মানসী সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি সদা হাস্যময়। অভিনেত্রী হিসেবে বছরের পর বছর ধরে দর্শকের মন জয় করে চলেছেন। কিন্তু পরিচালকের আসনে বসে দুয়ারে বিপত্তি অভিনেত্রী মানসী সিংহের। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন মানসী পরিচালিত প্রথম ছবির সহ-প্রযোজক। ঠিক কী ঘটেছে? অনুসন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন।
কয়েক বছর আগে জানা গিয়েছিল মানসী একটি ছবি পরিচালনা করতে চলেছেন। ছবির নাম ‘এটা আমাদের গল্প’। ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়। ‘সংস্কারি হাউজ়’-এর প্রযোজনায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছবির সিংহভাগ শুটিং শেষ হয়। সম্প্রতি, জানা গিয়েছে ছবির মুক্তি আসন্ন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সমাজমাধ্যমে ছবির প্রথম পোস্টার প্রকাশ করেন মানসী। আর তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন প্রযোজক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো সমাজমাধ্যম এবং সংবাদপত্র থেকে জানতে পারলাম ছবিটি মুক্তি পাবে। এ দিকে এই ছবির জন্য মানসী আমার থেকে ২৬ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা আমি ফেরত পাইনি।’’ একই সঙ্গে প্রযোজকের অভিযোগ, শুটিং চলাকালীন মানসী যে হিসেব দেখিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যেই বিস্তর ফাঁকফোকর ছিল। ছবির অন্য প্রযোজক হিসেবে যাঁর নাম উঠে আসছে সেই শর্মিষ্ঠা ঘোষ (প্রযোজনা সংস্থার নাম ‘ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ড’) নাকি মানসীর পূর্বপরিচিত। দীপঙ্কর বললেন, ‘‘ছবিতে বাকি টাকা শর্মিষ্ঠার বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু একটা সময়ে দেখলাম শর্মিষ্ঠাও ওঁর অফিস বদলে ফেললেন। আমি পুরো বিষয়টায় অন্ধকারেই ছিলাম।’’
ছবির যে পোস্টার প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে কিন্তু প্রযোজক হিসেবে দীপঙ্করের নাম নেই। সেখানে প্রযোজক হিসেবে সুভাষ বেরা ও শুভঙ্কর মিত্রের (ধাগা প্রডাকশন্স) নাম রয়েছে। দীপঙ্কর বললেন, ‘‘আমি এদের চিনিই না। তার থেকেও বড় কথা সম্প্রতি আমি দু’জনের থেকে জানলাম যে তাঁরাও নাকি মানসীকে ১২ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন এবং টাকা ফেরত পাননি।’’ প্রযোজকের দাবি, অতিমারির পর মানসীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। জানতে চান ছবির ভবিষ্যৎ? কিন্তু মানসী তাঁর ফোনের কোনও জবাব দেননি। ২০২২ সালে আর কোনও উপায় না দেখে মানসীকে আইনি নোটিস পাঠান প্রযোজক। দীপঙ্করের কথায়, ‘‘নোটিস পাওয়ার পর উনি সমঝোতাপত্রে সই করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল আমার অনুমতি ছাড়া বা আমি টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত এই ছবি উনি রিলিজ় করতে পারবেন না।’’
কিন্তু এর পরেও পরিচালকের তরফে টাকা ফেরতের উদ্যোগ না দেখে ২০২২ সালের ১০ জুলাই প্রযোজকের স্ত্রী কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বারুইপুর থানায় মানসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তলব করলে ছবির জন্য তিনি যে দীপঙ্করের থেকে মোটা টাকা নিয়েছিলেন তা স্বীকারও করেন মানসী।
সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে মানসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মানসীও কিন্তু দীপঙ্করের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন। প্রথমত মানসী বললেন, ‘‘ছবি শুরু হয় শর্মিষ্ঠার প্রযোজনায়। ওঁর বিনিয়োগকারী হিসেবে এসেছিলেন দীপঙ্কর। সহ-প্রযোজক হিসেবে দীপঙ্করের নাম রাখার সিদ্ধান্ত ছিল শর্মিষ্ঠার।’’ মানসী জানালেন, দীপঙ্কর এক সময় ছবির শুটিং পর্যন্ত বন্ধ করিয়ে দেন। তার পর আসে অতিমারি। মানসীর কথায়, ‘‘দীপঙ্কর জানায় টাকা খরচের হিসেব দিতে পারেনি শর্মিষ্ঠা। কিন্তু এখনও দীপঙ্করের মনে হচ্ছে আমি ওকে ঠকাচ্ছি! কেন জানি না। আমি তো পরিচালক মাত্র।’’ একই সঙ্গে দীপঙ্করের বিরুদ্ধে মানসী তাঁর স্বাক্ষর-সহ জাল নথি তৈরির অভিযোগও আনলেন। দীপঙ্কর ও শর্মিষ্ঠার মধ্যে কত টাকার লেনদেন হয়েছে তা সম্পর্কে কোনও তথ্য জানা নেই বলেই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন মানসী। অভিনেত্রী আরও বললেন, ‘‘সব থেকে বড় কথা, ওদের মধ্যে টাকা দেওয়া নিয়ে কাগজেকলমে কোনও চুক্তি হয়নি। সবটাই নাকি মৌখিক!’’
অতিমারির পর শর্মিষ্ঠা যখন ছবির শুটিং আর চালাতে পারেননি, তখন প্রযোজকের থেকে ‘এনওসি’ চেয়ে নেন মানসী। তিনি বললেন, ‘‘দীপঙ্কর ছবি শেষ করব বলে এর পর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। আমিও এনওসির দৌলতে নতুন প্রযোজকের শরণাপন্ন হই।’’ মানসী জানালেন, ওই ‘এনওসি’তে নাকি দীপঙ্করের কোনও নাম ছিল না। কিন্তু তার পরেও ছবির লভ্যাংশ থেকে দীপঙ্করকে বকেয়া টাকা মেটাতে রাজি আছেন মানসী। তিনি বললেন, ‘‘আমি তো চাই ছবিমুক্তির আগে ওরা আমার সঙ্গে বসে সব কিছু সমস্যা মিটিয়ে নিক। আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই।’’ মানসী জানালেন, বিষয়টা তিনি শর্মিষ্ঠাকেও জানিয়েছেন। মানসী বললেন, ‘‘শর্মিষ্ঠা নিজেও অবাক যে, পুরো বিষয়টায় আমাকে হেনস্তা করা হচ্ছে।’’ দীপঙ্করের অভিযোগ, তিনি মানসীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এই প্রসঙ্গে মানসীর উত্তর, ‘‘ওর ফোন তো বন্ধ থাকে। চেনা-পরিচিত অনেকের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু পাইনি। ও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমি সমস্যা মিটিয়ে নিতে রাজি।’’
মানসীর তরফে সদুত্তর না পেলে এখন কী পরিকল্পনা প্রযোজকের? দীপঙ্কর বললেন, ‘‘ছবি রিলিজ় হলে সেখানে আমার প্রাপ্য ক্রেডিট দিতে হবে। না হলে ওঁকে আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। আমি ছবির উপর স্থগিতাদেশ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ অন্য দিকে মানসী বললেন, ‘‘এক টেবিলে বসলে আমি বলে দেব টাকা দীপঙ্করের। এ বার প্রযোজকের সিদ্ধান্ত তিনি কী ভাবে ছবি বিক্রির টাকা ওদের মধ্যে ভাগ করবেন।’’ আগামী ২৬ এপ্রিল ‘এটা আমাদের গল্প’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু ছবির মুক্তিকে ঘিরে যে জল ক্রমশ ঘোলা হতে শুরু করেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy