নায়ক-নায়িকা প্রথম দেখা সাহিত্যের জন্য, নায়ক-নায়িকা প্রেমে পড়া সাহিত্যের জন্য। নায়ক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নায়িকার নাম শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। সাহিত্য থেকে সিনেমা কোনও নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু, সাহিত্যিকদের নিয়ে বাংলা ছবি খুব বেশি দেখা যায় না। নতুন করে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বকে বুঝিয়ে দিল ‘আমার বস্’। এ বার বাংলা সাহিত্যের তিন সাহিত্যিক এক ছবিতে। তাঁরা হলেন প্রচেত গুপ্ত, স্মরণজিৎ চক্রবর্তী ও তিলোত্তমা মজুমদার।
বাংলা সিনেমায় একাধিক সাহিত্যিক পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু পর্দায় চরিত্র হয়ে উঠতে খুব কম জনকে দেখা গিয়েছে। ‘ফিরে এসো চাকা’ ছবিতে অভিনয় করেন জয় গোস্বামী। যদিও কবি জয় গোস্বামী মঞ্চে বেশ কিছু নাটক করেছেন। অন্য দিকে, পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘ছেঁড়া তমসুক’ ছবিতে কবি সম্মেলনের দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে। যদিও তাঁদের কোনও অন্য চরিত্র হয়ে উঠতে হয়নি। তার মাঝে অবশ্য বাংলা সাহিত্য নিয়ে ভূরি ভূরি কাজ হলেও, লেখকেরা কিন্তু বইয়ের পাতায় কালো অক্ষরেই রয়ে গিয়েছেন। এই মুহূর্তের বাংলা সাহিত্যের তিন চর্চিত লেখককে এক ফ্রেমে বন্দি করলেন শিবু-নন্দিতা জুটি। সঙ্গে রয়েছেন রাখি গুলজ়ার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। দুই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয়ে কাঁচা তিন লেখকের অভিজ্ঞতা শুনল আনন্দবাজার অনলাইন।
‘আমার বস্’ ছবিতে অভিনয় করতে হবে প্রস্তাবটা শুনেই নাকি নাকচ করে দিয়েছিলেন লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। যদিও শিবপ্রসাদকে না করা প্রায় অসম্ভব, অগত্যা পরিচালকের কথা রাখতে পা রাখলেন সিনেমার সেটে। স্মরণজিতের কথায়, ‘‘আমি শিবুদাকে আসলে না করতে পারি না। যদিও সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছে কখনওই ছিল না। এই ছবিতে ছোট্ট অংশে আমরা তিন জন রয়েছি। আমাদের তিন জনের অল্প কিছুই সংলাপ রয়েছে। কিন্তু যেটা মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা তা হল, রাখি গুলজ়ার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে অত কাছ থেকে অভিনয় করতে দেখাটা।’’
লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদারের অবশ্য সিনেমার শুটিং সেট নিয়ে কৌতূহল ছিল। সেই সাধ পূরণ হল এ বার। তিলোত্তমা বলেন, ‘‘খুবই উত্তেজনার একটা ব্যাপার। এর আগে কখনও শুটিং ফ্লোরে যাইনি। এই প্রথম যাওয়া। তা-ও আবার প্রথম বারই অভিনয় করার সুযোগ পেলাম। আমাদের আলাদা কোনও চরিত্র হতে হয়নি সেটা বেশ মজার।’’ স্মরণজিতের মতো তিলোত্তমারও ভাল লাগার রেশ লেগে রয়েছে রাখি ও সাবিত্রীর মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে এক সেটে থাকতে পারার মুহূর্তে।
বাকি দু’জনের তুলনায় প্রবীণ। একদা সাংবাদিক ও ‘সাগর’-এর স্রষ্টা প্রচেত গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রথমে শুনে শিবুকে বললাম, এ আমার দ্বারা হবে না। তার পর বুঝিয়ে বলল, আমি হয়েই এই ছবিতে অভিনয় করতে হবে। তখন বেশ উৎসাহ পেলাম। বর্তমান সময়ের বাংলা ছবিতে সাহিত্যিকদের নেওয়ার মতো পদক্ষেপে, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের সাহিত্যের প্রতি ভালবাসার জায়গাটাই প্রকাশ পায়। ও রকম বাঘা বাঘা অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয় করতে পেরে খুব আনন্দ হয়েছে।’’