিয়ারে এসেছে একটা সারপ্রাইজ গিফটের পার্সেল! এই শুরু। দিনের পর দিন আসতে থাকে অজ্ঞাতপরিচয়ের পাঠানো পার্সেল। উপহার হিসেবে মন্দ কিছু নয়, বরং ভালই। তাতেই নন্দিনীর স্বামী সৌভিকের মনে প্রশ্ন, কিছুটা খটকা। ‘‘হঠাৎ এতো খরচ করে, সময় নষ্ট করে কেউ কিছু পাঠাবে কেন?’’ সৌভিকের কিছু ঠেস দেওয়া কথায় নন্দিনীও অভিমানী। তবে কি সৌভিক সন্দেহ করছে তাকে! সে তো সত্যিই জানে না এসব কার পাঠানো, কেনই বা পাঠানো। তার কোনও সম্পর্কের পিছুটানও নেই যা বিবাহিত জীবনে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির ছায়া ফেলবে! ছবিতে নন্দিনীর জোরের জায়গা এখানেই। নন্দিনী আর সৌভিক দুজনেই ডাক্তার। ঘটনাচক্রে পেশেন্ট মারা যাবার কারণে তারাও কখনও আক্রান্ত এবং অপমানিত।
নন্দিনী ভাঙতে থাকে সৌভিকের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সে একরকম নিশ্চিন্ত হওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। এবং সেটা যথেষ্ট ভদ্রভাবেই উপস্থাপনা করে।
কিন্তু ‘পার্সেল’ কে পাঠায়?
নন্দিনীর জীবনেও আছে, আছে এমন কিছু অতীত আছে যা সে কাউকেই জানতে দিতে চায় না। কিন্তু সেগুলো কি? কে বা কারা কী ভাবে জড়িত এটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। নন্দিনী তার পুরনো বান্ধবী অরুন্ধতী এবং এক কাছের বন্ধু সুব্রতকে সন্দেহ করে। কিন্তু তাদের তো কোনও ভূমিকাই নেই এই ঘটনায়। আসলে নন্দিনী এতটাই বিভ্রান্ত যে অনেকসময় মনে হয়ে হয়েছে সে সমাধান হাতড়ে বেড়াতে গিয়ে মিছিমিছি কিছু অন্য মানুষের জীবন এলোমেলা করে দিয়েছে। একজন স্ত্রী, মা, ডাক্তার সব দিক থেকেই সে কোণঠাসা।
‘দ্য পার্সেল’ ছবির একটি দৃশ্য
নন্দিনীর চরিত্রের ওঠা-পড়ার বিচ্ছুরণ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয়ে ধরা থাকবে। সারা ছবি জুড়েই তাকে খুব বিষণ্ণ লাগে। মনে হয় সারাজীবন জুড়ে তার অপ্রাপ্তির ভাণ্ডার উপচে পড়ছে যেন।
সৌভিকের ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় নতুন করে কিছু বলার নেই। তার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অরুন্ধতী অর্থাৎ দামিনী বসু যথারীতি স্বল্প পরিসরে অসাধারণ। ছবির শুরুতেই শ্রীলা মজুমদারের গাওয়া একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব ভাললাগা দেয়। তার গায়কির অভিনবত্ব উল্লেখ করার মতোই। ছবিতে জয় সরকারের সঙ্গীত পরিচালনা ভীষণ একটা রিলিফ। বারবারই বেহালার সুর ছবির ভেতরের অনুভূতির টানাপোড়েনগুলোকে জীবন্ত করে তোলে।
এত পূর্ণতার মধ্যেও থেকে গেছে কিছু ফাঁক।
একটা কথা না বললেই নয়, ছবির বিষয়বস্তু যতই অভিনব হোক, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ কোথাও কোথাও হয়ত ততটাও রহস্য বুনতে পারেনি। বরং পার্সেল ঘিরে প্রথমে যে রহস্য দানা বেঁধেছিল বার বার পার্সেল আসার একঘেয়েমিতে তা খানিক কেটে যায়। আর ছবিতে কয়েকবার অন্য সম্পর্কের দিকে মোড় ঘুরে যায়।সেই সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রথাগত কিছু বিষয়ের বাইরে কিছু ভাবা বলা উপস্থাপনা করা এই মুহুর্তে বাংলা ছবির জন্য খুবই জরুরি। সেই দিক ইন্দ্রাশিস আচার্য পরিচালিত এবং ‘ভাবনা আজ কাল’ এবং কৃষ্ণ কয়াল প্রযোজিত ‘পার্সেল’ ছবিটি দর্শকদের বাংলা সিনেমা সম্পর্কে ভাবাবে। এভাবেও ভাবা যায়। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চাইলে একটি মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করার সাহস দেখানো যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy