সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনও প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে কাজ করবেন না কখনও? প্রদীপ্ত: (হেসে) কখনও ভেবে দেখিনি। তবে ঋত্বিকের কথা প্রথমেই মাথায় আসে। আপনি অপরাজিতা ঘোষের কথাও বলতে পারেন। অভিনয় দক্ষতার জন্যই নিশ্চয়ই। তবে হ্যাঁ, দু’একটা চিত্রনাট্য আছে, যেমন একটিতে চার বৃদ্ধকে প্রয়োজন এবং আর একটিতে এক জন নারী চরিত্র। সেখানে হয়তো ঋত্বিককে বা রাহুলকে নেওয়া যাবে না। তা ছাড়়া আরও একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়কে নিয়ে। তাঁদের আগেকার রূপে। ওই আশি নব্বইয়ের দশকের সিনেমার একটা ভাব থাকবে ছবিতে।প্রশ্ন: কিন্তু এই প্রজন্মের প্রথম সারির তারকাদের নায়ক বা নায়িকা হিসেবে নিতে চান না?প্রদীপ্ত: না, সে রকম ভাবে তারকাদের নেওয়ার ইচ্ছা জাগেনি আজও। তবে এই প্রজন্মের বহু অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করছি তো।
প্রশ্ন: ঋত্বিকের সঙ্গে তো অনেক বছর ধরে স্ট্রাগল করেছেন, প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন, স্বপ্ন পূরণ হল?
প্রদীপ্ত: চার-পাঁচ বছর আমি আর ঋত্বিক একসঙ্গে থেকেছি। ২০০২ সাল থেকে একসঙ্গে কাজও করেছি। কাজ শুরুর সময়টা একই। তখন থেকেই ছোট্ট বাড়িতে বসে আমি আর ঋত্বিক নানা ধরনের পরিকল্পনা করতাম। ইচ্ছে ছিল, একটা মঞ্চ তৈরি করব, যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। কারও কথা শুনতে হবে না। এত বছর পরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কতটা পারব ভবিষ্যৎই বলবে। ছোট একটা সাধারণ অফিস ঘর তৈরি করেছি আমরা। প্রযোজনা সংস্থার নাম দিয়েছি, ‘১৮০ ডিগ্রি’। সেখান থেকেই ‘উরিবাবা’র সঙ্গে আত্মীয়তা, আর একের পর এক কাজ করে চলেছি। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ যখন বানাচ্ছিলাম নিজেদের মতো করে প্রচার করতে পারছিলাম না, সেই ২০১৩ সালেই ঋত্বিক আর আমি নিজেদের ইন্টারভিউ করে ইউটিউব-এ একটা ভিডিয়ো ক্লিপ ছেড়েছিলাম। তখন থেকেই একসঙ্গে ইউটিউব চ্যানেল করার কথা মাথায় আসে। চ্যানেল বাস্তবায়িত না হলেও ‘১৮০ ডিগ্রি’ বাস্তবায়িত হয়েছে। দেখা যাক।
প্রশ্ন: ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’র প্রচারে নাকি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের অনেক অবদান ছিল?
প্রদীপ্ত: সেটা ঠিক জানি না। প্রযোজক ওঁর নাম যুক্ত করেছিলেন। ঠিক কী অবদান ছিল, তা আমার জানা নেই। প্রযোজকই বলতে পারবেন।
প্রশ্ন: সৃজিতের ছবি দেখেন আপনি? কেমন লাগে?
প্রদীপ্ত: যে যাঁর মতো ছবি বানাচ্ছেন। আমার বলার কিছু নেই।
প্রশ্ন: টলিউডের পরিচালক গোষ্ঠীর থেকে আলাদা ভাবে দেখা হয় আপনাকে? কেউ আপনার কাজের প্রশংসা করেন, কেউ বলেন আপনি অহঙ্কারী।
প্রদীপ্ত: আমি অহঙ্কারী নই এটুকু বলা যেতে পারে। এমনিতেই আমার ছবি অনেকেই দেখেননি বা দেখতে পাননি। ইন্টারনেটের এ রকম রমরমার আগে বেশির ভাগ মানুষই জানতেন না আমার ছবির কথা।
প্রশ্ন: দেখেননি কেন?
প্রদীপ্ত: প্রেক্ষাগৃহে বেশি দিন চলেনি আমার ছবিগুলি। কিন্তু আমার দর্শকবৃন্দের অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা সেই ছবি ইন্টারনেটে দেখেছেন। যখন ইন্টারনেটের রমরমা ছিল না, তখন আরওই কম মানুষ আমার ছবি দেখেছেন। প্রচারও কম হয়েছে। কারও ভাল লেগেছে, কারও খারাপ। কিন্তু তা বলে আমি আলাদা নই। বাকি পরিচালকেরাও ছবি বানান। আমিও বানাই। আমি ঠিক যে মানুষদের চিনি, যে শ্রেণীর সঙ্গে আত্মীয়তা বোধ করি, তাদের নিয়েই ছবি বানাই। আর আমার ছবিতে প্রত্যেক শিল্পীর অবদান সমান! আশা করি তার প্রতিফলন ঘটে ছবিতে।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, আপনি নাকি অনেক বড় প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ছেড়েছেন?
প্রদীপ্ত: আসলে কিছু লোকে বলেন, ‘‘আর কত এক জলের গল্প, গানের গল্প, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের গল্প, ওই সমস্তই শুনিয়ে যাবেন?’’ তাদের এই কথাটি বলতে চাই, দর্শককে আমি নিজের শিকড়ের গল্পই শোনাতে চাই। দু’তিন বছর ধরে একটি তথ্যচিত্র (শিকড়) বানিয়েছি এই নিয়ে। যেখানে আমার নিজের পরিবারকে উপলক্ষ করে বাংলার একটি প্রাচীন গ্রামের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, তেহট্টে। সম্প্রতি সেই ছবিটি দেখানো হয়েছে। আবারও দেখাব। তাই বলব, মানুষ আমাকে নিয়ে যা বলার বলুন, আমি নিজের শিকড়ের গল্পই সেলুলয়েডে নিয়ে আসব বারবার। আর তাই প্রার্থনা করি, সব সময় যেন নিজের ভাবনাচিন্তার স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে পারি। সে যত বড় প্রযোজনা সংস্থা আমার কাছে আসুক না কেন।
প্রশ্ন: তা হলে কি বড় প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আপনার কাজ দেখতেই পাব না?
প্রদীপ্ত: নিশ্চয়ই দেখা যাবে। নিজের মত করে কাজ করতে দিলেই দেখা যাবে। টুকটাক কথাবার্তাও এগোচ্ছে। কিন্তু পাকা কথা না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল। ভালয় ভালয় ‘বিরহী ২’-এর কাজ শেষ করি আগে। শ্যুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে বর্ধমানের এক গ্রামে।
প্রশ্ন: ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র মুক্তি সময়ে কলকাতা শহরে প্রেক্ষাগৃহ পাচ্ছিলেন না। এটা কেন হয়েছিল?
প্রদীপ্ত: ছবি মুক্তির দু’দিন আগে জানলাম, কলকাতায় কোনও প্রেক্ষাগৃহে জায়গা পায়নি ছবি। ত্রিপুরার একটি প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছিলাম আমরা, আর বাংলায় চার পাঁচটা প্রত্যন্ত জায়গায়। এটা কেন হয়েছিল, তার কিছু ধারণা আমার রয়েছে। কিন্তু তার তো প্রমাণ আমি দিতে পারব না। আবার হতেই পারে, আমি ভুল ভেবেছি। তাই কোনও মন্তব্য করব না।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ক্ষোভ রয়েছে আপনার?
প্রদীপ্ত: ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কোনও ক্ষোভ তৈরি হয়নি আমার। কারণ ইন্ডাস্ট্রি তো শুধু নায়ক এবং পরিচালকদের নিয়ে তৈরি হয়নি। কত হাজার কলাকুশলী কাজ করছেন প্রতি মুহূর্তে। একচ্ছত্র অধিকার কারও নেই। চলচ্চিত্র শিল্প তো আসলে অনেকটা গভীর। তাই ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে কোনও রাগ আমার নেই।
প্রশ্ন: ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। বাংলাদেশি অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে নিয়ে দাবি জানিয়েছিলেন দর্শক। অভিনয় ভাল লাগেনি বলেছিলেন অনেকেই।
প্রদীপ্ত: আমাদের ছবিতে কিন্তু রাজলক্ষ্মী বাংলাদেশিই ছিল। আর তাই জন্য ও পার বাংলার অভিনেত্রীই প্রয়োজন ছিল। তার থেকেও বড় কথা, সমাজের মানদণ্ডে যে সৌন্দর্য জায়গা পায়, রাজলক্ষ্মীকে আমি ও ভাবে দেখাতেই চাইনি। ‘বিরহী’তেও আমাদের মূল চরিত্রে শতাক্ষী নন্দী, শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। ডানাকাটা পরী সাধারণত চলচ্চিত্রে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের ছবিতে তাঁরা চরিত্রের মতোই সাধারণ মানুষ। পুরুষদের ক্ষেত্রে সায়ন ঘোষ, অমিত সাহা বা দীপক হালদার, কৌশিক রায়। কেউই আট প্যাকস নন।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে গসিপ নেই কেন?
প্রদীপ্ত: গসিপ হলে খবরে থাকা যায়। আমি খবরে থাকতে চাই না। তবে হ্যাঁ আরও একটা বিষয় আছে, বেশি প্রচার বা গসিপ হলে মাথা ঠান্ডা থাকে না। আর মাথা ঠান্ডা না থাকলে যে ভাবে আমি কাজ করতে চাই, সেটা আর করতে পারব না। তা ছাড়া প্রেমের গসিপ শোনা যাবে না আমাকে নিয়ে। ওটা সম্ভবই নয়। খুব সুন্দর একটি সম্পর্কে আছি। প্রেমিকার সঙ্গে ঘর করি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy