তৃণা ও কৌশিক
ছোট পর্দা জুটি তৈরি করে। দর্শকের মনে একবার জায়গা করতে পারলে, সেই জুটি সিনেমার চেয়ে কম হিট নয়। ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের সৌজন্য এবং গুনগুন এমন এক জুটি, যাদের হাসি-কান্না, খুনসুটির সঙ্গে দর্শক একাত্ম হতে পেরেছেন। সৌজন্যর ভূমিকায় কৌশিক রায় এবং গুনগুনের চরিত্রে তৃণা সাহা। বাস্তব জীবনে তৃণা ইনস্টাগ্রাম ‘কুইন’ এবং কৌশিক সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শত হস্ত দূরে। এই আপাত বৈপরীত্য কি তাঁদের জুটির বৈশিষ্ট্য? নায়ক-নায়িকার বিনম্র জবাব, ‘‘দর্শকের কেন এত পছন্দ, তা জানি না। তবে দর্শকের ভালবাসা যে পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞ। সেই জায়গা ধরে রাখা বড় দায়িত্ব।’’
কৌশিককে ‘সুপারস্টার’ বলেন তৃণা। বছরকয়েক আগে আনন্দ প্লাসের সাক্ষাৎকারে কৌশিক নিজেকে ‘স্বল্পভাষী’ বলেছিলেন। তখন তিনি ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকটি করতেন। কিন্তু তৃণার কাছে তাঁর ‘কৌশিকদা’র অন্য বর্ণনা পাওয়া গেল। ‘‘আমরা সেটে যথেষ্ট হাসি-ঠাট্টা করে কাজ করি। কৌশিকদা আমার সিনিয়র। কিন্তু কখনও সেটা বুঝতে দেয় না।’’ পাশ থেকে কৌশিকের টিপ্পনী, ‘‘আমরা পরস্পরকে ‘ভেটেরান’ শিল্পী বলি। আমাদের সেটে কেউ জুনিয়র নয়।’’
শুটিংয়ের জট কাটিয়ে ফ্লোরে ফিরেছে সৌজন্য-গুনগুন। তাদের সঙ্গে পরিবারের বাকিরাও। তবে শুট ফ্রম হোমে তৃণা কিছু বাড়তি সুবিধে পেয়েছিলেন, যা কৌশিকের ভাগ্যে জোটেনি। বাড়ি থেকে শুটের সময়ে রসায়ন তৈরি করা কতটা কঠিন ছিল? কৌশিকের কথায়, ‘‘বাড়ি থেকে শুট করতে সমস্যা হয়েছে। তবে একটা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে যে যে অসুবিধে হত, তার চেয়ে কম হয়েছে। তাই ভাল-মন্দ মিশিয়ে আমরা করে ফেলেছি।’’ এই সুযোগে তৃণা তাঁর অর্জিত প্রতিভার কথা শোনালেন, ‘‘এত দিনে কৌশিকদা বুঝতে পেরেছে, তৃণা যে ইনস্টাগ্রামের ‘রিল ইট’ ভিডিয়োগুলো করত, সেগুলো এখন কেমন কাজে দিচ্ছে!’’ কৌশিকও এ বিষয়ে নিজের অক্ষমতা স্বীকার করলেন। তৃণা বললেন, ‘‘আমরা সকলে মিলে সেটে কৌশিকদার রিল-ইট করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি।’’
পর্দায় যাঁরা দর্শকের পছন্দের জুটি, তাঁদের অনস্ক্রিন পছন্দের জুটি কারা? কৌশিক একটু সময় নিলেন। সেই ফাঁকে তৃণার ঠোঁটের গোড়ায় উত্তর, ‘‘অলটাইম শাহরুখ-কাজল।’’ কৌশিক অবশ্য পরে জানালেন, তাঁর কাজল-অজয় দেবগণকে পছন্দ। অনস্ক্রিন এবং অফস্ক্রিন তাঁদের মধ্যে একটা ‘ব্যাপার’ রয়েছে।
তৃণা-কৌশিকের জুটি যেমন হিট, তেমনই প্রতিযোগিতায় রয়েছে আরও কিছু ওজনদার জুটি। তাঁরা কৃষ্ণকলি-নিখিলই হোক বা সিড-মিঠাই বা মোহর-শঙ্খ... তাঁদের মধ্যে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী কারা? দুই শিল্পী যে ভেবেচিন্তে রাজনীতির ময়দানে নাম লিখিয়েছেন, তার আভাস এই জবাবে স্পষ্ট। কিছুতেই তাঁরা অন্য কোনও জুটির নাম নিলেন না। কৌশিকের জবাব, ‘‘আমাদের ধারাবাহিকেই তো কত জুটি। তার বাইরে আর ভাববই বা কেন?’’
অতিমারি বিধ্বস্ত সময়ে তৃণা বিয়ে করেছেন অভিনেতা নীল ভট্টাচার্যকে। পর্দার বাপের বাড়ি-শ্বশুর বাড়ির বিভাজন কি বাস্তবে বুঝেছেন? ‘‘একেবারে নয়। বাবার বাড়িতে যত ভাল ছিলাম, এখানে তার চেয়েও বেশি। পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না।’’ কৌশিকের টিপ্পনী, ‘‘বাড়িতে থাকার কারণ (নীল) এখন বাড়িতেই রয়েছে।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ্যে এনেছেন কৌশিক এবং তৃণা। বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন কৌশিক এবং তৃণমূলের হয়ে গত ভোটে প্রচার করেছিলেন তৃণা। টলিউডের শিল্পীদের রাজনৈতিক অবস্থান এখন স্পষ্ট করা কি খুব জরুরি?
তৃণার জবাব, ‘‘ভোটে দাঁড়ানো আমার লক্ষ্য নয়। আমার আর নীলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে যোগাযোগের প্রয়োজন হয়, রাজনীতি সেই পরিসরকে বাড়িয়ে দেয়।’’ কৌশিক বললেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা রয়েছে রাজনৈতিক মত পোষণ করার। শিল্পীদেরও রয়েছে। আমার মতে, তা এখন থেকেই শুরু করা উচিত। অভিনেতারা রাজনীতিতে সৌজন্য আনতে পারে, যার অভাব বড় বেশি চোখে পড়ে।’’ তৃণার কথার রেশ ধরে পাল্টা প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, জনহিতকর কাজের জন্য কি রাজনীতিতে আসা দরকার? কৌশিকের জবাব, ‘‘অনেকের প্রয়োজন পড়ে, অনেকের নয়।’’ তৃণার উত্তর, ‘‘আগে যদি পাঁচটা লোককে সাহায্য করতে পারি, এখন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় পঞ্চাশ জনকে করতে পারব। তাতে তো ক্ষতি নেই।’’
রাজনীতির রং নয়, সৌজন্য-গুনগুনের প্রেম এবং অভিমানের রংকেই সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে চান কৌশিক ও তৃণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy