পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার এবং মঞ্জুষা নিয়োগী।
বুধবার বিদিশা দে মজুমদারের কথা শুনলাম। শুক্রবারই মঞ্জুষা নিয়োগী! চার পাশের পরিবেশ হঠাৎ কী করে এতটা বদলে গেল? খবরে পড়েছি, মঞ্জুষা সংসারী। মাত্র ছ’মাস আগে বিয়ে হয়েছে। কোনও দিনই কাজ বা কম কাজ নিয়ে তাঁকে কোনও চাপ দেননি স্বামী। মডেল-অভিনেত্রীর বাবাও নাকি সরকারি কর্মী। তার পরেও এই পদক্ষেপ? আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।
মঞ্জুষাকে চিনি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি খুবই ছোট। তবু চেনা মুখ তিনি নন। অর্থাৎ, তুলনায় হয়তো কম কাজ করেছেন। এ-ও জেনেছি, পল্লবী, বিদিশার পরপর মৃত্যুর পরে তিনিও নাকি কয়েক দিন ধরেই নিজের মাকে বলছিলেন, তিনিও থাকবেন না। এর আগে মায়ের কাছে নাকি ভাল চরিত্র না পাওয়া, কাজ না পাওয়ার জন্যও হতাশা প্রকাশ করেছেন। জীবিত অবস্থায় খ্যাতি পাননি। মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মঞ্জুষা সেই না পাওয়া পূরণ করতে চাননি তো? নইলে কেন মাকে বলবেন, পল্লবীর মতো তোমার বাড়িতেও সাংবাদিকেরা আসবেন? মঞ্জুষা কি এক বারও ভেবেছিলেন, মৃত্যুর পরে খ্যাতি পেলেও তিনি নিজে আর তা দেখতে পাবেন না!
এই জায়গা থেকেই মনে হচ্ছে, ইদানীং বোধহয় মানুষ ভাবতে শুরু করেছে, লড়াই করে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক সহজ, অনেক শ্রেয়। আমারও কিন্তু একটা সময়ে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগত। মনে হত, এত খারাপের মধ্যে বাঁচার চেয়ে মরাই ভাল। সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেই নিজেকে টেনে তুলেছি। কেবল মনে হত, আগামী কালটা দেখব না? নিজেকে বুঝিয়েছি, ভবিষ্যৎ আমার জন্য কত ভাল বা কত খারাপ সঞ্চয় করে রেখেছে, সেটা দেখে যাওয়া উচিত।
পল্লবীর চলে যাওয়া এখনও মেনে নিতে পারিনি। আদৌ কি কোনও দিন মানতে পারব? জানি না। এখনও প্রতিটা রাত আমি জেগে থাকি। পল্লবীর জন্য। কিন্তু কাজ নেই বলে কারও না থাকা কিংবা কাজ কম হচ্ছে বলে আমার মরে যাওয়া ভাল— এই ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা, অভিনেতারা তো জানি ইন্ডাস্ট্রিতে ‘নিশ্চয়তা’ শব্দটারই অস্তিত্ব নেই। এই পেশায় আসা মানেই আজ কাজ আছে, কাল না-ও থাকতে পারে। অথবা, টানা কাজ করতে করতেও হঠাৎ কর্মহীন হয়ে যেতে হতে পারে। অভিনয়ের জগতে কাজের ধারাবাহিকতা নেই। আমরা প্রযোজনা সংস্থা, চ্যানেলের উপর নির্ভরশীল। নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা থাকলে অবশ্য আলাদা কথা।
তাই এক বছর কাজ নেই, দু’বছর কাজ নেই, এমনটা তো হতেই পারে। তিন বা চার বছর পরে কাজ আসবেই। আর যদি কাজ না-ই আসে, তা হলে প্রয়োজনে পেশা পরিবর্তন করাই যায়। তার জন্য সব সময় নিজেকে তৈরি রাখতে হবে। মৃত্যু কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। উল্টে, মৃত্যু আমাকে নিয়ে অনেক অবাঞ্ছিত প্রশ্ন তৈরি করে দেবে। রেখে যাওয়া মানুষগুলো আজীবন সেই প্রশ্নের ঘূর্ণিপাকে ঘুরে মরবেন। আমরা কেউই কিন্তু আমাদের পরিবার, পরিজনের সঙ্গে এটা হতে দিতে পারি না। এবং আমি চলে যাওয়ার পরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কিচ্ছু জানতেও পারব না। তা হলে, মৃত্যু আমায় সন্তুষ্ট করল কই?
প্রত্যেক দিন এ রকম মৃত্যুর খবর পেতে পেতে সত্যিই ক্লান্ত। তবু বলছি, অবসাদে মৃত্যুচিন্তা এলে কাছের মানুষগুলোর মুখ মনে করুন। আপনি কেন চলে গেলেন? আপনার সঙ্গে সেই উত্তর মুছে গিয়েছে। তাঁরা হাজার হাতড়ালেও জানতে পারবেন না। আমার আন্তরিক অনুরোধ, তাঁদের বিপদের কারণ কখনও হবেন না। যাঁরা আছেন, লড়াই করছেন, তাঁদের কাছে আজ আমার জীবন তুলে ধরি। একটা সময় পরপর কাজ ছিল। নানা কারণে আমার জীবনও খুব মসৃণ নয়। অনেক অবাঞ্ছিত, অকারণ হেনস্থার শিকার হয়েছি। তার পরেও কাজ করে যাচ্ছিলাম। গত দু’বছর ধরে আমারও কিন্তু কোনও কাজ নেই। তার পরেও আমি আগামীর প্রতীক্ষায়। পল্লবী-বিদিশা-মঞ্জুষারা কি তা পারতেন না?
কঠিন সময়ে যখন অবসাদ আসে, মায়ের মুখটা মনে করি। খুব কষ্ট করে আমার মা আমায় বড় করেছেন। যখন যা চেয়েছি, আবদার মিটিয়েছেন। বুঝতে দেননি তার জন্য তাঁকে কত পরিশ্রম, কষ্ট করতে হয়েছে। আমি রক্তমাংসের মানুষ। ভুল করতেই পারি। আবার আমিই সেই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতেও পারি। কিন্তু নিজের ভুল বা অবসাদের বোঝা মায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে চলে যেতে পারি না। আমার মায়ের এত পরিশ্রম, এত কষ্ট যে তা হলে অসম্মানিত হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy