Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
গ্ল্যামের গোলকধাঁধা
Fabulous Lives of Bollywood Wives

কর্ণ জোহরের রিয়্যালিটি সিরিজ় কতটা সাড়া জাগাল?

বাস্তবে এই গার্ল গ্যাংয়ের মধ্যমণি গৌরী খান। এই শো তাঁকে নিয়ে না হলেও অন্তিম পর্বে তাঁর এবং শাহরুখ খানের বর্ণময় উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, ‘বলিউড ওয়াইভস’ তকমা শুধু অর্জন করলেই হয় না। সেই ভার সফল ভাবে বহন করাতেই আসল কৃতিত্ব!

ভাবনা, মাহীপ, গৌরী, সীমা, নীলম।

ভাবনা, মাহীপ, গৌরী, সীমা, নীলম।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

নেটফ্লিক্সের রিয়্যালিটি সিরিজ় ‘ফ্যাবিউলাস লাইভস অব বলিউড ওয়াইভস’-এর সপ্তম পর্বে শোয়ের চার মুখ্য শিল্পীর কাছে কর্ণ জোহরের প্রশ্ন, ‘‘পঞ্চাশের কাছেপিঠে বয়সের চার মহিলাকে দর্শক কেন দেখবেন? পেশাগত পরিচয় থাকলেও তাঁরা আদৌ কতটা কাজ করেন?’’ কয়েকটি পর্ব আগে এই চার মহিলা আবার দর্শকের একাংশের (যাঁরা হয়তো ‘স্বজনপোষণ’ বিতর্কে মুখর) উদ্দেশে বলেন, তাঁদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। স্ট্রাগল তাঁদেরও কম নয়! কিন্তু প্রযোজক কর্ণ জোহরের সিরিজ় সেই স্ট্রাগলের নয়। বরং পেশাগত পরিচয়কে ছাপিয়ে যে দ্যুতির প্রভায় তাঁরা আলোকিত, সেই ‘বলিউড ওয়াইভস’ তকমার সেলিব্রেশন।

মাহীপ কপূর (সঞ্জয় কপূরের স্ত্রী), ভাবনা পাণ্ডে (চাঙ্কি পাণ্ডের স্ত্রী), সীমা খান (সোহেল খানের স্ত্রী) এবং নীলম কোঠারি সোনি (সমীর সোনির স্ত্রী), এই শোয়ের চার গ্ল্যামারাস ডিভা। নীলম ছাড়া বাকি তিন জনের মূল পরিচিতি তাঁদের স্বামীর সুবাদে। এই তিনজন স্বামীর পারিবারিক কৌলীন্য থাকলেও ব্যক্তিগত স্তরে সে ভাবে সফল নন তাঁরা। তাই এমন স্বামীর স্ত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা, এক সফল তারকার স্ত্রী হওয়ার চেয়ে অনেকাংশেই আলাদা। হয়তো বেশ কঠিন, যা মধ্যবিত্ত মানসিকতায় বোঝা যায় না। কিন্তু তার পরেও অর্থ-প্রভাব-প্রতিপত্তির নিরিখে এই স্বামীরা হারিয়ে যাননি। যার সুফল অবশ্যই পেয়েছে তাঁদের পরিবার। সেই ‘সুফল’কে কম গুরুত্ব দিলেই, এই ওয়াইফদের স্ট্রাগল বড় হয়ে যায় না। তাই শোয়ের খাতিরে এই আপাত দ্বিচারিতার দরকার ছিল না। কর্ণ যে ভাবে গ্ল্যাম ও গ্লিটজ় দেখাতে পছন্দ করেন, তা প্রশ্ন না তুলেই অনায়াসে দেখানো যায়!

শোয়ের মূল প্রতিপাদ্য, গার্ল গ্যাংয়ের অটুট বন্ধুত্ব, যার বয়স ২৫ বছরের বেশি। সময়ের চাকায় কারও সঙ্গে হৃদ্যতা বেড়েছে, কারও সঙ্গে কমেছে। তবে চার জনই অভিন্নহৃদয়। আশির দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নীলম ছবিতে কামব্যাকের কথা ভাবছেন। কিন্তু সব ধরনের কনটেন্টে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। দুই ছেলের পিছনে ছুটতে ছুটতে ফ্যাশন ডিজ়াইনিংয়ের কেরিয়ারে সময় দিতে পারেন না সীমা। তবে বড় ছেলের দায়িত্ব খানিক কমে যাওয়ায় নতুন ইনিংসের কথা ভাবছেন তিনি। জুয়েলারি ডিজ়াইনার মাহীপ এই গ্যাংয়ের ‘কর্ত্রী’। নিজের কথামতো বাকিদের চালনা করতে তিনি জানেন। আর সবচেয়ে ধীরস্থির স্বভাবের ভাবনা, যাঁর জীবনে আধ্যাত্মিকতা এবং কুসংস্কারের অদ্ভুত সহাবস্থান। অর্থ-গ্ল্যামার-পার্টির জৌলুস ছাড়া এঁরাও পাঁচ জন সাধারণ স্ত্রীর মতোই! তবে তাঁদের জীবন ‘ফ্যাবিউলাস’ দেখাতে হলে গ্ল্যাম ফ্যাক্টর শিশিভর্তি করে দেখাতে হয়।

কিছুটা বাস্তব ও কিছুটা চিত্রনাট্য-নির্ভর এই শোয়ে এমন কিছু দেখানো হয়নি যা আগে জানা বা শোনা নয়। ক্ষেত্রবিশেষে চার শিল্পীর কথাবার্তাও মেকি লাগে। ‘ক্যাটফাইট’ বা যে সমস্যাগুলিকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেগুলি আদতে কি ততটাই বড়ই? স্বজনপোষণ কাঁটায় বিদ্ধ কর্ণ এই শোয়ে অবশ্যই মুদ্রার অন্য পিঠটি তুলে ধরতে চেয়েছেন। শোয়ে সঞ্জয় কপূর বলেন, ‘‘নেপোটিজ়ম কার্ড চললে ভাল কাজের জন্য আমাকে এত দিন অপেক্ষা করতে হয় না।’’ মেয়ের পাওয়া ট্রোফি হাতে চাঙ্কি পাণ্ডের আক্ষেপ, ‘‘তিরিশ বছরের কেরিয়ারে এই দিনটার জন্য কত অপেক্ষা করেছি!’’ তবে এর পরেই তাঁদের ‘ওয়াইভসদের’ দোহার বিলাসবহুল দিনযাপন দেখলে, এই না-পাওয়ার ভার লঘু হয়ে যায়! জায়গাবিশেষে হাস্যরস স্থূল, খানিক বুদ্ধিবর্জিত।

বাস্তবে এই গার্ল গ্যাংয়ের মধ্যমণি গৌরী খান। এই শো তাঁকে নিয়ে না হলেও অন্তিম পর্বে তাঁর এবং শাহরুখ খানের বর্ণময় উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, ‘বলিউড ওয়াইভস’ তকমা শুধু অর্জন করলেই হয় না। সেই ভার সফল ভাবে বহন করাতেই আসল কৃতিত্ব!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE