বলিউডের তারকা থেকে বিদেশি ভক্ত— মহাকুম্ভ উপলক্ষে প্রয়াগরাজে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করছেন কোটি কোটি মানুষ। বাদ গেলেন না তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ২ ফেব্রুয়ারি, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বিশেষ স্নানে যোগ দিলেন তিনি। পরনে গেরুয়া। ঝটিকা সফরে এলাহাবাদ ও বেনারস ঘুরে তিনি ফিরে যাবেন দিল্লি। সেখানে চলছে সংসদের অধিবেশন। যোগ দেবেন তর্ক-বিতর্কে। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে রচনা জানালেন কুম্ভস্নানের বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা।
আরও পড়ুন:
প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তিতে। শেষ হবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি, শিবরাত্রিতে। সাত সপ্তাহ ধরে চলা এই মহামেলা নিয়ে এ বার একটু বেশিই উৎসাহী ভারতবাসী। একের পর এক তারকা যোগ দিয়েছেন কুম্ভমেলায়। ঘটেছে অঘটনও।
প্রতি ছ’বছর অন্তর কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। ১২ বছর অন্তর হয় পূর্ণকুম্ভ। এ বার নাকি ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ যোগ তৈরি হয়েছে। নক্ষত্রের অবস্থান মিলিয়ে এই বছর তাই কুম্ভমেলার বিশেষ গুরুত্ব। হিসাব বলছে, বৃহস্পতি গ্রহ এক বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় পৃথিবীর হিসাবে ১৪৪ বছর। সেই সময় এলে, তবেই ঘটে মহাকুম্ভ।
এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই ব্যাপক প্রচার চলছে। সেই কারণে এ বারের মহাকুম্ভে দেশ বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসছেন সঙ্গমে স্নান করতে। দিন কয়েক আগে, মৌনী অমাবস্যার বিশেষ তিথিতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের, অগণিত মানুষের খোঁজ নেই। সরকারি হিসাব বলছে, মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৩০ জন মানুষের। কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। অভিযোগ, মৃতের সংখ্যা লুকোচ্ছে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। মঙ্গলবার এ নিয়ে উত্তাল সংসদ। আর ঠিক তখনই মহাকুম্ভ নিয়ে আপ্লুত রচনা আনন্দবাজার অনলাইনকে শোনালেন তাঁর মহাকুম্ভের অভিজ্ঞতা।
কুম্ভে বিশেষ পুণ্যতিথির স্নানকে ‘শাহিস্নান’ বলে। এ বারের মহাকুম্ভে অন্তত ছ’টি শাহিস্নানের দিন থাকবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌনী অমাবস্যার শাহিস্নান। বসন্ত পঞ্চমীর দিনটিও ছিল শাহিস্নানের দিন। রচনা জানান, সেই কারণেই পরিকল্পনা করেছিলেন ২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগে যাবেন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। দিল্লিতে চলছে সংসদ অধিবেশন। সেখান থেকেই তিনি সোজা পৌঁছে যান প্রয়াগরাজে। ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিতে গিয়ে খানিক আবেগতাড়িত সাংসদ।
যে সময় তাঁর দল সংসদে সুর চড়িয়েছে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পদপিষ্টের ঘটনায় কটাক্ষ করেছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারকে, সে সময় রচনার গলায় শোনা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের প্রশংসা। বেজায় খুশি রচনা, উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য। রচনার কথায়, ‘‘এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ওখানকার ব্যবস্থাপনা তুলনাহীন। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। সেটা ঘটেছে। কিন্তু কুর্নিশ জানাব আয়োজকদের। কোটি কোটি মানুষের শৌচাগার থেকে শুরু থাকার ব্যবস্থা, জলে নেমে যাতে কেউ ডুবে না যান, সে জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা— এ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। একটা দুর্ঘটনা ঘটার পর উত্তরপ্রদেশ সরকার কিন্তু আরও বেশি তৎপর ও সতর্ক হয়ে গিয়েছে।’’
রচনার কুম্ভস্নানের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। পরনে গেরুয়া পোশাক, চোখ ছলছল। রচনার কথায়, ‘‘ত্রিবেণী সঙ্গমে পিতৃপুরুষের জন্য তর্পণ করতে পেরেছি, এর থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে! স্নানের সময় প্রার্থনা করতে গিয়ে বাবার কথা ভেবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। ১৪৪ বছর পর এই মহাকুম্ভ। সেখানে বাবার জন্য প্রার্থনা করতে পারা, এটা চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।’’
শুধুই অভিনেত্রী নন। সাংসদ রচনা কি ‘ভিভিআইপি’ বলে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন? এ প্রশ্ন উঠতেই বলেন, ‘‘কোনও বাড়তি সুবিধে নেই ‘ভিআইপি’দের। কেউ বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকে যাবেন, সে রকম কোনও ব্যবস্থাই নেই। একেবারে বন্ধ এ সব। আমাকেও কিন্তু হেঁটেই যেতে হয়েছে। তবে আমি যে সুবিধাটি পেয়েছি, তাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে হেঁটে না গিয়ে আমি জলপথে গিয়েছি। আসলে অত কিলোমিটার হাঁটা সম্ভব নয় তাই জলপথে গিয়েছি। যাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন তাঁদের কিন্তু সুরক্ষার কোনও ঘাটতি নেই। কোনও গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যাবে তা সম্ভব নয়। আমি বলব, উত্তরপ্রদেশ সরকার সফল ভাবে এই বিরাট কর্মকাণ্ডটা করতে পারছে।’’
তবে রচনা এ-ও স্বীকার করেছেন একটা বাড়তি বন্দোবস্ত করা হয়েছে বিশেষ অতিথিদের জন্য। তবে তার জন্য সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা না হয় সেটার দিকে নজর রেখেছে সরকার, মত রচনার।
মহাকুম্ভের অভিজ্ঞতা এক কথায় ভাল, তবু আক্ষেপ রয়েছে রচনার। মেলাপ্রাঙ্গণ সে ভাবে ঘুরে দেখতে পারেননি তিনি। সাধুদের আখড়াগুলি ঘুরতে পারেনি। অভিনেত্রীর দাবি, তিনি জলপথে গিয়ে শুধু স্নান সেরেই ফিরে এসেছেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমার পক্ষে আসলে ১২ কিলোমিটার হাঁটা সম্ভব ছিল না। আমি সাংসদ বলে শাহিস্নানের দিনে বিশেষ বন্দোবস্ত করা হয়নি প্রশাসনের তরফে। এটাই ভাল লাগার জায়গা। আসলেই কুম্ভমেলা সকলের জন্য।’’
সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মহাকুম্ভের বিভিন্ন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে অব্যবস্থার ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যত্রতত্র পড়ে মলমূত্র, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই সাধারণ মানুষের! রচনা অবশ্য জানিয়েছেন, এমন কোনও দৃশ্য তাঁর চোখে পড়েনি। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ যাঁরা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারছেন না, তাঁদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, এই শীতে কাউকে খোলা আকাশের নীচে থাকতে হয়নি। অভিনেত্রী সংযোজন, ‘‘এটা একটা এমন অভিজ্ঞতা যা আমার সঙ্গে রয়ে যাবে, আমার সঙ্গেই চলে যাবে।’’