কেমন হল ‘মিথ্যে প্রেমের গান’? ছবি: সংগৃহীত।
প্রেমের কি সত্যি-মিথ্যা হয়? সে প্রশ্নের উত্তর আজকাল বোধহয় ‘জেন জ়ি’ও খুঁজতে চায় না। হয়তো তাই, শাহরুখ খানকেও ‘কিং অফ রোম্যান্স’ থেকে ‘পাঠান’ হয়ে যেতে হয়েছে। যে সময়ে বলিউড বার বার আউড়ে যাচ্ছে যে, প্রেমের কাহিনি এখন আর চলে না, রোম্যান্সের আর কোনও জায়গা নেই, ঠিক সেই সময়ে টলিউডে নবাগতা পরিচালক পরমা নেওটিয়া একটি আদ্যোপান্ত প্রেমের ছবি বানানোর সাহস দেখিয়েছেন। তবে সেটা কোনও মিষ্টি প্রেমের ছবি নয়। বরং সংজ্ঞাহীন ভালবাসার জটিল গল্প।
ছবিতে অভীক (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) একটি পানশালায় গান গায়। নিজে গান লেখে এবং কখনও কখনও নামকরা সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তবে সে স্বপ্নটাও ঠিক করে দেখতে পারে না। কারণ, জীবনের সব ক্ষেত্রেই সে ভয় পায়। যেমন ভালবাসাকেও পায়। তাই তাঁর ভালবাসার মানুষ অন্বেষা (ইশা সাহা) যখন নিজে থেকে এসে প্রেম নিবেদন করে, তখন তাকেও সে দূরে সরিয়ে দেয়। সবটাই ভয় থেকে। এ দিকে, অন্বেষাও বেশ বিভ্রান্ত। সে বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পীর মেয়ে। যার অন্যতম সেরা শিষ্য আদিত্য (অর্জুন চক্রবর্তী) অন্বেষাকে ভালবাসে। ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনির পরিণতি কী হবে, সেই নিয়েই ছবির গল্প।
পরিচালক যে বলিউড ছবির ভক্ত তা, তাঁর গল্পবলার ধরনেই স্পষ্ট। নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা, ঘুরেফিরে তাকানো, প্রেমে পড়া— সব দৃশ্যই বলিউড রোম্যান্টিক ছবির দর্শকের বেশ চেনা লাগবে। ছবির টেকনিক্যাল দিকগুলি যতটা নিখুঁত, চিত্রনাট্য ততটা নয়। বেশ কিছু জিনিস স্পষ্ট হয় না। যেমন অভীকের জীবনের তাঁর দুশ্চরিত্র বাবার ভূমিকা, হরপদর মতো খোলা মনের গুরু পেয়েও আদিত্যের গোঁড়া মনোভাবের কারণ বা তাঁর একমাত্রিক চরিত্রের উৎস, ব্লক করা সত্ত্বেও ছ’বছর ধরে কী করে কাউকে ফোন করে যাওয়া যেতে পারে এবং সব শেষে মুখ্য চরিত্রদের মধ্যে প্রেমের জটিলতা। একটি ছবিতে প্রেমে জটিলতা আসে গল্পের খাতিরেই। নায়ক-নায়িকা প্রেমে পড়ার পর প্রেমে জটিলতা সৃষ্টিই হয় গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার পর সেই জটপাকানো সুতোগুলো খুলে যায় ছবির ক্লাইম্যাক্সে। কিন্তু এখানে জটিলতাটা অনেকটাই জোর করে টেনে বড় করা মনে হতে পারে।
রকস্টার হিসাবে অনির্বাণকে এই ছবির আগে কেউ ভেবেছিলেন বলে মনে হয় না। একটি সংলাপে তাঁকে ‘মিউজিকের দেবদাস’-এর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চরিত্রটা অনেকটা তেমনই। গান-কবিতার মাধ্যমেই তার বিচ্ছেদবেদনার প্রকাশ এবং তাতেই অভীকের যাপন। অনির্বাণ শক্তিশালী অভিনেতা। যে কোনও চরিত্রের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে নিতে পারেন। তাই দেখতে মন্দ লাগবে না। কিন্তু ছবিটা দেখতে দেখতে অজান্তেই ‘আশিকি টু’-এর আদিত্য রায় কপূরের মুখটা বারবার ভেসে উঠবে। এবং সেখানেই সমস্যা তৈরি হবে।
অর্জুনের মতো অভিনেতাকে চিত্রনাট্য এখানে তেমন সুযোগ দেয়নি। মনে পড়ে যেতে পারে, ‘গানের ওপারে’-র কথা। সেখানে তাঁর চরিত্রটি সঙ্গীত জগতের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কথা বলত। এখানে উল্টো। অথচ এক যুগ আগেও অর্জুন সেই চরিত্রে যতটা সাবলীল ছিলেন, এখনও বিপরীত মেরুর চরিত্রেও ততটাই বিশ্বাসযোগ্য।
অন্বেষা প্রেমে বিভ্রান্ত। সে কী চায়, তার নিজের কাছেও স্পষ্ট নয়। এমন চরিত্ররা বাস্তবে বিরল নয়। তবে এখানে ইশার অভিনয়ে নতুন কিছু পাওয়া যায় না। সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ়ে এর চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় তাঁকে দেখে ফেলেছেন দর্শক। তাই অন্বেষাকে সে ভাবে মনে না-ও ধরতে পারে সকলের। তবে ইশা এবং অনির্বাণের পর্দার রসায়ন মন্দ নয়। তাঁদের ফের একসঙ্গে দেখার ইচ্ছেটা ছবির শেষে তৈরি হবেই। পাশাপাশি অভিকের বন্ধুর চরিত্রে সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় বেশ ভাল লেগেছে।
জটিল সংজ্ঞাহীন প্রেমের গল্প এক সময় দর্শক বেশ রোম্যান্টিসাইজ় করতেন। মুশকিল হচ্ছে, এখন মূলধারার ডিসকোর্সে একটি শব্দের বেশ প্রচলন হয়ে গিয়েছে— ‘টক্সিক’। তাই আগে যেগুলিকে আমরা ‘আহা, কী প্রেম’ বলে আখ্যা দিতাম, এখন অনেকে সেগুলিকেই ‘বাবা, কী টক্সিক’ বলে নাকচ করে দেবেন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে, সেগুলির অস্তিত্ব নেই। আমাদের আশপাশে এমন বহু সম্পর্ক আমরা হয়তো রোজই দেখছি। তবে পর্দায় ফের সেগুলি দেখে দর্শক কতটা উপভোগ করবেন, তা একটু বোঝা মুশকিল। শেষে মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, এই ছবিটি একটি মিউজিক্যালও বটে। এক ঝাঁক গানের মাঝে ‘নীরবতায় ছিল প্রশ্ন আমার’ গানটি ছবি থেকে সেরা পাওনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy